তরিকুল ইসলাম তারেক, যশোর: যশোরে জেলা তরুণলীগ এবং অটোবাইক কল্যাণ সোসাইটির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মনিরুল ইসলাম ওরফে মনিরুল শেখ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে শহরে ইবিজবাইক চলাচল বন্ধ রয়েছে।
লাশের ময়নাতদন্ত আজ সোমবার সকালে সম্পন্ন হয়েছে। তার কফিন নিয়ে তরুণলীগ শহরে মিছিল করেছে।
শহরে ইজিবাইক চলাচল বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। রিকশা, ভ্যান এবং জ্বালানি তেল চালিত থ্রিহুইলার চালকরা ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছেন যাত্রীদের কাছ থেকে।
রোববার দিবাগত রাতে যশোর শহরের পালবাড়ি ভাস্কর্য মোড়ে সন্ত্রাসীদের বোমা ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নৃশংসভাবে খুন হন তরুণলীগ নেতা মনিরুল।
এদিকে, সকাল থেকে শহরে ইজিবাইক চলাচল বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। অতিরিক্ত রিকশা ও ভ্যান ভাড়া দাবি করায় বিভিন্ন স্থানে যাত্রীদের সঙ্গে যান চালকদের বচসা হতে দেখা যাচ্ছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে যাত্রীদের অস্বাভাবিক ভিড় রয়েছে।
শহরতলীর ঝুমুঝুমপুরের বাসিন্দা দিনমজুর আবুল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, শ্রম দিতে তিনি পুলেরহাটে যাচ্ছেন। শহরে ইজিবাইক চলছে না বিধায় দশ টাকার স্থলে ২০ টাকা ভ্যান ভাড়া দিতে হয়েছে।
নতুনহাট পাবলিক কলেজের শিক্ষিকা দিল আফরোজ জানান, ‘প্রত্যেকদিন কলেজে যাই দশ টাকা দিয়ে ইজিবাইকে। কিন্তু আজকে ৫০ টাকা দেওয়া লাগছে। এটি আমার জন্যে বাড়তি সমস্যা।’
শহরের শংকরপুর এলাকার বাসিন্দা প্রবাল দাস বলেন, ঈদগাহ মোড় থেকে শংকরপুর বাসস্ট্যান্ড যেতে আজ ভাড়া গুণতে হচ্ছে ৫০ টাকা। কিন্তু অন্যদিন দশ টাকা লাগতো।
রিকশাচালক আকবার আলী দাবি করেন, ‘প্রত্যেকদিন ৩০০ টাকা রিকশা ভাড়া দিতে হয় মালিককে। এই গরমে ভাড়া যদি একটু বেশি না নিই তো খাবো কী?’
ভ্যানচালক জাকির হোসেন বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশ শহরে ভ্যান ঢুকতে দেয় না। আজ সুযোগ পাইছি- দু’পয়সা তো ধরে নেবোই।’
যশোর জেলা অটোবাইক চালক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, ‘আমাদের সংগঠনের নেতা মনিরুল খুন হয়েছেন। সেকারণে আমরা সকাল থেকে ইজিবাইক চলাচল বন্ধ রেখেছি।’
যশোর জেলা অটোবাইক চালক সোসাইটির সভাপতি আব্দুর সবুর জানান, ‘গতরাতে আমাদের সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল খুন হন। তিনদিন আগে উপশহরে ইজিবাইক চালক তুরান খুন হলো। পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারলো না। এই দুইজনের খুনিদের আটক এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আমরা শহরে ইজিবাইক চলাচল বন্ধ রেখেছি।’
জেলা তরুণলীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, হত্যাকান্ডে জড়িতদের আটক ও বিচারের দাবিতে মনিরুলের লাশ নিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে।
যশোরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সাখাওয়াৎ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘সকাল থেকে শহরে ইজিবাইক চলাচল করছে না। কেনো চলাচল করছে না- তা বলতে পারবো না। জনসাধারণের কাছ থেকে রিকশা ও ভ্যানচালকরা বেশি ভাড়া আদায় করলেও শহরে কোনো যানজট নেই।’
জানতে চাইলে কোতয়ালী থানার ওসি আজমল হুদা জানিয়েছেন, মনিরুল হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের আটকে পুলিশ তৎপর রয়েছে।#
————০০০০০০০০———-
যশোরে বোমা হামলায় মনিরুল ইসলাম নামে তরুণলীগের এক নেতা নিহত হয়েছেন। রবিবার রাত সাড়ে ১১টার পর শহরের পালবাড়ি ভাস্কর্যের মোড়ে এই ঘটনা ঘটে।
এ সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হন সন্তোষ ঘোষ নামে আরেকজন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
নিহত মনিরুল ইসলাম আওয়ামী লীগ নেতা শাহীন চাকলাদারের অনুসারী ছিলেন বলে দাবি করা হচ্ছে। অভিযোগ করা হচ্ছে, কাজী নাবিল অনুসারী সন্ত্রাসীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
নিহত মনিরুল ইসলাম (৩৮) পুলিশ লাইন টালিখোলা এলাকার ফজলুর রহমানের ছেলে। টালিখোলা এলাকার জমিজমা বিক্রি করে দিয়ে তারা সম্প্রতি পাগলাদহ এলাকায় উঠে গেছেন। আর আহত সন্তোষ ঘোষ (৩৬) পুরাতন কসবা ঘোষপাড়া এলাকার নারায়ণ ঘোষের ছেলে।
হাসপাতালে আসা প্রত্যক্ষদর্শীরা সাংবাদিকদের জানান, রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মনিরুল ও সন্তোষ পালবাড়ি মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় একই এলাকার মোস্ত, রবিউলসহ ৭-৮ সন্ত্রাসী তাদের লক্ষ্য করে পর পর ছয়টি বোমা নিক্ষেপ করে। বোমার আঘাতে মনিরুলের মাথাসহ শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। এর পর সন্ত্রাসীরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়। সন্তোষেরও বোমার আঘাতে গুরুত্বর আহত হন।
সন্ত্রাসীরা চলে গেলে উপস্থিত লোকজন দুইজনকেই জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত ডাক্তার কল্লোলকুমার সাহা জানান, পথেই মৃত্যু হয়েছে মনিরুলের। তার শরীরে বোমার স্পিøন্টার ও ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। আর সন্তোষের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
স্থানীয়রা বলছেন, চাঁদাবাজি ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের বিবদমান দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের কারণে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে। তাদের মতে, সম্প্রতি মনিরুলের ভাই শাহরিয়ার ওই এলাকায় জমি কেনেন। এই বাবদ সন্ত্রাসী মোস্ত তার কাছে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেওয়ায় মাস দেড়েক আগে তারা শাহরিয়ারের ওপরও হামলা করেছিল।
উপশহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য এহসানুর রহমান লিটু জানান, সন্ত্রাসীরা মনিরুল ও সন্তোষকে লক্ষ্য করে বোমা মারে, গুলি ছোড়ে। পরে তাদের কোপানো হয়।
জেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জাহিদ হোসেন মিলন জানান, নিহত মনিরুল জেলা তরুণলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। আর আহত সন্তোষ যুবলীগ কর্মী।
‘হামলাকারী মোস্ত ও তার সহযোগীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ আশ্রিত সন্ত্রাসী। আর হতাহত দুইজনই জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার অনুসারী,’ বলেন জাহিদ হোসেন মিলন।
বোমা হামলায় দুইজনের হতাহতের খবর শুনে হাসপাতালে আসেন কোতয়ালী থানার ইনসপেক্টর (অপারেশন) শামসুদ্দোহা। তিনি জানান, কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, পুলিশ তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে খুনিদের ধরতে পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে।#