ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: ঢাকা: এই সরকারের বাজেট দেয়ার কোনো এখতিয়ার নাই বাজেট দেয়ার নামে তারা জনগণের ট্যাক্সের টাকা লুটপাট করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।
বৃহষ্পতিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর উত্তরের নতুন ঘোষিত বিভিন্ন থানা কমিটির নেতৃবৃন্দ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেছেন, ‘আজকে বাজেট দেয়া হচ্ছে ৪ লক্ষ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। যেটা গত বছরের চেয়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা বেশি। নির্বাচনী বছরে এই বাজেটকে আপনারা কিভাবে দেখছেন? আমি বাজেট সম্বন্ধে এখানে বিস্তারিত বলতে চাই না। বাজেট আগে পেশ করা হোক। বাজেটের উপরে আমরা প্রয়োজনে রি-এ্যাকশন দেব। তার চুলচেরা বিশ্লেষণ আমরা করবো। আমি শুধু এইটুকু সংক্ষেপে বলতে চাই। আজকে যে সরকার বাজেট দিচ্ছে। সেই সরকারের বাজেট দেয়ার কোনো এখতিয়ার নাই। বাজেট দেয়ার নামে তারা জনগণের ট্যাক্সের টাকা লুটপাট করছে।’
মঈন খান বলেন, ‘১০০ কোটি টাকা প্রজেক্টকে তারা ১০০০ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রজেক্ট বানিয়ে সেখান থেকে তারা লুটপাট করছে। বাজেটের আকার দিয়ে কিছু বোঝা যায় না। বাজেটের আকার বাজেটের মান সম্বন্ধে কিছু বলে না। বাজেটের মান অত্যন্ত নিম্ন। আপনারা দেখেছেন যে, ঢাকা শহরে যে সব বড় বড় প্রজেক্ট নেয়া হয়েছে। এমনকি পদ্মা সেতু প্রজেক্ট প্রথম শুরু হয়েছিল মাত্র সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা দিয়ে। সেই প্রজেক্ট আজ ৩৫ হাজার কোটি টাকায় পরিণত হয়েছে। আমরা বলেছি এই প্রজেক্ট শেষ হতে হতে পদ্মা সেতুর বাজেট ৫০ হাজার কোটি টাকা হলেও আমরা অবাক হব না। এতেই প্রমাণিত হয় যে বাজেটের কোয়ালিটি কি। বাজেট ফুলে ফেপে বড় হয়েছে। এটা বাজেটের জন্য গৌরবময় কোনো বিষয় নয়। সাইজ দিয়ে কোনো বাজেটের কোয়ালিটি নির্ধারিত হয় না। আমি স্পষ্ঠ ভাষায় বলে দিতে চাই, এই বাজেট জনগণকে শোষণ করছে। এই বাজেট একটি ভুয়া বাজেট। এই বাজেট দিয়ে কখনো বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা আমার সঙ্গে চলুন, গ্রামে-গঞ্জে চলুন। প্রতিটি রাস্তা, হাট, বাজার, স্কুল, কলেজ তার অবস্থা আপনারা পর্যবেক্ষণ করুন। আপনারা বলছেন আমাদের সময় বাজেটের পরিমাণ ছিল মাত্র ৬০ হাজার কোটি টাকা। আজকে ৪ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। আমি প্রশ্ন করব ৪ লক্ষ হাজার কোটি টাকা কার পকেটে যাচ্ছে? আজকে এই সরকারের কার্যক্রমের কারণে জনগণ এই প্রশ্ন করতে পারে না। ইনশাআল্লাহ আগামীতে যদি একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। তার মাধ্যমে যদি একটি জবাবদিহিমূলক সরকার আসে। সেই সময় একটি জবাবদিহিমূলক পার্লামেন্ট যদি আমরা সৃষ্টি করতে পারি সেখানে প্রশ্নগুলো তুলব। সরকারের প্রত্যেকটি কর্মকাণ্ডের জবাবদিহিতা করতে হবে। জনগণের পকেট কেটে যে টাকা নেয়া হচ্ছে সেই টাকা কার পকেটে যাচ্ছে, এটা সরকারকে জবাবদিহিতা করতে হবে।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘একটি গ্রামে, থানায় বা ওয়ার্ডে যখন আমরা মিটিং দেই তখন ১০ জন, ২০ জন বা ৫০ জন লোক একত্রিত হতে পারি না। সরকারের পুলিশ বাহিনী, রক্ষীবাহিনী ও বিভিন্ন প্রশাসনের যন্ত্র আমাদের গণতন্ত্রের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কাজ করতে দিচ্ছে না। তারই ফলশ্রুতিতে আমরা নিজেরা বসে আলোচনার মাধ্যমে এই কমিটিগুলো গঠন করেছি। কাজেই আজকে বাংলাদেশের প্রেক্ষিত আপনাদের বুঝতে হবে। এই প্রেক্ষিতে বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মামলা দিয়ে জেলে পুরে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা দিয়ে কারাগারে রাখা হয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে আমরা যতদূর সম্ভব শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে বলীয়ান হয়ে রাজনীতিতে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আমরা অনুসরণ করে ভবিষ্যতে ওয়ার্ড থেকে থানা, থানা থেকে মহানগর, মহানগর থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত আমাদের কমিটিগুলো গঠন করবো। এই বিশ্বাস আমাদের আছে। এখানে গণতান্ত্রিক কার্যক্রমের জন্য ন্যূনতম স্পেস সরকারকে দিতে হবে। সরকার একটি রাজনৈতিক দলের সরকার বলে তারা দাবি করে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় তারা জনগণের সরকার নয়। এমনকি তারা সেই আওয়ামী লীগের সরকারও নয়। এটা হয়েছে এখন প্রশাসনের সরকার। পুলিশের সরকার। এটা হয়েছে বিজিবির সরকার। আমি এটাও বলেছি আসুক সরকার আজকে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবকে ব্যারাকে রেখে রাজপথে আসুক। রাজনৈতিকভাবে বিএনপির মোকাবিলা করুক। আমরা দেখিয়ে দেব কারা জেতে।’
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি বজলুল বাসিত আঞ্জু, সহ-সভাপতি আব্দুল মতিন, সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এজিএম সামছুল হকসহ বিভিন্ন থানার নেতাকর্মীরা।