ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: শিক্ষার্থী না পাওয়াসহ নানা অভিযোগে সারা দেশে ২০২টি মাদরাসা বন্ধ করে দিয়েছে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। চলতি বছর থেকে এসব মাদরাসা আর কোনো শিক্ষাকার্যক্রম চালাতে পারবে না। এসব মাদরাসায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের পার্শ্ববর্তী স্বীকৃত কোনো মাদরাসায় রেজিস্ট্রেশন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরো ৯৬টি মাদরাসায় চলতি বছরের দাখিল পরীক্ষায় কোনো শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ বা পাস করতে না পারায় তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। তাদের জবাব পাওয়ার পরপরই তাদের বিরুদ্ধেও অনুরূপ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানা গেছে।
বিষয়টি স্বীকার করেন মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে এম সাইফুল্লাহ। গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে বলেন, এসব মাদরাসায় দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষাকার্যক্রম নেই বললেই চলে। কারণ তাদের কোনো শিক্ষার্থী কয়েক বছর পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না। এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে বোর্ডেরও কোনো যোগাযোগ নেই। শিক্ষার্থীরা বোর্ডের পাবলিক পরীক্ষার জন্য আবেদন বা ফরমও পূরণ করছে না। এসব প্রতিষ্ঠানকে কারণ জানাতে নোটিশ দেয়া হয়েছিল। বোর্ড চেয়ারম্যান জানান, অনেকেই কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দেয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। যারা দিয়েছেন তাদের জবাবও সন্তোষজনক নয়। তিনি বলেন, এ ধরনের ভূঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন নেই।
গতকাল বিকেলে মাদারাসা বোর্ডের নিজস্ব ওয়েবসাইটে ২০২টি মাদরাসা বন্ধে ব্যাপারে একটি নোটিশও দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এসব মাদরাসা দাখিল স্তরের শিক্ষার্থীদের পার্শ্ববর্তী বা কেন্দ্রস্থিত মাদরাসায় রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করার জন্য বলা হয়। বন্ধ করার ব্যাখ্যায় বোর্ড বলেছে, ২০১৭ ও ২০১৮ সালের দাখিল পাবলিক পরীক্ষায় কোনো শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেনি। এর কারণ জানতে চেয়ে এসব মাদরাসাপ্রধানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলে অনেকেই এর জবাব দেননি, যারা জবাব দিয়েছে তাতে বোর্ড সন্তুষ্ট হতে পারেনি। এ কারণে এসব মাদরাসার অনুমতি ও অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি বাতিলসহ অনলাইনে পাসওয়ার্ড, মাদরাসা কোড নম্বর ও ইআইআইএন নম্বর বন্ধ করে দেয়া হলো।
মাদরাসা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বন্ধ হওয়ার মাদরাসার মধ্যে বাগেরহাটে চারটি, বড়গুনা পাঁচটি, বরিশালে দু’টি, ভোলায় ছয়টি, বগুড়ায় চারটি, বাহ্মহ্মণবাড়িয়ায় একটি, চাঁদপুরে একটি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে দু’টি, চট্টগ্রামে একটি, কুমিল্লায় তিনটি, দিনাজপুরে ১৯টি, গাইবান্ধা ১২টি, যশোর ৫টি, ঝিনাইদহে ১টি, জয়পুরহাটে ২টি, খাগড়াছড়ি ১টি, খুলনা ৪টি, কিশোরগঞ্জে ১টি, কুড়িগ্রামে ১টি, কুষ্টিয়ায় ৩টি, লালমনিরহাটে ৫টি, মেহেরপুরে ১টি, ময়মনসিংহে ৪টি, নওঁগা ১টি, নাটোরে ১১টি, নড়াইলে ১টি, নেত্রকোনায় ১টি, নীলফামারিতে ৩টি, নোয়াখালীতে ১টি, পাবনা জেলায় ৫টি, পঞ্চগড়ে ৭টি, পটুয়াখালীতে ৭টি, রাজবাড়িতে ২টি, রাজশাহীতে ১১টি, রংপুরে ৯টি, সাতক্ষীরায় ৫টি, সিরাজগঞ্জে ১০টি, সিলেটে ১টি এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ২৬টি।
এসব মাদরাসায় এখন ইউএনওর মাধ্যমে বোর্ডে আবেদন করার পর পুনরায় শিক্ষাকার্যক্রম চালু করার অনুমতি পেতে পারে বলে বোর্ড সূত্রে জানা গেছে। অন্যথায় তাদের শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থী ভর্তিরও কোনো সুযোগ থাকবে না।
এ ছাড়া এ বছর দাখিল পরীক্ষায় মাদরাসা বোর্ডের শতভাগ ফেল করা ৯৬টি প্রতিষ্ঠানকে গত ১৩ মে শোকজ নোটিশ ইস্যু করেছেন। গত ২৩ মের মধ্যে তাদের কাছে এর জবাব চাওয়া হয়েছিল। এ পর্যন্ত প্রায় সব কয়টি প্রতিষ্ঠানটি এর জবাব দিয়েছে। বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এসব জবাব যাচাই-বাছাই চলছে। জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাদরাসা শিক্ষা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম ছায়েফ উল্যা বলেন, শতভাগ ফেল করা ৯৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে তাদের শোকজ করা হয়েছে। কয়েকটির শোকজের জবাব পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, শতভাগ শূন্য পাস প্রতিষ্ঠান থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই। ফেল করা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হচ্ছে না। এসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ও স্বীকৃতি বাতিল ও এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সব সুবিধা বন্ধের জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হবে বলে জানান মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান।