ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট; চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষকে মারধর ও ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
সোমবার দুপুরে চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ওসমান গণির আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। আদালত আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলশ-সিএমপির এডিসি (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, গত ৪ এপ্রিল বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ জাহেদ খান বাদী হয়ে নুরুল আজিম রনিকে এক নম্বর আসামি ও আরও ছয় জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নম্বর ৩/৪০।
এ মামলায় রনিকে চার সপ্তাহের জামিন মঞ্জুর করেছিলেন উচ্চ আদালত। এরপর আইন অনুসারে আজ বিচারিক আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন তিনি। পরে বিচারক তার জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর পর দুপুরেই ছাত্রলীগ নেতা রনিকে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত ৩১ মার্চ নগরীর চকবাজার থানাধীন চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ জাহেদ খানকে প্রকাশ্যে মারধর করেন রনি। তাকে কলার চেপে ধরে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে চড়-থাপ্পড় মারেন।
পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে উন্নয়ন ফির নামে অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা আদায়ের অজুহাত দেখিয়ে রনি এ অপকর্ম করেন। পরে অধ্যক্ষকে মারধরের ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়ে যায়। এরপরই কলেজের অধ্যক্ষ থানায় মামলা করেন।
২০১৩ সালের অক্টোবরে ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক হন নুরুল আজিম রনি। আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবেই তিনি এ পদ পান। যদিও এর আগে ছাত্রলীগের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদপদবিতে রনি ছিলেন না।
সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়ার পর থেকেই নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন রনি। শিক্ষা আন্দোলনের নামে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে হম্বিতম্বি করেন। হাটহাজারীতে ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে অস্ত্রসহ ধরা পড়ে। ২ বছর সাজা হয় তার। মুরাদপুরে একটি অ্যালুমিনিয়াম কারখানাও দখল করেন রনি।
চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের মালিক রাশেদ মিয়াকে মারধর করেন তিনি। এ অপকীর্তির ভিডিও ফুটেজও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
ওই দিন বিকাল ৫টা ২৬ মিনিট থেকে পরবর্তী ৬ মিনিটের ভিডিও ফুটজে দেখা যায়, থেমে থেমে কোচিং সেন্টার মালিককে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে চড়-থাপ্পড় ও কিলঘুষি মারছেন রনি। তর্জনী উঁচিয়ে বারবার শাসাচ্ছেন। চেয়ারের ওপর শুইয়ে গলা টিপে ধরছেন। সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতেও মারছেন।
এ সময় ওই কোচিং সেন্টার মালিক হাত জোড় করে রেহাই চাইলেও তাকে রেহাই দেননি ছাত্রলীগ নেতা রনি। বরং মারধরের পরও রাশেদকে অব্যাহতভাবে হুমকিধমকি দেয়া হয়। এর একপর্যায়ে তিনি ১৯ এপ্রিল এ বিষয়ে পাঁচলাইশ থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
এর পর রাতেই চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে রনিকে অব্যাহতি দেয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি।