আবু সাইদ বিশ্বাস:সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। রমজানের শুরুতেই বাজারে কাঁঠাল উঠতে শুরু করেছে। যদিও জেলাতে দিন দিন কাঁঠালের আবাদ হ্রাস পাচ্ছে। এবারের মৌসুমে জেলায় ৮৭৮ হেক্টর জমিতে ১১ হাজার ৫৭৩ মে: টন কাঁঠালের ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলা কৃষি বিভাগ।‘অনুকূল আবহাওয়া গাছে ব্যাপক কাঁঠাল ধরেছে। তবে মৌসুমের শুরুতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ছোট ছোট কাঁঠালগুলো বৃদ্ধি কম। এর পরও কাঁঠালের ভাল ফলন পেতে কাঁঠাল চাষীরা দিন রাত পরিচর্যা করে যাচ্ছে। কিছু কিছু গাছে কাঁঠাল আগাম পাঁকতে শুরু করেছে। এছাড়া সবজি হিসেবে বাজারে কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে। কাঁঠাল উৎপাদনে কোনো খরচ না থাকায় চাষিরা লাভবান মুখ দেখতে শুরু করেছে। এছাড়া জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রচুর কাঁঠাল রাজধানী সহ বিভিন্ন জেলাতে সরবরাহ করা হয়।
চলতি মৌসুমে জেলার ৭ টি উপজেলার ৮৭৮ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল চাষ হয়েছে বলে সাতক্ষীরা জেলা কৃষি খামারবাড়ি সূত্রে জানায়। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর ৩৯৬ হেক্টর, তালায় ৩ হাজার ২৭ হেক্টর,কলারোয়াতে ৮৫ হেক্টর, দেবহাটায় ২৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ০৫ হেক্টর, কালীগঞ্জ ৩২০ হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলায় ২০ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল চাষ করা হয়েছে।
চলতি বছরে উপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৫৭৩ মে.টন। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ৩৯৬০ মে.টন, তালাতে ২৭শ মে.টন, কলারোয়াতে ১১৯০ মে.টন, দেবহাটাতে ২শ মে.টন, কালিগঞ্জে ৩২১৮ মে.টন, আশাশুনিতে ৮৫ মে.টন এবং শ্যামনগরে ২২০ মে.টন কাঁঠাল পাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে।
জেলার মাটি কাঁঠাল চাষের জন্য খুবই উপযোগী এবং এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে অভিজ্ঞ মহল অভিমত পোষণ করেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসে সূত্রে ৭৮টি ইউনিয়নের সর্বত্রই ব্যাপক কাঁঠাল গাছ রয়েছে, যার আনুপাতিক সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক এবং একটি কাঁঠাল গাছে গড়ে ২০ থেকে ৭০টি পর্যন্তকাঁঠাল ধরেছে । প্রতিটি কাঁঠাল আকার ও চেহারাভেদে ৪০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আষাঢ়-শ্রাবণ কাঁঠাল পাকার উৎকৃষ্ট সময়। তবে এবার জ্যৈষ্ঠ মাসেও পর্যাপ্ত কাাঁঠাল বাজারে বেচা কেনা হচ্ছে।
কাঁঠাল রসাল ও সুস্বাদু একটি ফল। এ অঞ্চলে পরিকল্পিতভাবে কাঁঠালের তেমন কোনো বাগান করা হয় না। কোনো ধরনের সার-বিষ প্রয়াগ এবং যতœ ছাড়াই এ গাছ বেড়ে ওঠে। কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল যা প্রোটিন ও ভিটামিনসমৃদ্ধ। গ্রাম ও শহর উভয় অঞ্চলের লোকের খুবই পছন্দের ফল। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা কাঁঠালে রয়েছে ১.৮ গ্রাম প্রোটিন, ০.৩০ গ্রাম ফ্যাট, ২.৬১ গ্রাম ক্যালসিয়াম, ১.০৭ গ্রাম লৌহ, ০.১১ ভিটামিন বি-১, ০.১৫ গ্রাম ভিটামিন বি-২ এবং ২১.০৪ গ্রাম ভিটামিন ই। সুতরাং প্রতিটি মানুষের সুস্থ-সবল স্বাস্থ্যের জন্য ও ভিটামিনের অভাব পূরণে সুস্বাদু কাঁঠাল খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
কৃষকরা জানান, কাঁঠালের একটি বড় গুণ হলো এর কিছুই ফেলনা নয়। কাঁঠালের রস থেকে প্রচুর ভিটামিন, ক্যালসিয়াম পাই। কাঁঠালের বিচি এবং কাঁচা কাঁঠালের মোচা দিয়ে তরকারি রান্না করে খাওয়া যায়। কাঁঠালের খোলস ও পাতা গরু-ছাগলের প্রিয় খাবার। এ ছাড়া কাঁঠালের কাঠ থেকে আসবাবপত্র তৈরি করা ভালো হয়।
জেলাতে ‘কাঠালের বাম্পার ফলনের পরও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় চাষীরা কাঁঠালের ভালো দাম পবেনা বলে জানান। কাঁঠাল সহ মৌসুমী ফল সংরক্ষণ এবং সুষ্ঠু বাজারজাতকরণের জন্য প্রয়োজনয়ি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী এ খাতে সংশ্লিষ্টদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল মান্নান জানান, জেলায় এবছর কাঁঠালের ফলন ভাল হয়েছে। জেলার বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কের পাশে ব্যক্তিগত উদ্যোগে শত শত গাছ লাগানো হয়েছে। এছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে বাড়ির আঙিনায় কাঁঠাল চাষ করা হচ্ছে। কাঁঠাল চাষীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া সারা বছর যাতে কাঁঠালের চাষ করা যায় তার জন্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে