‘মাদক ব্যবসার চেয়ে ক্রসফায়ার বড় অপরাধ’

বিবিসি বাংলা: বাংলাদেশে সরকারের মাদকবিরোধী অভিযানে নিহতের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি এই প্রক্রিয়ার বৈধতা, উদ্দেশ্য এবং কার্যকারিতা নিয়েও সন্দেহ-উদ্বেগ জোরালো হচ্ছে। এছাড়াও মাদক ব্যবসার মূল হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা বলছেন, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হচ্ছে, এবং মূলহোতারাও ছাড়া পাবেন না। মাদক চোরাচালানী এবং মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চলা র্যাবের এই অভিযানে অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছে।

আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এসব ঘটনার যেসব বিবরণ দিচ্ছে সেগুলো মোটামুটি একই রকমের। তারা বলছে, অভিযানের সময় মাদকচক্রের সদস্যরা গুলি চালালে পাল্টা গুলিবর্ষণ করা হয় এবং তাতেই এদের মৃত্যু হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ‘এসব ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধকে’ ‘বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করে এর তীব্র সমালোচনা করছে।

সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারি দলের বিভিন্ন নেতা এই অভিযানের পক্ষে তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন, তরুণ সমাজকে সর্বনাশা ধ্বংসের পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে এটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তারা দাবি করছেন, এই অভিযানে দেশের মানুষ ‘খুশি’ হয়েছে।

সোশাল মিডিয়ায় বিতর্ক
মাদকবিরোধী অভিযানের সময় এসব প্রাণহানির ব্যাপারে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিতর্ক হচ্ছে। কেউ এর পক্ষে আবার কেউ এর তীব্র সমালোচনা করছেন। এখানে এরকম কয়েকজনের মন্তব্য তুলে ধরা হলো।

স্বপ্ন নীল মিঠু লিখেছেন, “এটা প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এক দৃষ্টান্তমূলক উদ্যোগ। কিন্তু মাদক সাম্রাজ্যের একজন সম্রাটকেও আজ পর্যন্ত ক্রসফায়ার দূরের কথা গ্রেপ্তার হতেও পর্যন্ত শুনিনি! তাদের দেখা যায় রাষ্ট্রীয়ভাবে রাজকীয় বেশ ভুষায়!”

এসব হত্যাকাণ্ড আসলেই কিভাবে ঘটছে সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। মাহমুদুল হাসান নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, “ছিঁচকে মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে তো অস্ত্র থাকার কথা না। দু’এক জনের হাতে থাকলেও তারা সেটা দিয়ে পুলিশ বা র্যাবের মতো শক্তিশালী বাহিনীর সাথে কিভাবে গোলাগুলির মতো ভয়ানক সংঘর্ষে লিপ্ত হয় সাধারণ জ্ঞানে সেটা বুঝতে পারছি না।”

তিনি বলেন, “এটা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও রাষ্ট্রের স্পষ্ট ব্যর্থতা। এইভাবে বিচার বহির্ভূত হত্যা সমাজকে কলঙ্কিত করে। মাদক ব্যবসার চেয়ে এই ক্রসফায়ারে হত্যা অনেক বড় অপরাধ।” আবার অনেকে এর প্রশংসা করলেও নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে কারা প্রাণ হারাচ্ছেন সেটা তদন্ত করে দেখার কথা বলেছেন।

এরকম একজন মামুন হোসাইন। তিনি লিখেছেন, “এটা ভাল উদ্যোগ। তবে প্রশাসন কি আসলেই মাদক ব্যবসায়ীদের মারছে নাকি সাধারণ মানুষ মারছে সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।”

রাজনীতির গন্ধও পাচ্ছেন অনেকে। বেলাল আহমেদ নামে একজনের সরাসরি অভিযোগ: “এটা ক্রসফায়ার বা বন্ধুক-যুদ্ধ নয়। এটা সরকারের নতুন কৌশল, বিএনপির নেতাদের মারার জন্য।”

মো: আনোয়ার হোছাইন সিকদার নামে আরো একজন লিখেছেন, “যারা আসল মাদক ব্যবসায়ী তাদেরকে রাখা হয়েছে জামাই আদরে। অন্যদিকে নিরীহ মানুষকে মেরে, বলা হচ্ছে মাদকচক্র। সব সরকারি নাটক।” আমিনুর রহমান লিখেছেন, “ক্রসফায়ারে না দিয়ে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক। এতে করে তাদের নিকট থেকে মূলহোতাদের সম্পর্কে জানা যাবে।”

এই অভিযানের সমালোচনা করতে গিয়ে ডি কে রায় নামে একজন লিখেছেন, “গাছের গোড়ায় পানি ঢেলে ডালপালা ছাঁটাই করে কি আর হবে ? এতে শুধু গাছের বৃদ্ধিই রহিত হবে। সমূলে উৎপাটন আর হবে না। আর এতে দেশের বিচার ব্যবস্থা, আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।”

রকিবুল হক লিখেছেন, “অবশ্যই আমরা খুশি…! কিন্তু শুধুমাত্র মাঠ পর্যায়ের মাদক ব্যবসায়ীদের মারলে তো আর দেশ মাদক মুক্ত হবে না। মারতে হবে যারা এদের মাদক সাপ্লাই দেয় এবং ইন্ধন দেয়।”

বিপ্লব রহমান লিখেছেন, “এটা মোটেও যুক্তিসংগত কোনো পদ্ধতি না। তাছাড়া এর মূল হোতারা কিন্তু রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রশাসন, বিশেষত কিছু পুলিশ। সুতরাং এদের আগে ধরতে হবে।” ল্যাজি শাহারুল ইসলাম রাজ নামে আরেকজন বর্তমান অভিযানের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে লিখেছেন, “যারা মাদক ব্যবসা করে তারা কখনো ভালো মনের মানুষ হতে পারে না। সুতরাং ক্রসফায়ার বহাল থাক।”

Check Also

বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেবহাটায় মানববন্ধন

দেবহাটা প্রতিনিধি: স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার এবং বিএনপির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।