সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত গুদামঘরে লাগানো সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে প্রতিপক্ষের সাইনবোর্ড লাগানোর ঘটনায় থানায় মামলা না নেওয়া ও সাংবাদিক অনুপ বিশ্বাসকে পরিকল্পিতভাবে ইয়াবা দিয়ে আটক করানোর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণ পারুলিয়া গ্রামের ব্যবসায়ি তপন কুমার বিশ্বাস রোববার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয় একই গ্রামের শেখ আবুল হোসেনের কাছে চার শতক জমি বিক্রি করেন তিনি। ওই জমিসহ তার রেকডীয় প্রায় এক শতক জমি জবরদখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেন তিনি। ওই জমির পাশে তার সাত শতক জমির মধ্যে বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গুদাম ঘর রয়েছে। গুদামঘরটি শহরের রাধানগরের মাছ ব্যবসায়ি মাহাবুব বিশ্বাসের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। আবুল হোসেন তার কাছ থেকে কেনা চার শতক জমি বুঝে নেওয়ার পর একই এলাকার কুখ্যাত চোরাকারবারি, বাঘের চামড়া পাচারকারি নব্য আওয়ামী লীগার নূর আমিন গাজীর ইন্ধনে ওই গুদাম ঘর দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে তার ছেলে দৈনিক প্রজন্মের ভাবনার দেবহাটা প্রতিনিধি অনুপ বিশ্বাসকে টেনাফের একটি অপহরণ ও চাঁদাবাজির ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানার জেলে পাঠানোসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আবুল হোসেনের সাতক্ষীরার যুগ্ম জজ -২য় আদালতে দায়েরকৃত একটি দেওয়ানী মামলায় গত বছরের ১৫ নভেম্বরের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর স্থিতাবস্থা জারির নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এরপরও ওই গুদামঘর ও জমি জবরদখলের চেষ্টার বিরুদ্ধে গত ২৩ নভেম্বর অভিযোগ করলে পুলিশ সুপারের নির্দেশ পেয়েও কোন ব্যবস্থা না নেননি দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী কামাল হোসেন। ফলে গত ৩০ নভেম্বর আবুল হোসেন, নুর আমিন গাজী ও মিজানুর রহমান মিনুর নেতৃত্বে ওই গুদাম ঘর দখল করে নেওয়া হয়। বিষয়টি দেবহাটা থানাকে অবহিত করলে পুলিশ সন্ধ্যায় জবরদখলকারিদের সরিয়ে দিয়ে মাহাবুব বিশ্বাসকে না দিয়ে গুদামঘরের চাবি কৌশলে নুর আমিন গাজীর কাছে দিয়ে দেন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। পরে গুদাম ঘরের পাশের একটি ছোট জায়গা দখল করে জনৈক রুবেলের কাছে ভাড়া দেয় আবুল হোসেন। মাহাবুব বিশ্বাস ঘর বুঝিয়ে না দেওয়ায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন। তার নির্দেশে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী কামাল হোসেন কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় পরবর্তীতে পুলিশ সুপারের নির্দেশে দেবহাটা সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার ইয়াছিন আলী উভয়পক্ষকে নিয়ে গত সাত এপ্রিল তার অফিসে শুনানী করলেও কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, সাতক্ষীরা সাব জজ-২ আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিলে পুলিশ উভয়পক্ষকে নোটিশ করে পুলিশ। নোটিশ ভঙ্গ করার ঘটনায় তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরী করলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। গত ৮ এপ্রিল হাইকোর্ট আবুল হোসেনসহ ২০ জন বিবাদীর বিরুদ্ধে গত ৮ এপ্রিল স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা পান। বাধ্য হয়ে প্রতিপক্ষরা যাতে ওই জমিতে না যেতে পারে সেজন্য আমি হাইকোর্টে আবেদন করে গত ০৮.