সাখাওয়াত উল্যাহ: পবিত্র ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে নিরাপদ কেনাকাটায় নজিরবিহীন নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। গোটা সাতক্ষীরা শহরকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেয়া হয়েছে। নিরাপদে নির্বিঘেœ স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটা করছেন সাধারণ মানুষ। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে কেনাকাটা। দূর-দূরান্ত থেকে শহরে ঈদের কেনাকাটার জন্য আসছেন মানুষ। পরিবার পরিজন নিয়ে শহরের বিপনী বিতানগুলোতে কেনাকাটার ধুম পড়েছে। চির চেনা সাতক্ষীরা শহরের রূপ যেনো জন সমুদ্রে পরিণত হয়েছে। আর এ জন¯্রােত নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশের ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করতে হচ্ছে। তবুও ঈদ হোক নিরাপদ অনাবিল আনন্দের-এমনটি নিশ্চিত করতে পুলিশ বিরামহীনভাবে কাজ করছে। বিশেষ বিশেষ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তাছাড়া ছিনতাই, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি প্রতিরোধে নামানো হয়েছে সাদা পোশাকের টিম। গোটা শহরকে সিসি টিভির আওতায় আনা হয়েছে। শহরের কোথাও কোনো অপরাধ করে অপরাধীকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। অপরাধিকে শনাক্ত করতে, শহরবাসিকে যানজটমুক্ত করতে এবং আইন-শৃংখলা রক্ষার্থে পুলিশ প্রশাসন শহরের ৪৭টি পয়েন্টে ১২৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছে।
পবিত্র ঈদকে সামনে রেখে পকেটমার, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে শহরের প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এমনকি শপিং সেন্টার ও বড় বড় দোকানের সামনে পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে। জেলা পুলিশের সিসি টিভি সার্ভিলেন্স কন্ট্রোল রুম এন্ড অপারেশন কক্ষে সার্বক্ষণিক ৩ জন কর্মকর্তা তদারকি করছেন।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক (ডিআইও-১) মো. আজম খান দৈনিক পত্রদূতকে জানান, শহরবাসিকে বিশেষ করে ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্বার্থে শহরে ৪ স্তরের নিরপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথমত: সকাল ৯টার পূর্বেই ট্রাফিক পুলিশের ৪০ জন সদস্য শহরের ২০টি পয়েন্টে ২জন করে শহরের যানজট মুক্ত করার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এ দলটি বেলা আড়াইটা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করছেন। পরবর্তী দলটি বেলা আড়াইটা থেকে রাত্র ১০টা পর্যন্ত রাস্তায় থাকছে। দ্বিতীয় স্তরে শহরের শপিং মল বা শপিং সেন্টার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহে দুই শিপটে ২৪জন ফোর্স সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিরাপত্তার দ্বায়িত¦ পালন করছে। তৃতীয় স্তরে গোয়েন্দা পুলিশের ৩টি জিপ গাড়ি শহরে সার্বক্ষণিক মোবাইল পেট্রোলিং করছে। চতুর্থ স্তরে জেলা গোয়েন্দা সংস্থার ২৪ জন সদস্য দুই শিপটে সাধারণ পোশাকে ক্রেতা বেশে শহরের বিভিন্ন স্থানের খবরাখবর নিচ্ছেন। আজম খান আরো জানান, পুলিশ সুপার মো. সাজ্জাদুর রহমান হঠাৎ করেই শহরে কি ঘটছে তা দেখার জন্য সিসি টিভি কন্ট্রোল রুমে যেয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন আর এ জন্য তিনি মো. আজম খানকে প্রধান করে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন।
এদিকে সাতক্ষীরা থানা সড়কের কাপড় ব্যবসায়ি ইসাহক আলী জানান, বিগত বছরগুলোতে বাজারের মধ্যে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হতো। কিন্তু এবার পুলিশের উপস্থিতি ও তদারকিতে তেমন কোন যানজট সৃষ্টি হচ্ছে না। শহরের মোড়ে মোড়ে পুলিশ থাকায় শিশু-কিশোর-নারী-পুরুষ সব শ্রেণির মানুষ নিরাপদে নির্বিঘেœ যাতায়াত করতে পারছেন। সাতক্ষীরা রুপালি ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মহানন্দ কুমার মন্ডলজানান, বিগত বছরগুলোতে অনেক ছিনতাইকারী বিভিন্ন ব্যাংকে ঢুকে অভিনব কায়দায় গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা ছিনতাই করতো। কিন্তু এবার সাতক্ষীরাতে পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতি, মোড়ে মোড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকায় এবার কোনরূপ দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তাছাড়া প্রত্যেক ব্যাংকেই এখন নিজস্ব সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা আছে। শহরের মেহেরুণ প্লাজা মার্কেটের সামনে কথা হয় মীর শাহরিয়ার নামক এক ক্রেতার সাথে। তিনি তার পরিবার পরিজনকে নিয়ে ঈদের বাজার করে বাড়ি যাচ্ছিলেন। তিনি জানান, বিগত বছরগুলোতে রমজান মাসে শহরে প্রায় পকেটমার, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই সংঘঠিত হতো। কিন্তু এবার সমস্ত শহর জুড়ে পুলিশের বিভিন্ন ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে কোনরূপ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সাতক্ষীরা নিউ মার্কেটের স্বর্ণ ব্যবসায়ি আল-বারাকা জুয়েলার্স-১এর স্বত্তাধীকারী কামরুজ্জামান বুলু দৈনিক পত্রদূতকে জানান, নিউ মার্কেট মোড় বিভিন্ন শপিং সেন্টারসহ শহর জুড়ে পুলিশের এমন টহল আগে কখনো দেখা যায়নি। যে কারণে ব্যবসায়ি মহল বর্তমানে স্বস্তিতে রয়েছে। একই চিত্র দেখা গেছে চায়না বাংলা শপিং সেন্টার, বসুন্ধরা সিটি মার্কেট, আল বারাকা ব্রান্ড সিটি মার্কেট, বাজার কোলকাতা, বড়বাজার, শহীদ নাজমুল সরণী, শহীদ কাজল সরণীসহ বিভিন্ন সড়কের উপর অস্থায়ী দোকানগুলোতেও বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মারুফ আহমেদ দৈনিক পত্রদূতকে জানান, পুলিশ সুপারের নির্দেশে পবিত্র ঈদকে সামনে রেখে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ করছে। এতে করে শহরে রোববার পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পুলিশের পক্ষ থেকে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরণের ব্যবস্থা বলবত থাকবে বলে জানান তিনি।
Check Also
বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেবহাটায় মানববন্ধন
দেবহাটা প্রতিনিধি: স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার এবং বিএনপির …