নাজমুল আলম মুন্না, সাতক্ষীরা। বিশ্বের সকল মাকে উৎসর্গ করার দিন আজ। বিশ্বব্যাপী আজ পালিত হচ্ছে “বিশ্ব মা দিবস”। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার আমাদের দেশে বেশ কয়েক বছর ধরে বিশ্ব ‘মা’ দিবস পালিত হয়ে আসছে। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠি, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো আলোচনা অনুষ্ঠান, শোভাযাত্রাসহ মা’কে সম্মান জানানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচী গ্রহন করেছে। মা দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো জন্মদাত্রী মা’কে যথাযথ সম্মান দেখানো। যে মা জন্ম দিয়েছেন, লালন-পালন করেছেন তাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার জন্যই মুলত দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে ইতি মধ্যে দেশের গণমাধ্যম গুলোতে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান ও নাটক সম্প্রচারিত হচ্ছে। যানা যায়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে যেমন, ফেব্রুয়ারীর দ্বিতীয় রবিবার নরওয়েতে, মার্চের চতুর্থ রবিবার আয়ারল্যান্ড, নাইজেরিয়া ও যুক্তরাজ্যে এবং বাংলাদেশে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার দিবসটি পালন করা হয়। বিশ্বের অনেক দেশে কেক কেটে মা দিবস উদ্য্পান করা হয়। তবে মা দিবসের প্রবক্তা আনা জার্ভিস দিবসটির বানিজ্যিকীকরনের বিরোধিতা করে বলেছিলেন, মাকে কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর অর্থ হলো তাকে দুই কলম লেখার সময় হয়না। চকলেট উপহার দেওয়ার অর্থ হলো তা নিজেই খেয়ে ফেলা। মা দিবসের ইতিহাসে জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর ও ওহাইওর মাঝামাঝি ওয়েবষ্টার জংশণ এলাকার বাসিন্দা আনা জার্ভিসের ‘মা’ অ্যান মেরী রিভস্ জার্ভিস সারাজীবন ব্যায় করেন অনাথ-পথশিশু ও আতুরের সেবায়। মেরী রিভস্ ১৯০৫ সালে মারা যাওয়ার পর লোকচক্ষুর অগচরে কাজ করা মেরীকে সম্মান দিতে চাইলেন তার মেয়ে আনা জার্ভিস। অ্যান মেরী রিভস্ জার্ভিসের মতো দেশজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সব মা’কে স্বীকৃতি দিতে আনা জার্ভিস প্রচার শুরু করেন। ৭ বছরের চেষ্টায় ‘মা’ দিবস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়।
তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছরের মতো সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে রবিবার সকাল ১০ টায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তারাময়ী মুখার্জীর সভাপতিত্বে অনুষ্টিত হয়েছে। স্বদেশের নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্তের সঞ্চালনায় আলোচসনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাতক্ষীরা নারী নেত্রী বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সদস্য ৩১২, মহিলা আসন-১২- মিসেস্ রিফাত আমীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার মাহমুদুর রহমান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আবদুল হামিদ, চুপড়িয়া মহিলা সংস্থার সভানেত্রী মরিয়াম মান্নান। অনুষ্ঠানে অশ্রুসজল বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সম্পাদক জ্যোৎ¯œা দত্ত, ক্রিসেন্টের নির্বাহী পরিচালক মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকী, বরসা’র সহকারী পরিচালক মোঃ নাজমুল আলম মুন্না, মহিলা অধিদপ্তরের প্রশিক্ষনার্থী ও বরসা’র স্টুডেন্ট ভলেন্টিয়ার নাসিমা আক্তার, আফরোজা সুলতানা ও এসএম শকিকুর রহমান প্রমুখ। বক্তারা বলেন দুনিয়ার সকল ভাষার মধ্যে ‘মা’ ডাকটি হচ্ছে সবচেয় মধুর। একজন মা’ই হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং প্রথম শিক্ষক। মা ছাড়া কোন শিশু লালন, পালন ও বেড়ে ওঠা সম্ভব নয়। সেই মায়ের যেন কোন অসম্মান না হয়। আমরা যেন নিজের মা’কে কোনদিন কষ্ট না দেই। আমরা যেন কেউ কোন মাকে বৃদ্ধাশ্রমে না রেখে নিজেরা বিলাশী জীবন যাপন না করি। মা’র চেয়ে আপন কেহ নাই যে দুনিয়ায় গানটি সকলের মনে পড়ে। প্রধান অতিথি বলেন বর্তমান সরকার নারী বান্ধব সরকার। শেখ হাসিনার সরকার নারীদের উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। নারী শিক্ষার জন্য প্রচুর অর্থ বরাদ্ধ দিয়েছে এবং দিচ্ছে। সেই নারী একজন ‘মা’ সে যাতে কোন ক্ষতির শিকার না হয়। মায়ের অসম্মান হলে কোন রকম সহ্য করা হবেনা। আমরা জানি যে অনেকে নিজের মা’কে পথের ভিকারী করেছে, করেছে ঘরবাড়ী ছাড়াও করেছে এমনকি খেতে পরতে দেয়না এগুলো চরম অন্যায়। আপনি কি কোনদিন ভেবেছেন যার জন্য আপনি বা আপনারা এই পৃথিবীর মুখ দেখেছেন, আপিনি কি যানেন যে আপনার বেড়ে ওঠায় মায়েদের কতটুকু অবদান। এই অবদান পরিশোধ যোগ্য না। তাই আসুন আমরা মা’দের আদর করি যন্ত্র করি, কোন অবস্থায় যেন একজন ‘মা’ আমাদের দ্বারা কষ্ট না পায়। বক্তারা এই পৃথিবীতে যতো মা রয়েছে তাদের সকলকে মা দিবসের শুভেচ্ছা জানান।
নাজমুল আলম মুন্না
১৩/০৫/২০১৮
০১৭১২-৯২৭৫২৩