০৪.১৮ তারিখ স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা পান। খবর পেয়ে আবুল হোসেন ও তার লোকজন গত ১৭ এপ্রিল ভাড়াটিয়া মাহাবুব বিশ্বাসের লাগানো গুদামঘরের তালা খুলে ফেলে নতুন তালা লাগিয়ে দেয়। পরবর্তীতে গুদামঘরের একটি জানালা ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় ১৮ ও ২২ এপ্রিল দেবহাটা থানায় দু’টি সাধারণ ডায়েরী করা হয়। হাইকোর্টের আদেশ পেয়ে গত ২৯ এপ্রিল বিরোধী ২০ জনকে নোটিশ করে দুপুরে গুদাম ঘরের দেয়ালে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত সাইন বোর্ড সেঁটে দেন আদালতের জারিকারক। অথচ রাত ৮টার দিকে পুলিশের উপস্থিতিতে আবুল হোসেন, নুর আমিন গাজী, মেহেদী হাসান উত্তম, রুবেল, পলাশ, তাজুল, মাদক ব্যবসায়ি হাফিজুল ইসলামসহ কমপক্ষে ২০/২৫ জন ওই সাইনবোর্ডের একাংশ ছাড়িয়ে ফেলে পাশে ক্রয় সূত্রে এ জমির মালিক আবুল হোসেন বলে লেখা একটি সাইন বোর্ড দেয়ালে সেটে দেন। এ ঘটনায় ৩০ এপ্রিল থানায় অভিযোগ দিলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী কামাল হোসেন তা গ্রহণ না করে হেঁকে তার অফিস থেকে বের করে দেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়. গত ৮ মে বিকেলে নূর আমিন গাজী, তার আত্মীয় মাহাবুবর রহমান খোকন তার(তপন) জায়গা জবরদখলের সুবিধার্থে তার ছেলে সাংবাদিক অনুপ বিশ্বাসকে মাদক ব্যবসায়ি হাফিজুল ইসলাম ও সিরাজুল ইসলামের মাধ্যমে মোটর সাইকেলের সিটের পাশে ইয়াবা রেখে গোয়েন্দা পুলিশ দিয়ে আটক করায়। ষড়যন্ত্রের বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় মাদক ব্যবসায়ি হাফিজুল ইসলাম বিভিন্নভাবে অনুপকে মারপিট করার হুমকি দিচ্ছে। জায়গা জবরদখলকারিদের সঙ্গে দেবহাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী কামাল হোসেনের নিবিড় সখ্যতা থাকায় তিনি প্রতিপক্ষের হাতে বার বার লাঞ্ছিত হচ্ছেন।
মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ ভঙ্গ করে গুদামঘর দখলের চেষ্টাকারি, ছেলে অনুপকে ইয়াবা দিয়ে আটক করানোর নায়কদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। একইসাথে গুদামঘরটি বুঝে পাওয়ার জন্য সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক ও পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি বিশ্বজিৎ সাধু, সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার শীল, জেলা মন্দির সমিতির সহসভাপতি গোষ্ট বিহারী ম-ল, সুরক্ষা নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা (সুনাম) এর সাতক্ষীরা জেলা শাখার আহবায়ক অ্যাড. সোমনাথ ব্যানার্জী, নির্যাতিত অনুপ কুমার বিশ্বাস প্রমুখ।
জানতে চাইলে আবুল হোসেন জানান, তিনি ১২ বছর আগে থেকে গুদাম ঘরটি নুর আমিন গাজীর কাছে ভাড়া দিয়েছেন বলে এক সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন। তবে হাইকোর্টের আদেশ না মানার কথা অস্বীকার করেন তিনি।
নুর আমিন গাজী বলেন, মাছ ব্যবসায়ি মাহাবুব বিশ্বাসের সঙ্গে তিনি মাছ ব্যবসা করার সুবাদে ওই ঘরে অবস্থান করেন। চোরাকারবারি, বাঘের চামড়া পাচারসহ যে সব অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে তা তার সম্মান নষ্ট করার জন্য।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …