নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আটকের ৩৬ ঘণ্টা পর সাতক্ষীরায় ৯ জামায়াত শিবির নেতাকে গ্রেফতার দেখালো পুলিশ। পুলিশের দাবী গোপন বৈঠককালে অভিযান চালিয়ে জামায়াতের নয় নেতা-কর্মীকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় পাঁচটি পেট্রোল বোমা, দেশীয় আস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ মে) সকালে শহরের ইটাগাছা ও পলাশপোল মধু মোল্লার ডাঙ্গি থেকে তাদের আটক করা হয়। পুলিশের ভাষ্য মতে আটক নেতা-কর্মীরা হলেন, সাতক্ষীরা পৌর জামায়াতের সেক্রেটারি ওবায়দুল্লাহ মোল্লা (৫০), তার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা (৩২), শহরের ইটাগাছার মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে মেহেরুল্লাহ (৪৫), পৌর ৭নং ওয়ার্ড জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হাই সিদ্দিকি (৩৮), ১নং ওয়ার্ড জামায়াতের সদস্য এসএম হায়দার আলী (৫৫), কামালনগর ওয়ার্ড শিবিরের সেক্রেটারি আমিনুর রহমান (২২), শিবির কর্মী মোখলেছুর রহমান (৩০), সদর উপজেলার ঘোনা ইউনিয়ন শিবিরের কর্মী রাসেল ইকবাল (২৮) ও সাতক্ষীরা পৌরসভার রইচপুরের শিবির কর্মী মো. আলামিন (২০)।
সাতক্ষীরা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ইন্সপেক্টর জুলফিকার আলী জানান, জামায়াত-শিবিরের গোপন বৈঠককালে পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়েছে। এ সময় পাঁচটি পেট্রোল বোমা ও জিহাদী বইসহ লাঠিসোটা উদ্ধার হয়েছে।
এদিকে সাতক্ষীরা শহর শাখা জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক ওবায়দুল্লাহ ও তার স্ত্রী শহর জামায়াতের মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি রাজিয়া সুলতানাসহ ৭ জন নেতা-কর্মীকে গত রোববার দিবাগত রাতে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করার ঘটনার তীব্র্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃত্তিতে তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার হীন উদ্দেশ্যেই পুলিশ অন্যায়ভাবে সাতক্ষীরা শহর থেকে ৭ জন নেতা-কর্মী গ্রেফতার করেছে। তিনি তাদের গ্রেফতারের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
গতকাল সোমবার দেয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, আসন্ন মাহে রমযান শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পালন করার জন্য যখন দেশের মানুষ প্রস্তুতি নিচ্ছে, ঠিক তখনই সাতক্ষীরা থেকে জামায়াতে ইসলামীর ৭ জন নেতা-কর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা অধ্যুসিত দেশের সরকারের এ ধরনের ন্যক্কারজনক আচরণ কারো কাম্য নয়। সরকারের এহেন অন্যায় আচরণে দেশের ধর্মপ্রাণ জনগণ বিক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। সরকারের এ ধরনের গর্হিত আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদেত সোচ্চার হওয়ার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান।
এর আগেআটকের ৩৬ ঘণ্টা পরও আদালতে না তুলায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে আটক কৃতের পরিবার। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম দৈনিক পত্রদূত সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম জানান, গত রোববার রাতে শহরের নিজস্ব বাড়ি থেকে তাদেরকে আটক করা হয় সাতক্ষীরা শহর জামায়াতের আমীর প্রভাষক ওবায়দুল্লাহ, তার স্ত্রী, ভাইসহ ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। । আটক কৃতরা হলেন, সাতক্ষীরা শহর জামায়াতের আমীর সাতক্ষীরা পিএন স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক ওবায়দুল্লহ তার স্ত্রী শহর মহিলা জামায়াতের সেক্রটারী রাজিয়া সুলতানা,ভাই প্রভাষক মেহেরউল্লাহ, ৭ নং ওয়ার্ড শিবিরের সেক্রটারী আমিনুর রহমান, রইচপুর গ্রামের আল আমিন, শহরের মধুমাল্লার ডাঙ্গি এলাকার মোকলেচুর রহমান, রাশেদুল ইকবল, কালিগঞ্জের মাফিজুর রহমন।
রাতভর শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিজান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়। সূত্র জানায় রোববার রাত ১২টার দিকে সাতক্ষীরা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার ও সদর থানার ওসি মারুফ বিল্লার নের্তৃত্বে একদল পুলিশ শহরের ইটাগাছা এলাকাতে অভিযান চালায়। এসময় জামায়াত নেতা সাতক্ষীরা পিএনস্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক ওবায় দুল্লহর বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় পুলিশ কয়েক বস্তা ইসলামী সাহিত্যি, বাড়িতে ব্যবহৃত ছুরিসহ তার স্ত্রীকে আটক করে নিয়ে যায়। পরে একই এলাকার একটি বাসা থেকে ৭ নং ওয়ার্ড শিবির সেক্রেটারি আমিনুর রহমানকে আটক করে। তার দেয়া তথ্য মতে শহরের মধুমাল্লার ডাঙ্গির অপর একটি বাসা থেকে মোকলেচুর রহমান ও রাশেল ইকবাল নামে সাবেক দুই শিবির নেতাকে আটক করে। সোমবার দুপুর ১২টা দিকে শহর জামায়াত আমীরের ভাই মেহেরউল্লাহকে আটক করে পুলিশ। আটক কৃতদের গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আদালতে না পাঠানোয় পরিবারের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
শহর জামায়াতের আমীর প্রভাষক ওবায়দুল্লাহর মেধাবী ছেল খালিদ তার আব্বুর ফেসবুক আইডিতে একটি পোষ্ট দিয়েছে। পোষ্টে লিখিছেন রোববার রাত ১২টার সময় পুলিশের একটি টিম আমাদের বাড়িতে আসে। প্রথমে আব্বুকে (মো: ওবায়দুল্লাহ) এবং পরবর্তীতে তারা আম্মুকেও গ্রেফতার করে। এছাড়া বাসা থেকে ২/৩ বস্তা বইসহ যাবতীয় কাগজপত্র তারা নিয়ে গেছে। সবাই আমার আব্বু আম্মুর জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ তাদেরকে বাতিলের এই চক্রান্ত থেকে হেফাজত করে খুব দ্রুত আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিন। খালিদ এবছর এসএসসি পরীক্ষায় সাতক্ষীরা পিএন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে।
এদিকে সাতক্ষীরা জেলাব্যাপী পুলিশের সন্ত্রাস, নাশকতা ও মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযানে ৩৭ জনকে আটক করার কথা বলেছে পুলিশ। এ সময় বিভিন্ন অভিযোগে-৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে-সাতক্ষীরা থানা থেকে ৭ জন, কলারোয়া থানা ১০ জন, তালা থানা ৪ জন, কালিগঞ্জ থানা ৫ জন, শ্যামনগর থানা ৫ জন, আশাশুনি থানা ৩ জন, দেবহাটা থানা ১ জন, পাটকেলঘাটা থানা পুলিশ ২ জনকে আটক করেছে।
সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক আজম খান তাদের আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে নাশকতা ও মাদকসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে।
Check Also
আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি
এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …