সাতক্ষীরায় কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ :‘তুলে নেয়ার আগে ৩ হাজার টাকাও নিয়েছিলো পুলিশ’

ক্রাইমবার্তা রিপোট: সাতক্ষীরা : ‘আগের দিন পুলিশ বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে গেছে। পরদিন সন্ধ্যায় এসে তিন হাজার টাকাও নিয়ে গেছে। এর পরদিন তাকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।’ কথাগুলো বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন নাজমা খাতুন। আজ শুক্রবার সাতক্ষীরায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন তার স্বামীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা।

নাজমা বলেন ‘আমার স্বামী আনিছুর রহমান গাজী ভাঙাড়ি লোহা লক্কড়ের ব্যবসা করতেন। একটি জুতার দোকানও ছিল তার। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেটি ভেঙে দেয় স্থানীয় কিছু লোক। এরপর থেকে তিনি নদীতে মাছ ধরে ও নিজেদের একটি ঘেরে মাছ চাষ করে সংসার চালিয়ে আসছিলেন। অথচ আমার স্বামীকে ‘মাদক চোরাচালানকারী’ বানিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করা হয়েছে।

গত ২৮ মে রাতে আনিছুর নিহত হওয়ার ১১ দিন পর আজ দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা তুলে ধরেন নাজমা।

ঘটনার পর কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ ঘটনার পরদিন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, (২৮ মে) রাত সোয়া ২ টায় তার কাছে খবর আসে দেয়াড়া পিছলাপোলের মাঠে মাদক চোরাচালানিদের দুটি বিবদমান গ্রুপ মাদক ভাগাভাগি নিয়ে নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি করছে। তখন খোরদো পুলিশ ক্যাম্পের উপপরিদর্শক (এসআই) সিরাজুল ইসলাম একদল পুলিশ সদস্য নিয়ে সেখানে পেঁছে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ তিন রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে।

ওসি আরও জানান, কিছুক্ষণ পর গোলাগুলি থেমে গেলে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়। তার নাম আনিছুর রহমান (৪০)। কলারোয়ার পাকুড়িয়া গ্রামের সুরত আলির ছেলে সে। তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা জেলায় ১০টি মাদক মামলা রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ানশুটার গান জব্দ করা হয় বলেও তখন ওসি জানিয়েছিলেন।

নাজমার অভিযোগ সম্পর্কে খোরদো পুলিশ ক্যাম্পের এএসআই এজাজ মাহমুদ বলেন, ‘এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। আমি আনিছুরের বাড়ি যাইনি। তার কাছ থেকে টাকা নেয়া বা তাকে আটক করিনি। এসব অভিযোগ মিথ্যা।

সংবাদ সম্মেলনে নাজমা খাতুন বলেন, ‘২৭ মে রোববার খোরদো পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই এজাজ মাহমুদ তার বাড়িতে গিয়ে বলেন আনিছকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানে গুলি করে মেরে ফেলা হবে। ওই দিন রাতে দেয়াড়াবাজার থেকে বাড়ি ফেরার সময় আনিছুরের কাছ থেকে ওই এজাজ মাহমুদ তিন হাজার টাকাও নেন এবং বলেন বিষয়টি তিনি মিটমাট করে দেবেন। ২৮ মে সোমবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে এএসআই এজাজ মাহমুদ ও এএসআই তরিকুল ইসলামসহ ৪ জন সাদা পোশাকধারী পুলিশ মোটর সাইকেলযোগে আমাদের বাড়িতে আসেন। ঘরে শুয়ে থাকা আনিছকে তারা হাতকড়া পরিয়ে বাইরে এনে সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি দিয়ে চোখ বেঁধে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে চলে যান তারা।’

নাজমা জানান, আনিছকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় তা খোরদো বাজারের লোকজন এবং পাড়া প্রতিবেশিরা দেখেছেন।

নাজমা বলেন, স্বামীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পরপরই খোরদো ক্যাম্পে যেয়ে খোঁজ নেওয়া হলে তারা বলেন, আমরা আনিছুরকে ধরিনি। কলারোয়া থানায় গেলেও একই কথা বলে পুলিশ। সন্ধ্যা নাগাদ খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে কলারোয়া রিপোর্টার্স ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করতে যাই। কিন্তু তারা বলেন, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে যেতে। রাতে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে যাবার পর সভাপতি বলেন, থানায় জিডি করতে এবং পরদিন সকালে সাতক্ষীরায় আসতে।

‘আমি রাত সাড়ে নয়টার দিকে জিডি করতে কলারোয়া থানায় গেলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার নাথ তা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন ‘দুই তিনদিন অপেক্ষা করুন’। ২৯ মে সকালে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনে জানতে পারি আমার স্বামীর মৃত্যুর খবর।’ বলেন নাজমা।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, কোথাও ফেন্সিডিল বা ইয়াবা ধরা পড়লেই পুলিশ সেই মামলার সাথে তার স্বামীকে জড়িয়ে দিত। এসব মামলায় তিনি কমপক্ষে চার বার জেল খেটেছেন। প্রতিবারে ২ থেকে আড়াই মাস পর্যন্ত জেলে ছিলেন তিনি। আনিছুর বিএনপির একজন সমর্থক ছিলেন বলেও জানান স্ত্রী।

এ প্রসঙ্গে খোরদো পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই সিরাজুল ইসলাম বলেন আনিছুর, তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে সবাই ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত। তাদেরকে বারবার বলা হয়েছে মাদকের কারবার ছাড়তে। মাদকের বিষয়ে সরকারের জিরো টলারেন্স উল্লেখ করে তিনি বলেন ‘আনিছুর কলারোয়ার কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নের পিছলাপোল মাঠে দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। এর সাথে পুলিশের কোনো সম্পর্ক নেই।’

নাজমা খাতুন আরও বলেন, আনিছুরকে হত্যার পর তার দুই সন্তান সদ্য এসএসসি পাস করা রিয়াজুল ইসলাম ও অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া রিমা খাতুনের ভবিষ্যত এখন অন্ধকার। তিনি বলেন, আমার স্বামী কোনো অপরাধ করে থাকলে তার বিচার হতে পারত। কিন্তু পুলিশ বিচার ছাড়াই তাকে মেরে ফেললো।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নিহত আনিসুরের বড় ভাই ওজিয়ার রহমান, তার স্ত্রী ফরিদা খাতুন, আনিছুরের মেয়ে রিমা ও ছেলে রিয়াজুল।

————–0—————-

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট:‘দিনের বেলায় পুলিশ প্রকাশ্যে চোখ বেঁধে আমার স্বামী আনিছুর রহমানকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।’

শুক্রবার দুপুরে স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন সাতক্ষীরার কলারোয়ার পাকুড়িয়া গ্রামের বন্দুক যুদ্ধে নিহত আনিছুর রহমানের স্ত্রী নাজমা খাতুন।

সংবাদ সম্মেলনে নাজমা খাতুন বলেন, ‘কলারোয়ার পাকুড়িয়া গ্রামে দেড় কাঠা জমির ওপর ছোট্র একটি কুড়েঘরে দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমরা বসবাস করি। জমি-জমা না থাকায় আমার স্বামী আনিছুর রহমান নদীতে মাছ ধরে ও অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার চালাতেন। গত ২৮ মে সোমবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে খোরদো পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই এজাজ মাহমুদ ও এএসআই তরিকুলসহ সাদা পোশাকে চার পুলিশ সদস্য আমার স্বামীকে সাদা গেঞ্জি দিয়ে চোখ বেঁধে হাতকড়া পরিয়ে ধরে নিয়ে যায়। পরে খোরদো পুলিশ ক্যাম্প ও কলারোয়া থানায় খুঁজতে গেলে তাকে আটক করা হয়নি বলে পুলিশ জানায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় জিডি করতে গেলে কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ জিডি না নিয়ে ২/৩ দিন অপেক্ষা করতে বলেন। পরদিন মঙ্গলবার সকালে আমি আমার স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ পায়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তিকে পুলিশ মাদক ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে চিতলার মাঠে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে স্বামীর হত্যার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন নাজমা খাতুন। এ সময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন, ভাসুর অজিয়ার রহমান গাজী, ছেলে রিয়াজ হোসেন ও মেয়ে রিমা খাতুন।

Check Also

তালায় ইউপি পরিষদ কক্ষে দুই সাংবাদিকের উপর হামলা, প্রতিবাদে মানববন্ধন

তালা প্রতিনিধি তালার ইসলামকাটি ইউনিয়ন পরিষদে সাংবাদিক আক্তারুল ইসলাম ও আতাউর রহমানের ওপর সন্ত্রাসী রমজান আলী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।