ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট:ই মেঘালয় থেকে মহারাষ্ট্র। কেরল থেকে উত্তরপ্রদেশ। পাঞ্জাব থেকে বিহার, ঝাড়খণ্ড। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের উপনির্বাচনের ফলাফল নরেন্দ্র মোদির জন্য নিয়ে এসেছে চরম বিপদসঙ্কেত। এবং বিরোধীদের জন্য উল্লাস। উপনির্বাচনে বিজেপির পরাজয় অব্যাহত। কোথাও কংগ্রেস একা, কোথাও বিরোধী জোট, আবার কোথাও কোনো আঞ্চলিক দল এককভাবে বিজেপিকে ধরাশায়ী করেছে।
বিহার ও উত্তরপ্রদেশের ফলাফল বিজেপির কাছে সবথেকে বড় ধাক্কা। ওই দুই রাজ্যে জোটের কাছে আবার ভরাডুবি হয়েছে মোদির দলের। কিছুদিন আগেই গোরক্ষপুর ও ফুলপুরে মায়াবতী ও অখিলেশ যাদবের জোটপ্রার্থী বিজেপিকে পরাজিত করেছিল। সেই একই ফর্মুলায় বৃহস্পতিবারও জোট বনাম বিজেপি’র লড়াইয়ে বিরোধী জোটই জিতে গেল। এবার জোটে যোগ দিয়েছেন অজিত সিং ও কংগ্রেস। প্রার্থী অজিত সিংয়ের দলের। একা বিজেপিই যে হারছে তাই নয়। জোটে থাকা শরিকদেরও বিপর্যয় শুরু হয়েছে। নীতীশ কুমারের দল বিহারে এবং শিরোমণি অকালি দল হেরেছে পাঞ্জাবে। বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশে কোনো আসনেই জিততে পারেনি বিজেপি।
লোকসভায় ২০১৪ সালে বিজেপি ছিল ২৮২। লাগাতার পরাজয়ের পর বৃহস্পতিবার লোকসভায় বিজেপির একক গরিষ্ঠতা সুতোয় ঝুলছে। ২৭২। বিহার ও উত্তরপ্রদেশ আজ সবথেকে বড় যে বার্তাটি দিয়েছে সেটি হলো, জোট হলেই বিজেপি হেরে যাচ্ছে। ২০১৪ সালে এই দুই রাজ্য থেকেই বিজেপি নিয়ে গিয়েছিল শতাধিক আসন। আগামী লোকসভা ভোটে যদি এই দুই রাজ্য মুখ ফেরায় তাহলে লোকসভায় বিজেপি’র আসন নিশ্চিতভাবে অনেক কমবে। বৃহস্পতিকবার উত্তরপ্রদেশেই ছিল বিজেপির সবথেকে বড় প্রেস্টিজ ফাইট। বিজেপি প্রমাণ করতে চেয়েছিল বিরোধী জোটের থেকেও একা মোদি ম্যাজিক অনেক বেশি জনপ্রিয়। কিন্তু ফের জোটই জয়ী হলো, মোদি পরাজিত। বিহারে জোকিহাটে লালুপ্রসাদ যাদব ও কংগ্রেসের জোট হারিয়েছে নীতীশের দলকে।
এদিকে উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয়ের একটি বিধানসভা আসনে কংগ্রেস জয়ী হয়ে নতুন সমীকরণের জন্ম দিয়েছে। কারণ কংগ্রেস বৃহস্পতিবার একটি আসনে জিতে ওই রাজ্যে একক বৃহত্তম দল হয়ে গেল। শাসক জোট ২০। কংগ্রেস একাই ২১। সুতরাং এরপর মেঘালয়ে কংগ্রেস সরকার গঠনের দাবি করলে ফের সঙ্কটের মুখোমুখি হবে বিজেপি জোটের সরকার। কর্ণাটকের রাজরাজেশ্বরী নগর বিধানসভা আসনে বিপুল মার্জিনে জিতেছে কংগ্রেস। নাগাল্যান্ডে জয়ী এনডিপিপি। এই দলকে বিজেপি সমর্থন করেছিল। উত্তরাখণ্ডে বিধানসভা আসনে জয়ী হয়েছে বিজেপি। ঝাড়খণ্ডে দুটি বিধানসভা আসনেই জয়ী হয়েছে কংগ্রেস ও ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার জোট। কেরলে একটি বিধানসভা আসনে জিতেছে সিপিএম। কিন্তু বহু প্রচার করেও সেখানে দ্বিতীয় স্থানে আসতে ব্যর্থ বিজেপি। কংগ্রেস সেই কেন্দ্রে দ্বিতীয় হয়েছে। বৃহস্পতিবার ফলাফল আগামী দিনে বিরোধী জোটের সম্ভাবনাকেই আররো জোরদার করেছে। সেটাই বিজেপির কাছে চিন্তার। বিহারে কংগ্রেস ও লালুপ্রসাদ যাদবের দাপট অক্ষুণ্ণ থাকছে। উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী ঘোষণাই করে দিয়েছেন জোট অটুট থাকবে লোকসভা ভোটেও।
আর কয়েক মাস পরই তিন রাজ্যে বিধানসভা ভোট। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়। তিনটি রাজ্যই বিজেপির দখলে। এবং এসব রাজ্যেও সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে বিজেপিকে হারিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস। তাহলে এরপর কি আরও বড় ধাক্কা অপেক্ষা করে আছে মোদির জন্য?