মানবাধিকার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব: মানবাধিকার কমিশন

ক্রাইমবার্তা রিপোট:ঢাকা : বিদেশফেরত নারীদের পাশে রাষ্ট্রসহ সবাইকে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, বাংলাদেশি নারীদের কেন গৃহকর্মী হিসেবে বিদেশে পাঠাতে হবে, যেখানে তাঁরা নিরাপদ নন? প্রত্যেক মানুষের মানবাধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। এটা সরকারের দায়িত্ব।

সোমবার সকালে ব্র্যাক সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সরকারের কাছে এ প্রশ্ন রাখেন। বেসরকারি সংস্থা- ব্র্যাক এবং লেদার-গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) যৌথ উদ্যোগে বিদেশফেরত নারীদের সহায়তা ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘বিদেশফেরত নারীদের আর কত কান্না আমরা শুনব? মধ্যপ্রাচ্যে নারীরা শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা যখন নারী কর্মী পাঠানো কমিয়ে দিচ্ছে, কেন আমরা গৃহকর্মী পাঠাচ্ছি? গৃহকর্মে তো মানুষ নিরাপদ নয়। আর সৌদি আরবে তো তারা পরিবার-পরিজনের সঙ্গে কথা বলতেও পারে না।’

কাজী রিয়াজুল হক বলেন, মানুষ তো পণ্য নয়। প্রত্যেক মানুষের মানবাধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। এটা সরকারের দায়িত্ব। দেশের ভেতর যদি শুধু পোশাক খাতেই ৪০ লাখ নারীর কাজ করতে পারেন, তাহলে কেন বিদেশে গৃহকর্মী পাঠাতে হবে? মানুষের যদি অধিকার নিশ্চিত না হয়, তাহলে কোনো উন্নয়নে কাজ হবে না। নারী কর্মী পাঠানোর আগে অবশ্যই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

বিদেশফেরত নারীদের পাশে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সবাইকে থাকার আহ্বান জানিয়ে কাজী রিয়াজুল হক বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কথা শুনতে হবে। শুধু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কেন সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরবে বিপদে পড়া এবং ফেরত আসা এই নারী কর্মীদের সহায়তা দিতে জরুরি সহায়তা কর্মসূচি নিয়েছে ব্র্যাক। ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল ইসলাম হাসান এর যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ থেকে যেসব নারী বিদেশে কাজ করতে যান, অধিকাংশই দরিদ্র। ভাগ্যবদলের আশায় বিদেশে যাওয়া এই নারীদের অনেকেই শূন্য হাতে ফেরত আসছেন। শরীরে তাদের নির্যাতনের ক্ষত, অনেকে বিপর্যস্ত। বিমানবন্দর থেকে তাদের অনেকের বাড়ি যাওয়ার খরচও থাকছে না। ব্র্যাক তাদের বাড়ি যাওয়ার খরচের পাশাপাশি সাময়িকভাবে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, মনোসামজিক কাউন্সেলিং প্রদান করছে। তবে ফিরে আসা বেশ কয়েকজন নারী কর্মী মানসিক সংকটে পড়ছেন। অনেকে পরিবারে ফিরতে পারছে না বা পরিবার নিতেও চাচ্ছে না। সমাজও তাদের স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে না। এর ফলে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসা নারীরা পারিবারিক ও সামাজিকভাবে ফের ঝুঁকিতে পড়ছেন। অথচ তারা যখন বিদেশ থেকে টাকা পাঠান, সবাই সেটা গ্রহণ করেন।

আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে বিদেশে ফেরতদের পুনরেকত্রীকরণে ব্র্যাক ও এলএফএমইএবির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এলএফএমইএবির পক্ষে সভাপতি মো. সায়ফুল ইসলাম এবং ব্র্যাকের পক্ষে অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল ইসলাম হাসান এতে স্বাক্ষর করেন।

বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৫৭৫ জন নারী কর্মরত আছেন। তাদের মধ্যে সৌদি আরবে গেছেন ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৩১ জন নারী। বিশেষ করে ২০১৫ সালে সমঝোতা হওয়ার পর দুই লাখের বেশি নারী বিদেশে গেছেন। তাদের অনেকেই সংকটে পড়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তবে এ পর্যন্ত চাকরি শেষ করে বা প্রতারণার শিকার হয়ে কতজন নারী শ্রমিক দেশে ফেরত এসেছে তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য কারও কাছে নেই।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত তিন বছরে প্রায় পাঁচ হাজার নারী ফেরত এসেছেন। এর মধ্যে অন্তত এক হাজার ফিরেছেন চলতি বছরই। চলতি বছরের মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত শুধু সৌদি আরবের রিয়াদের ইমিগ্রেশন ক্যাম্প থেকে দেশে ফিরেছেন ৩৬০ জন নারী কর্মী।

একই ধরনের নির্যাতনের শিকার নারী কর্মীকে নিরাপদে দেশে ফেরত আনার জন্য ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম থেকে ১২৫ জনের জন্য লিখিত আবেদন করা হয় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে ৯০ জন কর্মী নিরাপদে দেশে ফিরেছেন আর বাকিরা দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন।

বিদেশে ফেরত নারীদের সমস্যা সমাধানে ব্র্যাকসহ অভিবাসন নিয়ে কাজ করা ১১টি সংগঠন সোমবার সকালে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব নমিতা হালদারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নারীদের নিরাপত্তা রক্ষায় কয়েকটি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরেছে। এর মধ্যে রয়েছে সংকট সমাধানে সৌদি আরবসহ বিদেশে কাজ করতে যাওয়া প্রতিটি নারী শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে গন্তব্য দেশের আইন অনুযায়ী আইনি সুরক্ষা, নির্যাতনকারীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা, ক্ষতিপূরণ, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রাপ্য মজুরি নিশ্চিত করা, পুনরেকত্রীকরণের ব্যবস্থা।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।