ক্রাইমবার্তা রিপোট:আজও দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ১১ জন নিহত হয়েছেন। তবে, পুলিশের দাবি নিহতরা সবাই মাদক ব্যবসায় জড়িত।
সোমবার রাতে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী, চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী, নেত্রকোনা, দিনাজপুর,নারায়ণগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসব বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রাম: নগরীর বায়জিদ থানাধীন ডেবারপাড় এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে র্যাব-৭ এর বন্দুকযুদ্ধে শুক্কুর আলী (৪৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ১০ হাজার পিস ইয়াবা, ১ টি ওয়ানশাটার গান ও বিপুল পরিমাণ গাজা উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
আজ সোমবার রাত ১২টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারি পরিচালক মিমতানুর রহমান বলেন, শুক্কুর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে মহানগরীর বিভিন্ন থানায় ১০ টির অধিক মাদক মামলা রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গ: চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার শহরের রেলস্টেশনের অদূরে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে সাজাপ্রাপ্ত আসামি কামরুজ্জামান সাধু (৪৫) নিহত হয়েছে। পুলিশের দাবি সে মাদক ব্যবসায়ী ছিল।
সোমবার দিবাগত রাত ২ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এসময় পুলিশের এস আই জিয়াউর রহমান, এ এসআই হামিদুর রহমান, এ এসআই শহিদুল ইসলাম, কনষ্টেবল রাকিব আহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি দেশীয় পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি ও ১ বস্তা ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে। নিহত কামরুজ্জামান সাধু উপজেলার হারদি গ্রামের এমদাদুল হকের ছেলে এবং সাজাপ্রাপ্ত সহ এক ডজন মামলার আসামি।
আলমডাঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) লুতফুল কবির জানান, সোমবার দিবাগত রাতে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের একটি দল আলমডাঙ্গা উপজেলার শহরের রেলস্টেশনের অদূরে পাকা রাস্তার কাছে টহল দেওয়ার সময় ৬/৭ জন চোরাকারবারীকে চ্যালেঞ্জ করে। এসময় চোরাকারবারীরা পুলিশের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়ে। এতে মাদকব্যবসায়ী কামরুজ্জামান সাধু নিহত হয়, বাকিরা পালিয়ে যায় এবং ৪ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়। আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দেশীয় পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি ও এক বস্তা ফেনসিডিল উদ্ধার করে।
আলমডাঙ্গা থানার ওসি আবু জিহাদ মোঃ ফকরুল আলম খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নিহত কামরুজ্জামান সাধু এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। সে ৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি সহ থানায় তার বিরুদ্ধে একডজন মাদক মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
কুমিল্লা: কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও থানা পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শরীফ ও পিয়ার নামে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। সোমবার রাত পৌনে ১টার দিকে জেলা সদরের বিবির বাজার অরণ্যপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযানকালে কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) রুপ কুমারসহ অন্তত ৫ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ২ রাউন্ড গুলিসহ একটি রিভলবার, একটি পাজারো জিপ, ৫০ কেজি গাঁজা এবং ৫০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে।
নেত্রকোনা: নেত্রকোনায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম-আমজাদ হোসেন। পুলিশের দাবি নিহত আমজাদ মাদক ব্যবসায়ী ছিল।
সোমবার দিবাগত রাতে সদর উপজেলার মেদনী ইউনিয়নের বড়য়ারী এলাকায় এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বোরহান উদ্দিন জানান, সোমবার রাতে আমজাদকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে নিয়ে বড়য়ারী এলাকায় অভিযান চালানোর সময় তার সহযোগীরা পুলিশের ওপর গুলি চালায়। এসময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। এতে আমজাদ হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
নীলফামারী: নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরের গোলাহাট বধ্যভূমি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুইজন নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন- শহরের নিচু কলোনী এলাকার জনি (৩৪) ও ইসলামবাগ এলাকার শাহিন (৩২)। পুলিশের দাবি তারা মাদক ব্যবসায়ী ছিল।
সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল জানান, আটক জনি ও শাহিনকে জিজ্ঞাসাবাদে করা হলে তারা জানায়, রাতে গোলাহাট বধ্যভূমি এলাকায় জসিয়ার রহমান জসি ও নূর বাবু নামে দুইজন মাদকের বড় চালান নিয়ে আসবে। এরপর তাদের সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে মাদক বিক্রেতাদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ হয়। এতে জনি ও শাহিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় সৈয়দপুর থানার ওয়াদুদ হোসেন ও মোকারম হোসেন নামে দুই পুলিশ আহত হয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় মঙ্গলবার ভোরে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে বাচ্চু খান (৩৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এসময় র্যাব তাদের ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার, বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদক উদ্ধারে গেলে বাচ্চুসহ তিন মাদক ব্যবসায়ী দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে ও র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় র্যাবও পাল্টা গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলেই বাচ্চু নিহত হয় এবং বাকি দুজন পালিয়ে যায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ধন মিয়া (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। সোমবার রাত ২টার দিকে উপজেলার সোনারামপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক ধন মিয়া মাদক ব্যবসায়ী বলে জানিয়েছে র্যাব।
ফেনী: ফেনীতে র্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সোমবার রাতে মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু (৪৯) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর লেমুয়া নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে।
মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার রুপকানিয়া গ্রামের হাজী আবদুল করিমের ছেলে। তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম জেলায় ডাকাতি ও মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে।
ফেনীস্থ র্যাব ক্যাম্পের অধিনায়ক সাফায়াত জামিল ফাহিম গণমাধ্যমকে জানান, সোমবার রাতে র্যাব ফেনী ক্যাম্পের একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফেনীর লেমুয়ায় অভিযান চালায়। এসময় শীর্ষ মাদক গডফাদার মঞ্জুরুল আলম মঞ্জুর নেতৃত্বে একদল মাদক ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে লেমুয়া এলাকায় পোঁছে। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা র্যাবকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়ে। র্যাব আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছুড়লে মঞ্জু গুলিবিদ্ধ হয়। বাকীরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে র্যাব একটি বিদেশি পিস্তল, ৭ রাউন্ড গুলি, ৫টি খালি খোসা উদ্ধার করা হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৫ লাখ পিস ইয়াবাসহ র্যাবের হাতে আটক হয় মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু।
দিনাজপুর: দিনাজপুরের বিরামপুরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত হয়েছে।
উপজেলার মনিরামপুর নামক এলাকায় সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশ এখনও এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।
বিরামপুর সার্কেল এএসপি মিঠুন সরকার জানান, ক্রয়ফায়ারে একজন আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। নিহত হয়েছে কিনা সেটি বিরামপুর থানার ওসি বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে জানতে বিরামপুর থানার ওসি আব্দুস সবুরকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এখন ঘুমাচ্ছি, পরে কথা বলছি।’
মাদক সম্রাটরা সবাই আওয়ামী লীগ নেতা: মোশাররফ
ঢাকা: চুনোপুঁটিদের না মেরে মাদকের মূল নায়কদের নাম প্রকাশ করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
মোশাররফের দাবি, মাদকের সম্রাটরা সবাই আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতা। সরকারের এমপি, যাকে সারা দেশের মানুষ চেনে মাদকের সম্রাট হিসেবে। তাকে ধরার পরিবর্তে ফুলের মালা পরানো হয়েছে।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথ বলেন।
মাদার অব ডেমোক্রেসি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৩৭তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে ‘স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের আদর্শই আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস’ শীর্ষক আলোচনা সভাটি আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।
মোশাররফ বলেন, ‘দেশের মানুষ নিরাপদে নেই। কথায় কথায় ক্রসফায়ার দেওয়া হচ্ছে। গুম, খুন চলছে। হঠাৎ বিচার বহির্ভূত হত্যা শুরু হয়েছে মাদকের নামে। এর মাধ্যমে বিরোধীদের দমনের সুদূর প্রসারি লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দিয়ে মাদক নির্মূল হবে না। এ দেশে আইন আছে। আইনের অধীনে বিচার করা য়ায়।’
সময় তিনি বলেন, ‘এদেশে কোনো ইয়াবা তৈরি হয় না। বাহির থেকে আসে। সরকার যদি আন্তরিক হতো তাহলে সীমান্ত দিয়ে দেশে মাদক প্রবেশ করতো না। এর সাথে মূলত সরকারে এমপিরা জড়িত। আগে তাদের ধরুন।’
সরকার তাদের ধরবে না দাবি করে মোশাররফ বলেন, ‘এটি আসলে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদের মাঝে ভয় ভীতি সৃষ্টি করাই লক্ষ্য।’
খন্দকার মোশাররফ অভিযোগ করে বলেন, ‘বিএনপি, খালেদা জিয়া ও জনগণকে বাইরে রেখে নির্বাচন করাই সরকারের টার্গেট। কিন্ত, সরকারের এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা যাবে না। জনগণ তা মানবে না।’
মোশাররফ বলেন, ‘এই স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। তা করতে হলে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তাকে মুক্ত করে তবেই আমরা একটি নির্বাচন করবো এবং সে নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি বিজয়ী হয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো। সময় আসছে। যদি সরকার ২০১৪ এর মতো নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হয় তাহলে জনগণ রাস্তায় নেমে তাদের সামনে দাঁড়াবে।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।