এরপর রাতে থানায় তাকে আটকে রেখে তার পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে পুলিশ। শনিবার সকালে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। ২০ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ পুলিশ অস্বীকার করেছে।
জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে উপজেলা সদরের ফায়ার সার্ভিসের মোড় থেকে পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী ভোদলকে ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেফতার করা হয়। একই দিন বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আরও কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
কিন্তু ভোদল ছাড়া অন্যদের বিকালে আদালতে হাজির করা হয়। তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পরদিন সকালে ভোদলকে আদালতে হাজির করা হয়।
এলাকাবাসী জানায়, মাদকবিরোধী অভিযানে ভোদলকে গ্রেফতার করার পর ‘ক্রসফায়ারের’ ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতেই ভোদলকে রাতে থানা হাজতে রেখে দেয়া হয়। ভোদলকে গ্রেফতারের পর তার বাড়িতে যান গোদাগাড়ী থানা পুলিশের একজন এসআই ও দু’জন কনস্টেবল। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তারা টাকা আদায় করেন।
এ কারণে এক রাত থানায় রেখে পরদিন সকালে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। ভোদলের গ্রেফতার ও আদালতে তাকে চালান দেয়ার খবর গোদাগাড়ীতে টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়।
পুলিশের পিকআপে ভোদলকে আদালতে না পাঠিয়ে ভাড়া করা মাইক্রোবাসে করে পাঠানোর অভিযোগও উঠেছে। এ সময় দুই পুলিশ কনস্টেবলের সঙ্গে ভোদলের ভাতিজা আরেক মাদক ব্যবসায়ী আলামিনও একই মাইক্রোবাসে চড়ে আদালতে যান। আর ভোদলের পরিবারের পক্ষ থেকে মাইক্রোবাসের ভাড়া পরিশোধ করা হয়।
জানা গেছে, মাদক ব্যবসায়ী ভোদলের বাড়ি গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিষালবাড়ি মহল্লায়। তার বাবার নাম আফসার আলী ওরফে ডাকু। কয়েক বছর আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডাকু নকশিকাঁথার সুতা বিক্রি করে সংসার চালাতেন। আর তখন মহিষালবাড়ি পশুহাটে করিডোরে লেখার কাজ করতেন ভোদল।
পশুহাট বন্ধ হয়ে গেলে তিনি স্থানীয় বাজারে সিদ্ধ ডিম বিক্রি করতেন। কিন্তু হেরোইনের কারবার করে ভোদল এখন কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদকের তিনটি মামলা থাকলেও আগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
সব অভিযোগ অস্বীকার করে গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ ধরনের কথার কোনো ভিত্তি নেই। টাকা আদায়ের কথা এলাকায় প্রচার হলে আমার কানেও আসত। আমি তো কিছুই শুনিনি।
তিনি বলেন, বেলা ৩টার পর আদালত কোনো আসামি গ্রহণ করে না। তাই ভোদলকে পরদিন আদালতে তোলা হয়েছে। টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে তাকে রাতে থানা হাজতে রাখা হয়নি।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, গোদাগাড়ী থানায় ওসি হয়ে আসা জাহাঙ্গীর আলম এর আগে ২০০৮ সালের প্রথম দিকে উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে এখানে কর্মরত ছিলেন। তখন থেকে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী শীষ মোহাম্মদ ও জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতেও তার যাতায়াত রয়েছে। জাহাঙ্গীরের যোগদানের পর থানায় মাদক ব্যবসায়ী ও দালালদের যাতায়াতও বেড়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল্লাহ বলেন, এ ব্যাপারে তিনি অবগত নন। গোদাগাড়ীর বড় মাদক ব্যবসায়ী ভোদলকে গ্রেফতার করায় পুলিশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হতে পারে। এরপরও বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন। টাকা নেয়া এবং মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।