আজ মঙ্গলবার বহুল আলোচিত খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন

ক্রাইমবার্তা রিপোট :   আজ মঙ্গলবার বহুল আলোচিত খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে সর্বত্র আলোচনা চলছে। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, সরকারি দল আওয়ামী লীগ অতীতের ন্যায় এবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে বিরোধী নেতাকর্মীদের আটক, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশী চালাচ্ছে। এতে করে সাধারণ মানুষের মাঝে একধরণের শংকা ও ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, অতীতের নির্বাচনের ন্যায় খুলনা সিটিতে ভোট ডাকাতি করবে ক্ষমতাসীন দল। অবস্থা এমন হলে ভোট বর্জনের আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছে বিএনপি।
সূত্র মতে, বর্তমান সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় নির্বাচনে বেপরোয়া হয়ে উঠে। ২০১৫ সালে প্রথম দফার উপজেলা নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থীরা অনেক এগিয়ে থাকলে পরের দফার ভোটে  সরকারি দল যেভাবে দেশব্যাপী আগ্রাসী ভূমিকা পালন করেছে তা দেশে বিদেশে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। এবার তার চেয়েও ভয়াবহ রূপে আবির্ভূত হচ্ছে বলে অভিযোগে জানা গেছে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ দল গুলো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের আক্রমণ, হুমকির ফলে আসন্ন সিটি নির্বাচনে বিরোধী ভোটাররা প্রাণের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তার সাথে যোগ হয়েছে নির্বাচনী এলাকায় পুলিশের অভিযান। জানা গেছে, আগের ধারাবাহিকতায় এবারো ভোট দখলের মহোৎসবের সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে সরকারি দল। অভিযোগে প্রকাশ, নির্বাচনে কমিশনে লিখিত এবং মৌখিকভাবে নানা অনিয়মের অভিযোগ দেয়া হলেও তারা একারণ-সেকারণ দেখিয়ে এড়িয়ে যায়। তারা অনেকটা ‘কুম্বকর্ণের’ মত ঘুমিয়ে আছে। জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের সরকার প্রীতির কারণেই ক্যাডাররা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের কাছে অভিযোগ করা হলে বলে ‘প্রমাণ’ দিতে হবে। প্রমাণ নিয়ে গেলে বলে ওই সব এলাকায় কিছুই হয়নি। ভিকটিমরা বলছেন, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে অভিযোগকৃত এলাকা পরিদর্শন করা। কিন্তু তারা কোথাও তদন্তে গেছে বলে জানা যায়নি।
সূত্র মতে, চলতি বছরের শেষের দিকেই একাদশ সংসদ নির্বাচন হবার কথা রয়েছে। যেকোন মূল্যে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে বেপরোয়া হয়ে আছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তাদের জনসমর্থন শূন্যের কোঠায় থাকলেও তারা তাদের জনমত আছে প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আগামীকাল খূলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেটিই প্রতিফলিত হবে বলে অনেকেই মনে করছেন।
নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আর মাত্র একদিন বাকী। সেখানে এখন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সন্ত্রাসী তান্ডব চলছে। ফলে নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের মধ্যে এক ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তিনি বলেন, প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীনদের দাপটে খুলনা মহানগর জুড়ে এখন শুধুই আতঙ্ক। ভোটার’রা ভীতিমুক্ত পরিবেশে নির্বিঘেœ ভোট দেয়া দূরে থাক এখন তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরম হুমকির মধ্যে নিপতিত। শনিবার রাতেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার ও বিএনপি নেতাকর্মীদের হুমকি দেয়া হয়েছে, গণগ্রেফতার করা হয়েছে, ভোটকেন্দ্রে না যেতে চাপ দেয়া হচ্ছে। ধানের শীষের প্রার্থী ক্ষমতাসীনদের নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ১৯টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলেও নির্বাচন কমিশন অভিযোগগুলিকে আমলে নেয়নি। সরকারি সন্ত্রাসী অস্ত্রধারীদের আনাগোনা চলছে নির্বাচনী এলাকায়। অথচ ইসি নির্বিকার ও নীরব দর্শক। নির্বাচন কমিশন জেগে থেকে ঘুমিয়ে থাকার ভান করছে। এই কারণেই খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের মাঝে কানাঘুষা চলছে নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন সরকারের ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বাস্তবায়ন করছে।
রিজভী বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে ভোটার ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকলেও, নির্বাচনী এলাকায় সরকারের অনাচারের এক ভয়ানক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি প্রিজাইডিং অফিসারদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করছে সাদা পোশাকধারী পুলিশ। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তারা তাদের বাসভবনে গিয়েও খোঁজ-খবর নিচ্ছে। এ নিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারদের মনে এক ধরনের সংশয় ও ভীতি বিরাজ করছে।
এদিকে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে কোনো রকম অনিয়ম, কেন্দ্র দখল, ভোট চুরি ও ডাকাতি হলে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করার আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছে বিএনপি। এ বিষয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, খুলনা নির্বাচনে যদি কোনো রকমের অনিয়ম হয়, কেন্দ্র দখল করে ভোট চুরি ও ডাকাতি করে নির্বাচন সম্পূর্ণ করা হয়, তাহলে সেই নির্বাচনকে আমরা প্রত্যাখ্যান করবো। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর আছে, ঢাকা এবং বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাদা পোশাকে এজেন্ডদের পাঠানো হচ্ছে কেন্দ্র দখল করে ব্যালট ব্যাক্সে ভুয়া ব্যালট পেপার ঢুকানোর জন্য। তিনি বলেন, কেসিসি নির্বাচন নিয়ে ইসি উদাসীন। মনে হচ্ছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পুলিশ, আওয়ামী সশস্ত্র ক্যাডার ও নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে একই টিমে খেলছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুলনা সিটি নির্বাচন যে সুষ্ঠু হবেনা তা অতীতের স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকেই আন্দাজ করা যায়। সরকার মুখে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বললেও প্রতিনিয়ত বিরোধী নেতাকর্মীদের হয়রানি ও গণগ্রেফতার করছে। এটি কোনভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষণ হতে পারেনা। তারা বলেন, অতীতের সকল রেকর্ড় ভেঙ্গে অতীতের নির্বাচনে ভোট ডাকাতির যে ইতিহাস আওয়ামী লীগ রচনা করেছে তার থেকে তারা বের হতে পারবেনা। এবারো ভোট ডাকাতি, ব্যালট পেপারে সিল মারা, ব্যালট বক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা অব্যাহত থাকবে বলে তারা মনে করেন। বিশ্লেষকরা বলেন, এবারের নির্বাচনটি ক্ষমতাসীনদের জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষা। তাই নির্বাচনে তারা মরণ কামড় দেবেই। তাদের উদ্দেশ্য যে কোনভাবেই বিজয়ী হতে হবে। সে ক্ষেত্রে তারা সফলও হয়েছে। তবে তাতে গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছে তারা। দেশে আবারো পরোক্ষভাবে বাকশালী শাসন কায়েম করেছে। তারা অস্ত্রের জোরে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় ভোট ডাকাতির মহোৎসব চালিয়েছে। এবারো তার ব্যত্যয় ঘটবেনা।
সূত্র মতে, অতীতের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের অনিয়ম ও কেন্দ্র দখলসহ সরকারী সন্ত্রাসী বাহিনী ভয়ংকর তান্ডবের খবর দিনভর মিডিয়ার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। এবারো বারবার অভিযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন বিরোধী প্রার্থীর অভিযোগ আমলেই নিচ্ছেনা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি দলের সশস্ত্র মহড়া, যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে বিরোধী নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতারে নির্বাচন নিরপক্ষে হবে কিনা তা নিয়ে যথেস্ট সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,  খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনী এলাকায় ‘সন্ত্রাসী রাজত্ব’ চলছে।  তিনি বলেন, খুলনা থেকে আমাদের নেতারা চলে এসেছেন। নির্বাচনের আইন অনুযায়ী ৭২ ঘন্টা আগে চলে আসতে হয়। এখন ওখানে যেটা চলছে যেটাকে ইংরেজী ভাষায় বলে রেইন অব ট্রেয়ার। সন্ত্রাসের রাজত্ব। তিনি বলেন, সরকারি দল জয়লাভের জন্য সমস্ত রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করছে। তারপরও আমরা বিশ্বাস করি নির্বাচনই একমাত্র পথ। যে পথে আমাদেরকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পরিবর্তন করাতে হবে। তবে সেটা নির্বাচন হতে হবে।
বিশ্লেষকরা আশংকা করছেন, দশম জাতীয় সংসদের আদলে সিটি নির্বাচনেও আরেকটি ‘প্রহসনের’ নির্বাচন আয়োজনের ছক চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। তারা চায় জাতীয় সংসদের মত একটি ভোটারবিহীন নির্বাচন। যাতে করে আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে ফলাফল নিজেদের মত করে ঘোষণা করতে পারে। তাদের মতে, সরকারি দলের বাইরে অন্য প্রার্থী এমনকি তাদের ভোটাররাও যাতে কেন্দ্রে আসতে না পারে তার সবরকম আয়োজনও করেছে সরকারি দল। ভোটের দিনে যাতে বিরোধী নেতারা আসতে না পাওে সেজন্য চলছে গণগ্রেফতার। সরকারের আজ্ঞাবহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি দলের ক্যাডারদের হামলা, নির্যাতন, মেরে পুলিশে ধরিয়ে দেয়া অব্যাহত রেখেছে।
জানতে চাইলে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু ভোট ডাকাতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ভোটারদের মধ্যে একটা উৎসব কাজ করছে। কিন্তু যেভাবে হুমকি, গ্রেফতার এবং বাড়িবাড়ি গিয়ে তল্লাশী চালানো হচ্ছে তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সবাই শংকিত। জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা ভয় পাবেন না। হতাশ হবেন না। সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবেলা করুন। দলবদ্ধ হয়ে ভোট কেন্দ্রে যান। আপনার ভোট প্রয়োগ করুন।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।