রাহমতুলল্লাহ:সাতক্ষীরা সদর : খরচের তুলনায় লাভ বেশি বলে সাতক্ষীরায় বেগুন চাষে ঝুঁকছে চাষীর। বাজারে চাহিদা থাকায় চাষীরা হাইব্রিড জাতের বেগুন চাষ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এতে লাভবান হচ্ছে চাষীরা। তাছাড়া সল্প সময়ে অধিক ফলন হওয়ায় চাষীরা ব্যাপক হারে চাষ করছেন এ জাতের বেগুন। চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে সাতক্ষীরার সবকটি উপজেলাতেই অন্যসব সবজির পাশাপাশি হাইব্রিড জাতের বেগুন চাষ হয়েছে।
বেগুন সবজি হিসেবে অনেকের কাছে প্রিয়হলেও ভর্তা এবং ভাজি খাওয়ার জন্য বেগুনের জুড়ি মেলা ভার। ফলে বেগুনের চাষও বৃদ্ধি পাওয়ার কথা থাকলেও জেলাতে এর উৎপাদন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
জলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলাতে ১ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ২৬০হেক্টর, কলারোয়ায় ২১০ হেক্টর, তালায় ১১৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৭০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ২২০ হেক্টর, আশাশুনিতে ৬০ হেক্টর ও শ্যামনগরে ৮৫ হেক্টর।
যা বিগত বছরের তুলনায় অনেক কম। বিগত বছরে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলাতে ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ করা হয়ে ছিল। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৪৪০ হেক্টর, কলারোয়ায় ৩১০ হেক্টর, তালায় ২৮০ হেক্টর, দেবহাটায় ১৬০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ২৯৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ১২০ হেক্টর ও শ্যামনগরে ৯৫ হেক্টর।
৮ থেকে ৯ প্রকার হাইব্রিড জাতের বেগুনের চাষ হয়েছে এ জেলায়। এরমধ্যে রয়েছে, লুনা, তারাপুরী বারি বেগুন-২, কাজলা বারি-৪, নয়নতারা ও বারি-৫ বিজয়। তবে এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে হাইব্রিড লুনা ও বিজয় জাতের বেগুন। কৃষকরা জানায়, এ দু‘জাতের বেগুন সারা বছর উৎপাদন করা যায়। তাছাড়া গাছের সব শাখা প্রশাখায় বেগুন ধরে।
তালার খলিষখালির বেগুন চাষী করম আলী জানান, চলতি গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে ২ বিঘা জমিতে হাইব্রিড লুনা ও বারি জাতের বেগুন চাষ করেছেন। তিনি বলেন, বার মাসই অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি বেগুনের চাষ করেন। প্রায় দুই দশক যাবত তিনি বিভিন্ন সবজির আবাদ করেন। তিনি বলেন, হাইব্রিড জাতের বেগুন চাষ খুব লাভজনক। এটি দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং অধিক উৎপাদন হয়। তবে এটি চাষে খরচ একটু বেশি হয় বলে জানান এই কৃষক। তিনি বলেন, হাইব্রিড জাতের বেগুন চাষে বেশি যতœ নিতে হয়। তিনি আরো জানান, এবার ২ বিঘা জমিতে উৎপাদন খরচ বাদে তার অন্তত ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে আশা করছে। তিনি বলেন, ইতি মধ্যে বেগুন উত্তোলন শুরু করেছেন তার ক্ষেতে। তবে এবার বাজারে বেগুনের দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে বলেনও জানান তিনি।
বগুন চাষে ভাগ্য বদল করেছে সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ানের পাথরঘাটা গ্রামের চাষী আকতারুল ইসলাম। তিনি আট কাঠা জমিতে এবছর বেগুন চাষ করেছেন। ফলনও বেশ ভাল। তার প্রতিটি বেগুণ গাছে ৩০ থেকে ৪০টি বেগুন ধরেছে। তার ক্ষেত থেকে প্রতি সপ্তাহে ২২ থেকে ৩০ কেজি বেগুন উঠে। তিনি জানান, এবছর তার বেগুন ক্ষেতে পোকার আক্রামণ দেখা দিয়েছে। এর পরও বাজারে হাইব্রিড বেগুনের দাম বেশি থাকায় ক্ষতি পুশিয়ে নিতে পারবে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিকিদ মো. আব্দুল মান্নান বলেন, বেগুন একটি অত্যন্ত লাভজনক ও উপকারী ফসল। এটি বাংলাদেশে বার মাসে সবজি হিসেবে উৎপাদন করা হয়। তাছাড়া সবটির চাহিদা আমাদের দেশে ব্যাপক। তিনি বলেন, এ ফসলটি সাতক্ষীরায় ব্যাপক হারে চাষ করা হয়ে থাকে। তিনি বলেন, হাইব্রিড জাতের চারা রোপনের সাথে সাথেই সেচ, সার ও কিটণাশক অতি জরুরী। তিনি বলেন, বেগুনের শত্রু হলো ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা। এটাকে দমন করতে পারলে চাষী বেশি লাভবান হবে।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …