এ যুদ্ধে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দুই দলই জয়ী হতে চায়

জয়ের বিষয়ে আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক ও বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু—দুজনই আশাবাদী। আবার অভিযোগের তিরও ছুড়ছেন একে অপরের বিরুদ্ধে।

প্রথমে বিএনপি প্রার্থী বললেন, তাঁরা ভোট ডাকাতির আশঙ্কা করছেন। আওয়ামী লীগ ভোটের আগেই ব্যালট নিয়ে নয়-ছয় করতে পারে। এরপর আওয়ামী লীগ প্রার্থী পাল্টা অভিযোগ করলেন, বিএনপি বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে নির্বাচনের ফল উল্টে দিতে পারে।

এরপর বিএনপি প্রার্থী বললেন, ক্ষমতাসীন দল ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের পক্ষে আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপরই আওয়ামী লীগ প্রার্থী বললেন, বিএনপি ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করেই ২০১৩ সালে জিতেছে। এবারেও তারা ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করতে পারে।

ঢাকায় দুই দলের দুই নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে নালিশ করলেন একে অপরের বিরুদ্ধে। বিএনপির রুহুল কবির রিজভী বললেন, খুলনায় অঘোষিত কারফিউ চলছে। সেখানে পুলিশ সরকারের হয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে, যাতে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে না যেতে পারেন। আর আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ হানিফ বললেন, জনগণ বিএনপির ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এ কারণে তাঁরা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছে।

ভোটযুদ্ধের আগে এখন দুই দলের মধ্যে চলছে ‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ’। এত দিন চলছিল প্রচারযুদ্ধ। এ যুদ্ধে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দুই দলই জয়ী হতে চায়। তাঁরা ভোটারদের দেখাতে চায় ‘আমরাই এগিয়ে আছি।’ দেখা যাক, খুলনার ভোটাররা কাকে এগিয়ে নেন। ২০০৮ সালে খুলনাবাসী নগরপ্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগের তালুকদার খালেককে বেছে নিয়েছিলেন। ২০১৩ সালে জয়ী হয়েছিলেন বিএনপির মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। এবারে কাকে বেছে নেবেন খুলনার ভোটাররা? এ নির্বাচনে ভোটের নানা হিসাব-নিকাশ আছে—স্থানীয়-অস্থানীয়। সংখ্যালঘু ও জামায়াত-হেফাজত। প্রবীণ ও তরুণ ভোটার। তবে সেই হিসাব-নিকাশ তখনই কাজ দেবে, যখন ভোটটি সুষ্ঠু হবে।

উল্লেখ্য, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ১৪৮ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৫ জন নারী কাউন্সিলর পদে লড়ছেন। এবারের নির্বাচনে ভোটার ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন। ভোট হবে ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রে। দুটি ওয়ার্ডের দুটি ভোটকেন্দ্রে ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। সেখানে মেয়র প্রার্থীদের নাম ও প্রতীক এবং সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতীকে বোতাম চেপে ইভিএমে ভোট দেবেন ভোটাররা। ইভিএম ভোটের মহড়াও সোমবার হয়ে গেছে।

বাংলাদেশে নির্বাচন মানেই উৎসব। ভোট দেওয়ার জন্য ভোটাররা দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপর পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বাড়ি চলে যান। কিন্তু এই উৎসবের মধ্যে আছে ভয়ও। ভোটার তাঁর পছন্দসই প্রার্থীকে ভোটটি দিতে পারবেন তো? না ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখবেন ভোটটি অন্য কেউ দিয়ে গেছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা হওয়ার পর সেটি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বিগত ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে গেছেন। ভোটকেন্দ্রে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনী সংঘাতে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মধ্যেও একধরনের মিল রয়েছে। আমাদের এখানে গত ইউপি নির্বাচনে দেড় শতাধিক মানুষ মারা যান। ১৪ মে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এ পর্যন্ত ১৬ জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গুলি-বোমা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এক-তৃতীয়াংশ আসনে বিরোধী দলের প্রার্থীরা মনোনয়ন জমাই দিতে পারেননি।

তবে খুলনার মানুষ আশা করেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে। ভোটাররা নিশ্চিন্তে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরে আসতে পারবেন। নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা মনে করেন, নির্বাচনের পরিবেশও এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। গত সপ্তাহে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা ও কমিশনার মাহবুব তালুকদার খুলনা গিয়েছিলেন। তাঁরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে বলেছেন। আওয়ামী লীগ রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং বিএনপি ডিআইজি ও পুলিশ সুপারের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল। কিন্তু কমিশন এমন কোনো তথ্য পায়নি যে তাঁদের সরাতে হবে। যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠান হয়েছে, কমিশনের ভাষায় ‘মনিটরিংয়ের’ জন্য। সবকিছুর পরও যদি ইসি সেখানে একটি ভালো নির্বাচন করতে পারে, তারা বাহবা পাবে। আর যদি সেটি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেটি আগামী জাতীয় নির্বাচনে মারাত্মক প্রভাব পড়বে।

সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, ভোটে যে দল বা প্রার্থীই জিতুক না কেন, নির্বাচনটি যেন পরাজিত না হয়। তাঁরা রংপুর ও কুমিল্লার মতো ভালো নির্বাচন চান। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চান; যাতে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে কোনো ভোটারকে না শুনতে হয়, আপনার ভোটটি তো দেওয়া হয়ে গেছে।

সিইসি ও একজন কমিশনার ভোটের আগে খুলনা ঘুরে এসেছেন। আমরা মনে করি, ভোটের দিনও সিইসি ও একাধিক কমিশনারের সেখানে যাওয়া উচিত। তাঁদের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির মধ্যে অনেক ফারাক।

Check Also

সাতক্ষীরা জেলা আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

শাহ জাহান আলী মিটন, সাতক্ষীরা:সাতক্ষীরা জেলা আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (১০ নভেম্বর) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।