মনিরুল ইসলাম মনি: ‘বন্দুকযুদ্ধের নামে কলারোয়া উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের আনিছুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে’ শুক্রবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন শেষে বাড়ি না ফিরতেই পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা হুমকি দিয়েছেন নিহতের স্বজনদের। প্রতিবাদ না দিলে পরিবারের সকলকে মাদক মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
পাকুড়িয়া গ্রামের অজিয়ার রহমান জানান, তার ভাই আনিছুর রহমানকে গত ২৮ মে সকাল ৯টার দিকে বাড়ি থেকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায় খোরদো পুলিশ ফাঁড়ির সহকারি উপপরিদর্শক এজাজ মাহমুদ ও সহকারি উপপরিদর্শক তারিকুল ইসলামসহ চারজন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার নাথ জিডি না নেওয়া ও সংবাদ সম্মেলন করতে না পেরে তারা হতাশ হন। একপর্যায়ে ২৯ মে সকালে সাংবাদিকদের মাধ্যমে আনিছুরের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন তারা। ২৮ মে দিবাগত গভীর রাতে কলারোয়ার পিছলাপোলে ‘মাদক ভাগাভাগি’ নিয়ে দুই গ্রুপের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ গুলিবিদ্ধ হয়ে আনিছুর রহমান নিহত হয়েছেন পুলিশের এমন ‘সাজানো’ ঘটনার ১১ দিন পর শুক্রবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেন তার ভাইয়ের স্ত্রী নাজমা খাতুন। তিনিসহ সাথে ছিলেন আনিছুরের ছেলে রিয়াজুল, মেয়ে রিমা ও তার স্ত্রী ফরিদা খাতুন। সংবাদ সস্মেলনে আনিছুরকে বন্দুকযুদ্ধের নামে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
ওজিয়ার রহমান আরো বলেন, সংবাদ সম্মেলন শেষে তারা শুক্রবার বিকেল তিনটা ২০ মিনিটের দিকে বাড়িতে পৌঁছান। বাড়িতে যাওয়ার আগেই আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান ও দেয়াড়া ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন তাকে মোবাইল করে সংবাদ সম্মেলনের নিউজ বন্ধ করার জন্য বলেন। নিউজ ছাপা হলে বিপদ আছে বলে জানানো হয়। এ ছাড়াও তার ওপর নানা মহল থেকে হুমকি আসতে থাকে। শুক্রবার বিকেল তিনটা ২৫ মিনিটে খোরদো পুলিশ ফাঁড়ির সহকারি উপপরিদর্শক এজাজ মাহমুদ ও সহকারি উপপরিদর্শক তারিকুল ইসলামসহ কয়েকজন পুলিশ বাড়িতে আসে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আত্মগোপন করে আনিছুরের ছেলে ও স্ত্রী। পুলিশ এসেই ইয়াবা আছে বলে ঘর তল্ল¬াশি করবে বলে হুমকি দেয়। আনিছুরের স্ত্রীকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে আনিছুরের মেয়ে রিমা এজাজ মাহমুদকে উদ্দেশ্য করে বলে, আপনিই তো আমার বাবাকে প্রকাশ্য দিবালোকে ধরে নিয়ে গুলি করে মেরে ফেলেছেন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান দলবল নিয়ে এসে সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদ জানাতে বলেন। একইভাবে শনিবার সকালেও আব্দুল মান্নান একটি কাজজে প্রতিবাদ লিখে তাতে সই দিতে বলার জন্য বলেন। এমতাবস্থায় তাদের পরিবারের সদস্যদের আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে। ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, একজন মাদক ব্যবসায়ির মৃত্যু নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয় বলে তিনি অজিয়ারকে জানিয়েছেন।
দেয়াড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, তিনি আনিছুরকে ক্রসফায়ারে দিয়েছেন মর্মে প্রচার দেওয়ায় অজিহারের বাড়ি যেয়ে তিনি প্রতিবাদ করেছেন। একজন মাদক ব্যবসায়ির কারণে সমস্যা বাড়ছে বলে তাকে ক্রসফায়ারে দিয়ে পুলিশ কোন অন্যায় করেনি। কয়েকজন সাংবাদিক বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে খরচ করে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছে বলে অজিয়ার তাকে জানানোয় তিনি প্রতিবাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
জানতে চাইলে খোরদো পুলিশ ফাঁড়ির সহকারি উপপরিদর্শক এজাজ মাহমুদ বলেন, শুক্রবার বিকেলে তারা কয়েকজন অজিয়ারের বাড়িতে গিয়ে তাদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়েছেন। তল্লাশি বা হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঠিক নয়। সংবাদ সম্মেলনে ওজিয়ার রহমান ও তার পরিবারের দেওয়া বক্তব্য বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ফলে আনিছুরের মৃত্যুর ঘটনা দেশব্যাপি আলোচনায় নতুন মাত্রা পায়।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …