ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: ইসলামী রেঁনেসার কবি ফররুখ আহমেদ এঁর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনানে কবি আল মুজাহিদী বলেছেন, কবি ফররুখ আহমেদ অন্যায়ের সাথে কখনো আপোষ করেননি। শত হাজার অভাব-অনটন, বিপদে-আপদে কখনো ভেঙে পড়েননি। কোনো মানুষের সাহায্য তিনি চাইতেন না। সর্বাবস্থায় ভরসা করতেন এবং আস্থা রাখতেন আল্লাহ তায়ালার উপর। ফররুখ আহমদ একজন বড় মাপের কবি ছিলেন। তিনি নিজস্ব কাব্যভাষা নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যা একজন কবির সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব। তাঁর ভাবনা চিন্তার সবকিছুই ছিল তাঁর যুগের অন্যান্য লেখকদের থেকে আলাদা। সে জন্য তিনি নিজেকে বিশিষ্ট করে গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। সেটা তিনি কবিতার চাহিদা মেনে নিয়েই করেছিলেন। সে কারণে তাঁর এই মানবচিন্তা কখনো শ্লোগানে পরিণত হয়নি।
গতকাল শনিবার নগরীর ইকবালনগর রোডস্থ দৈনিক পূর্বাঞ্চল ডায়ালগ সেন্টারে অনুষ্ঠিত সেমিনার ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, মুসলমানদের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছেন যে দু’জন কবি তাদের মধ্যে কবি ফররুখ আহমদ অন্যতম। তার কবিতা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু কুপমুন্ডুকতায় ভোগা শাসকেরা আবার তা পাঠ্যপুস্তক থেকে সরিয়ে দিয়েছে। তার কবিতা ছাড়া মুসলমানদের জীবন পূর্ণ হতে পারে না। তিনি শিশু-কিশোরসহ সবার জন্য লিখেছেন।
কবি ফররুখ আহমেদ জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন পরিষদ খুলনার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ট্রেজারার বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মাযহারুল হান্নান। প্রফেসর মুহাম্মদ আশরাফের সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক এইচএম আলাউদ্দিনের সঞ্চালনায় প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন খুলনা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি এডভোকেট আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চু, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সহ-সভাপতি ড. মো. জাকির হোসেন, দৈনিক নয়াদিগন্তের খুলনা ব্যুরো প্রধান এরশাদ আলী ও বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিক সৈয়দ আলী হাকিম। এতে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা করেন অধ্যাপক নজিবর রহমান, এডভোকেট সৈয়দ এহতেশামুল হক জুয়েল, সাংবাদিক আব্দুর রাজ্জাক রানা, কবি আবুল হাসান জারজিস, কবি ও প্রাবন্ধিক সেখ মনিরুল ইসলাম, সাংবাদিক শেখ শামসুদ্দিন দোহা, কবি আব্দুল হান্নান, এসএম মাহবুবুর রহমান, আব্দুল্লাহ আল কাফি, এস এ মুকুল, কবি স ম হাফিজুল ইসলাম, আতিক উল্লাহ সুজন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে কবি ফররুখ আহমদের কবিতা আবৃতি করা হয়।
সেমিনারে আলোচকরা বলেন, প্রকৃতপক্ষে ফররুখ আহমদ ছিলেন মানবতাবাদী কবি। ইসলামী রেনেসাঁর কবি হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও তাঁর কবিতার মূল উপজীব্য মানবতাবাদ। আর ইসলামকে তিনি মানবতার আদর্শ হিসেবেই গ্রহণ করেছেন। ইসলামকে তিনি চেয়েছেন শোষণমুক্ত সমাজের নির্মাতা হিসেবে, মানবতার মুক্তির নিদের্শনা হিসেবে। এজন্য তাঁর ইসলামি ভাবধারার সাহিত্য মানবতাবাদী সাহিত্যে পরিণত হয়েছে। ইসলাম যে মানবতার আদর্শ তা বার বার উল্লেখিত হয়েছে কবি ফররুখের কবিতাতে। মানুষের তৈরি ইসলামের সংকীর্ণতা ও মেকীরূপ ছিন্ন হয়ে ইসলামের প্রকৃতরূপ উদ্ভাসিত ও মানবতার জয়গান উচ্চারিত হয়েছে তাঁর সাহিত্যে।
আলোচকরা বলেন, চল্লিশের দশকের কলকাতায় যে ক’জন শক্তিমান কবি’র আবির্ভাব ঘটেছিল ফররুখ আহমদ ছিলেন তাঁদের ভেতর অন্যতম প্রধান কবি। তাঁর কাব্য প্রতিভা শুধু কলকাতা নয়, পরবর্তীতে এদেশেও বিপুলভাবে খ্যাতি ও দীপ্তি লাভ করে। জাতীয় জাগরণে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। কবিদের সাধারণত সাহিত্য জীবন আর ব্যক্তি জীবনের সাথে অনেক ক্ষেত্রে মিল থাকে না। কিন্তু তিনি ছিলেন অন্যান্যদের থেকে ব্যতিক্রম। আদর্শের জায়গা থেকে তাকে শত কেউ কোনদিন বিন্দুমাত্র টলাতে পারেনি। তাঁর লেখা সাহিত্যের বিভিন্ন অংশের অসামান্য অবদান এদেশের সাহিত্যাকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় জ্বলজ্বল করবে।
আলোচকরা আরো বলেন, বাংলাদেশের কবি, গণমানুষের কবি ফররুখ আহমদ। তাঁর কবিতায় বাংলাভাষা ও বাংলাদেশের মানুষের জীবনচিত্র অসাধারণভাবে ফুটে উঠেছে। তার কবিতায় তিনি তুলে এনেছেন বাংলার শেকড় ও সংস্কৃতি। কবি ফররুখ ছিলেন গণজাগরণের কবি। তিনি মানুষের মধ্যে চেতনাবোধ তৈরি করে গেছেন। স্বাধীনতা, সাম্য ও মুক্তির চেতনা। আজকে কবিদের মধ্যে সেই জাগরণ নেই। দেশের মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা নেই। চলাফেরার স্বাধীনতা নেই। কিন্তু কবি-সাহিত্যিকেরা নীরবতা পালন করছেন। ফররুখ বেঁচে থাকলে অবশ্যই জাগরণের কথা বলতেন। ফররুখ আহমদের কাব্য চিন্তা ও মানবকল্যাণ চিন্তা এখনো প্রাসঙ্গিক। সে জন্য আমাদের ফররুখ চর্চা বৃদ্ধি করা জরুরী বলে মন্তব্য করেন।#
Check Also
কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ দেবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন
কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সচিবালয় …