ক্রাইমবার্তা রিপোট:রাজপথের আন্দোলন, আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং প্রার্থী চূড়ান্তকরণসহ সাংগঠনিক বেশ কিছু বিষয়ে দলের আগামীদিনের কর্মকৌশল চূড়ান্ত করতে লন্ডনে গেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই তাকে লন্ডনে ডেকে পাঠিয়েছেন। গত শনিবার লন্ডনে পৌঁছার পর দুই দফায় তারেক রহমানের সাথে বিএনপি মহাসচিবের সাক্ষাত হয়েছে। রোববার যুক্তরাজ্য বিএনপির একটি অনুষ্ঠানেও অংশ নিয়েছেন দলের গুরুত্বপূর্ণ এই দুই নেতা।
বিএনপির সূত্রমতে, আগামী নির্বাচন ও আন্দোলন নিয়ে বিএনপি, ২০-দলীয় জোট, রাজনৈতিক সমমনা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নানা ধরনের মত রয়েছে। এসব মত ভিন্ন ভিন্ন হলেও নানা কারণে যৌক্তিক। তবে সবার মত গ্রহণ করার সুযোগও নেই। সঙ্গত কারণে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মকৌশল ও দিনক্ষণ ঠিক করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে বিএনপি। এ জন্য উদ্ভূত সব বিষয়ে সরাসরি আলোচনা করতেই সংক্ষিপ্ত সফরে লন্ডনে গেছেন মির্জা ফখরুল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রশাসনিক জটিলতা ও নেতা-কর্মীদের কৌতুহল এবং তদবিরের বিষয়টি মাথায় রেখে মির্জা ফখরুলের লন্ডন যাওয়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি বিএনপি। গত ৪ জুন প্রথমে বিএনপি মহাসচিব ব্যাংককে যান। এরপর সেখান থেকে ৯ জুন লন্ডনে পৌঁছান তিনি।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কথা বলে আভাষ পাওয়া গেছে, নির্বাচনের আগে তারা একটি ‘ওয়ান টাইম মুভমেন্ট’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন। নির্বাচন কমিশন অক্টোবর নাগাদ জাতীয় নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করার কথা বলেছে। বিএনপির আন্দোলন সেই তফসিল ঘোষণার মাসখানেক আগে শুরু হতে পারে। এর প্রস্তুতি হিসেবে দ্রুত দল গোছানো হচ্ছে। রোজার ঈদের পর বিএনপি প্রধানের কারামুক্তির দাবির পাশাপাশি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। ২০-দলীয় জোটকেও বিএনপি ‘কারামুক্তি ও সুষ্ঠু নির্বাচন’ এই যুগপৎ দাবিতে মাঠে নামাতে চায়।
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপি মহাসচিব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে আন্দোলনের সম্ভাব্য সময় চূড়ান্তকরণের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে বিএনপির মাঠের অবস্থা, ৩০০ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা, মাঠ জরিপ, আগ্রহী প্রার্থীদের কার অবস্থা কেমন, ২০-দলীয় জোটের চাহিদাসহ নির্বাচনকেন্দ্রিক একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে নিয়ে গেছেন। যাতে আগামীতে ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ে তেমন অসুবিধায় পড়তে না হয়। এ ছাড়া আন্দোলনে যাওয়ার আগে দলের সাংগঠনিক সর্বশেষ অবস্থাও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অবহিত করেন মহাসচিব। দলীয় বিষয় ছাড়াও ২০-দলীয় জোটের বাইরে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর জোটে অন্তর্ভুক্তি বা যুগপৎ আন্দোলন নিয়ে যেসব প্রস্তাব রয়েছে, সেসব বিষয়েও শীর্ষ দুই নেতা আলোচনা করেন বলে জানা গেছে। মহাসিচবের সাথে আলোচনায় খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করতে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি আগামীতে রাজনৈতিক কর্মসূচির ছক কেমন হবে, সে বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও সুনির্দিষ্ট পথনির্দেশিকা দিয়েছেন বলে সূত্রগুলো বলছে। জানা গেছে, তারেক রহমানের সাথে আরো একাধিকবার বৈঠক করে ঈদের আগেই দেশে ফিরবেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, সংসদ ভেঙে দেয়া ও সেনা মোতায়েনসহ কয়েকটি মৌলিক প্রশ্নে সমঝোতা করেই বিএনপি নির্বাচনে যেতে চায়। আর এটি আন্দোলনের মধ্য দিয়েই হতে পারে। আর সেটা দ্রুত সময়ের মধ্যেই শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। সেই দিনক্ষণ শিগগিরই চূড়ান্ত করবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দল পরিচলায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছেন। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করতে আইনী লড়াইয়ের পাশাপাশি আগামী দিনে দলের রাজনৈতিক গতি-প্রকৃতি কোন পথে এগুবে, তা নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিনিয়র নেতাদের সাথে প্রতিনিয়িতই শলাপরামর্শ করছেন। তিনি একটি কঠোর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে নিয়ে যেতে চান বলে জানা গেছে।