লুটপাটের জন্যই বিশাল বাজেট : বিএনপি

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট:জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সর্বশেষ লুটপাটের ও জনগণের রক্ত চুষে নেয়ার জন্যই বিশাল আকারের বাজেট পেশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

বৃহস্পতিবার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

শুক্রবার বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে এক প্রেসব্রিফিংয়ে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ বাজেটের কঠোর সমালোচনা করেন।

এ বাজেট বাস্তবায়ন অসম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, এটি মানুষকে বোকা বানানোর ও প্রতারণার বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেট ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বাজেট বড় করা হয়েছে। বাজেটের আকার বড় করে জনগণের সঙ্গে ধাপ্পাবাজি করা হয়েছে। কাজেই এটি কোনো জনকল্যাণমূলক বাজেট না।

তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থবছরেও চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট দেয়া হয়েছিল। তাতে কী দেখলাম, লুটপাট আর হরিলুট। সারা দেশের রাস্তাঘাটের দিকে তাকান। দেশের ৮৫ হাজার কিলোমিটার সড়কে বর্তমানে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। অথচ মেগাপ্রকল্পের নামে তারা বাঘা দুর্নীতি করেছে।

বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, গতবার এত বিগ বাজেট দেয়ার পরও বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্য সীমার চি। আর দেশের উত্তরাঞ্চলের হতদরিদ্রের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

সেক্ষেত্রে এবারেও অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে শুধু লুটপাটের জন্য বলে মনে করেন এ সাবেক ছাত্র নেতা।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটেও মেগা দুর্নীতির জন্য সকল পথ খোলা রাখা হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোর অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা বিদ্যমান।

বাজেটে যে বড় ঘাটতি রয়েছে তা পূরণ করা অসম্ভব দাবি করে তিনি বলেন, ঘাটতি মেটাতে ঋণ ও সঞ্চয়পত্রের ওপর ঝুঁকতে হবে সরকারকে। প্রস্তাবিতা বাজেট কর, ঋণ আর বিদেশি অনুদান নির্ভর।

বাজেটকে জনগণের রক্তচোষার লুটের বাজেট আখ্যায়িত করে রিজভী বলেন, বাজেটে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসবে দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০০১ কোটি টাকা আদায় করা হবে, যা জনগণের রক্ত চুষে আদায় করতে হবে।

আমদানি ব্যয় বাড়ছে, রফতানি আয় কমছে। এতে চলতি আয়-ব্যয়ে বিশাল ঘাটতি থাকবে বলেও জানান রিজভী। তিনি বলেন, রফতানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।

বাজেটে ব্যাংক লুটপাটকারীদের আরও সুযোগ করে দেয়া হয়েছে দাবি করে এ বিএনপি নেতা বলেন, ব্যাংকের কর্পোরেট কর কমিয়ে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোরও কর কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ব্যাংক মালিকরা যা চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী তাই করেছেন। ব্যাংক মালিকদের আরও বেশি লুটপাটের সুযোগ করে দেয়ার বাজেট এটি।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক খাতসহ জনকল্যাণমূলক কাজে বরাদ্দ একেবারেই অপ্রতুল। ফলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে কোনো উন্নয়ন হবে না। পোশাক খাতসহ কর্পোরেট খাতে কর বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পোশাক খাতে বর্তমানে যে দুরাবস্থা চলছে, তাতে সে খাতে দুরাবস্থা আরও বেড়ে যাবে।

বাজটে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই জানিয়ে দেশে বেকার সমস্যা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেন রিজভী।

তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নেই। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বন্ধ রয়েছে। শেয়ার মার্কেট থেকে বিদেশি বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছে।

প্রস্তাবিত বাজেট পাশ হলে সব জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। পাশাপাশি গৃহকর ও বাসাভাড়া বাড়বে। এমন আশঙ্কা জানিয়ে সামগ্রিকভাবে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা বিপাকে পড়বে বলে উদ্বেগ জানান রিজভী।

বাজেটের অর্থ সংস্থানের জন্য মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাটের ওপর নির্ভরশীলতারও সমালচনা করেন তিনি। তার মতে, ভ্যাটের ব্যাপ্তি বৃদ্ধি পেলে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরাই বেশি কষ্ট পাবে।

রিজভীর বলেন, সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলে বাজেটে ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইউটিউব ও গুগল ব্যবহারের ওপর করারোপের প্রস্তাব করছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে ৭ দশমিক ৮ ভাগ প্রবৃদ্ধি হবে বলে অর্থমন্ত্রীর প্রত্যাশা নিয় প্রশ্ন তোলেন বিএনপি মুখপাত্র।

তিনি বলেন, দেশে সুশাসন নেই, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ নেই, কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই, বিদেশি রেমিট্যান্স দিন দিন নিম্নগামী হচ্ছে। তাই প্রস্তাবিত ৭ দশমিক ৮ প্রবৃদ্ধি ডাঁহা মিথ্যাচার।

Check Also

ক্ষমতায় গেলে নারীদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে জামায়াত : ডা. শফিকুর রহমান

ক্ষমতায় গেলে নারীদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে জামায়াত মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।