স্টাফ রিপোর্টার : দলের চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাকর্তৃপক্ষের অবহেলার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল রোববার সাড়ে ১১ টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এসময় কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে তার পছন্দমতো হাসপাতালে ভর্তির দাবি জানান তিনি।
রিজভী অভিযোগ করেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল গত শনিবার বলেছেন, কারাগারে তিনি (খালেদা জিয়া) যে পড়ে গিয়েছিলেন সেই সম্পর্কে কারা কর্তৃপক্ষ অবগত নয়। দেশনেত্রীর চিকিৎসা ও অসুস্থতা নিয়ে যে কতটা অবহেলা করা হচ্ছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে তা পরিষ্কার হয়েছে। তিনি বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে বলেই খালেদা জিয়ার গুরুতর শারীরিক অসুস্থার বিষয়ে ভ্রুক্ষেপহীন থেকেছে- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে সেটিই প্রমাণিত হলো।
রিজভী বলেন, দেশনেত্রীর স্বাস্থ্যের অবস্থা জেনে শুধু বিএনপিই নয় সারাদেশবাসীও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিক বেগম জিয়ার চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা না করে সরকার বা কারাকর্তৃপক্ষ ‘বিষয়টি এখনও অবগত নয়’ বলে যা বলা হয়েছে তা দেশনেত্রীর অসুস্থতাকে আরও গুরুতর করে তাকে রাজনৈতিক ময়দান থেকে সরিয়ে দেয়ার সুগভীর চক্রান্ত কি না তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দেশনেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে টালবাহানারই নামান্তর। গুরুতর অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও এখনও তাকে (খালেদা জিয়া) নিজের পছন্দ অনুযায়ী বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি না করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিজি হাসপাতালের কথা বলছেন।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, দেশনেত্রীর ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তার যেসব পরীক্ষা নিরীক্ষার সুপারিশ করেছেন সেগুলো পিজিতে সম্ভব নয়। অতীতেও আওয়ামী লীগের সভানেত্রীসহ অনেক নেতাকে কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হয়েছে। তাহলে বেগম খালেদা জিয়াকে তার পছন্দ মতো চিকিৎসা করতে না দেয়া একজন বন্দীর প্রতি চরম মানবধিকার লঙ্ঘন নয় কী ?
তিনি আরও বলেন, দেশনেত্রীর সঙ্গে শনিবার সাক্ষাৎ শেষে ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা বেদনাদায়ক। তারা বলেছেন, ৫ই জুন দেশনেত্রী দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন। সেখানে ৫-৭ মিনিট তিনি অজ্ঞান ছিলেন। বর্তমানে তার যে শারীরিক অবস্থা তাতে দ্রুত চিকিৎসা না দিলে বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
রিজভী বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা যেসব সুপারিশ করছেন, এমনকি আগেও সরকারি মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা যেসব পরামর্শ দিয়েছিলেন সেগুলোও বাস্তবায়ন করা হয়নি। তিনি বলেন, অবিলম্বে দেশনেত্রীকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা না দিলে তার বড় ধরণের ক্ষতি হলে এর দায় দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি জানাচ্ছি- অতিদ্রুত ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করে দেশনেত্রীকে চিকিৎসার সুযোগ দিন, ঈদের আগেই তাকে মুক্তি দিন। তিনি বলেন, আমরা বিএনপির নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে দেশনেত্রীর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে সরকারের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
সরকারের প্রতি হুশিয়ারি দিয়ে রিজভী বলেন, অবিলম্বে তার মুক্তি ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে রাজপথ হবে অগণিত মানুষের শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত। তীব্র আন্দোলনের শপথ নিয়ে জাতীয়তাবাদী শক্তি অল্পসময়ের মধ্যেই রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়বে। স্বার্থান্ধতা, ঔদ্ধত্য, অসহিষ্ণুতা, সন্ত্রাস ও আকন্ঠ দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষ আর অলস বসে থাকবে না। আমরা সরকারের উদ্দেশ্যে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই-দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তি ও চিকিৎসা নিয়ে যে নির্মমতা প্রদর্শন করা হচ্ছে তাতে ক্ষমতাসীনদের জন্য রাজনীতির ময়দান শান্ত, নিরাপদ ও সুখময় হয়ে উঠবে না। সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে জনগণকে আর কাবু করা যাবে না। দিল্লীর আয়নায় বিশ্বকে দেখতে গিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ প্রতিবেশীর পদতলে ঠেলে দিয়ে সরকার নিজেকে নির্ভার মনে করলেও কোন লাভ হবে না। নিজ দেশবাসীর অধিকারকে বিপন্ন করে জনগণের স্বার্থ যারা বিকিয়ে দেয় তাদের পরিণতি হয় ভয়াবহ।
