ক্রাইমবার্তা রিপোট” খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যকে খুলনাবাসীর সঙ্গে শ্রেষ্ঠ তামাশা বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি।
সোমবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ মন্তব্য করেন।
গতকাল রোববার গণভবনে খুলনা সিটি নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের ফলেই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে খুলনার মানুষের সমর্থন মিলেছে।
এ নির্বাচন নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলেছিলেন, তাদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন- এমন সুষ্ঠু নির্বাচন দেশে কবে হয়েছে?
প্রধানমন্ত্রীর এসব বক্তব্যের সমালোচনা করেন রিজভী বলেন, ভোটারবিহীন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য- খুলনার ভোটারদের সঙ্গে শ্রেষ্ঠ তামাশা। অবৈধ ক্ষমতার দৌরাত্ম্যে ভোটারদের অধিকার বঞ্চিত করে এখন তাদের প্রধানমন্ত্রী তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছেন।
তিনি বলেন, ভোটচুরির নতুন মডেলের এ নির্বাচনে খুলনা সিটির অর্ধেকেরও কম ভোটার ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেননি। যারাও গেছেন তারা ভোট দিতে পারেননি। এমন এক নির্বাচন হয়েছে যে নির্বাচনের পর লজ্জায় আজও নির্বাচন কমিশন কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দিতে পারেনি।
বিএনপির এ নেতা বলেন, যে নির্বাচনে ভোট ডাকাতি ও কারচুপির জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্ব মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় বইছে। যে নির্বাচনে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে জালভোট প্রদানসহ নানা অনিয়মের তদন্ত দাবি করছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো। যে নির্বাচনে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র বাবার সঙ্গে ভোট দিতে পারে, মরা মানুষ ভোট দিতে পারে, সন্ত্রাসীরা কেন্দ্র দখল করে লাইন ধরে সিল মারতে পারে সে নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় এটিই প্রমাণিত হল যে, ভোট ডাকাতির হুকুমদাতা সরকারের শীর্ষ নেতারা।
‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে আগামী নির্বাচনও হবে খুলনা মডেলে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রমাণ করে তার অধীনে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়া হবে বিরোধী দলগুলোর জন্য আত্মঘাতী,’ যোগ করেন রিজভী। ‘নির্বাচন কমিশন পুরোপুরে স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। তারা দলীয় মন্ত্রীদের নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ করতে দেয়নি। নির্বাচন কমিশনের যে রকম নিয়ম, তাতে আমাদের হাত-পা বাঁধা- প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলতে চাই নির্বাচন কমিশনে আপনাদের পছন্দের লোকজনদের ঢুকিয়ে আপনারা সুষ্ঠু ভোট যাতে না হয় সে জন্য হাত-পা বেঁধে দিয়েছেন। ইসি খুলনাতে সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে মাত্র। ইসি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্বর্ণালি বাহিনী নয় বরং এখন তারা ‘খাঁচায় পোরা তোতা পাখি’।
রিজভী বলেন, সরকার তার কর্তৃত্ব সম্প্রসারণ করে ইসিকে কব্জায় নিয়েছে। খুলনার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ভোট সন্ত্রাসের এক অভিনব নতুন মডেলের নির্বাচন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি খারাপ নজির সৃষ্টি করল। যে নির্বাচনে বিএনপির সমর্থকসহ সাধারণ ভোটারদের অধিকার হরণ করে তাদের হাত-পা বেঁধে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চেপে ধরে আওয়ামী লীগকে জয় আদায় করে দিতে সক্ষম হয়েছে নির্বাচন কমিশন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারে অংশগ্রহণ না করার কথা বলছেন, সরকারদলীয় একজন এমপি যিনি প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয়, একটানা পনেরো দিন সেখানে অবস্থান করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে কিভাবে খুলনাতে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন তা দেশবাসী দেখেছে গণমাধ্যমের বদৌলতে।
এমপি-মন্ত্রীরা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে না প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে রিজভী বলেন, এ বক্তব্য যে কতটা নির্লজ্জ মিথ্যাচার তার আরও একটি উদাহারণ হল গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে গতকাল গাজীপুরের টঙ্গিতে এক স্থানীয় এমপির বাসায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে এমপি-মন্ত্রীদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ওই বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি, কর্নেল ফারুক খান এমপি, কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ মন্ত্রী-এমপিরা, যা নির্বাচনী আচরণবিধির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এ ঘটনায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নিয়ে ক্ষমতাসীন মহলের এক গভীর নীলনকশার বিভৎস আভাস ফুঁটে উঠছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এ নেতা।
রিজভী অভিযোগ করে আরও বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান ও ছাত্রদল উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান রাজ আবারও জিজ্ঞাসাবাদের নামে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এর আগেও অনেকবার তাদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। তরুণ সমাজকে ভীত করার জন্যই রাজীব ও রাজের ওপর এ নির্যাতন। আমি অবিলম্বে তাদের রিমান্ড প্রত্যাহার করে মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহদফতর সম্পাদক সম্পাদক মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।