সরকারি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার আপত্তি যে কারণে

ক্রাইমবার্তা রিপোট:  বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী নন, এ কথা জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ এর আগে জানিয়েছিল যে খালেদা জিয়া রাজি থাকলে আজ (মঙ্গলবার) তাকে কারাগার থেকে ঢাকার শাহবাগে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে। সেজন্য নিরাপত্তার যাবতীয় প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছিল।

কিন্তু বেলা ১০টার দিকে কারাগার থেকে বেরিয়ে কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঢাকার গুলশানে অবস্থিত বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোথাও চিকিৎসা নিতে রাজি নন খালেদা জিয়া।

সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আজকে ১১টার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে নিয়ে যাবার কথা ছিল। সম্পূর্ণ পরিকল্পনা আমরা গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু তিনি (খালেদা জিয়া) অনীহা প্রকাশ করেছেন।”

“উনি বলেছেন যে ইউনাইটেড হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোথাও চিকিৎসা নেবেন না” – বলেন তিনি।

কারা মহাপরিদর্শক বলেছেন, কারা বিধি অনুযায়ী দেশের সর্বোচ্চ হাসপাতাল হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধা সেখানে না থাকলে বেসরকারি হাসপাতালে করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করেন কারা মহাপরিদর্শক। সেক্ষেত্রে ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের’ নির্দেশনা কিংবা অনুমোদনের প্রয়োজন আছে বলে তিনি জানান।

এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, কারাবন্দীদের বিশেষায়িত বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার অনেক রেকর্ড রয়েছে অতীতে। এটা নতুন কিছু নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

“ওয়ান ইলেভেনের সময় আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কারাগার থেকে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছিল। আব্দুল জলিলকে ল্যাব এইডে নেয়া হয়েছিল। অনেক নেতাদের বারডেম হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল,” – বলেন মি: হোসেন।

তিনি বলেন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে তাদের উদ্বেগ বাড়ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসার বিষয়ে সরকারের মন্ত্রীরা যেসব যুক্তি তুলে ধরছেন, সেটিকে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন না বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যেসব মন্ত্রীরা এ কথা বলছেন, তারা অসুস্থ হলে বিএসএমএমইউতে যান কী-না? তারাও তো ঢাকায় চিকিৎসা নিলে ইউনাইটেড, স্কয়ার কিংবা অ্যাপোলোতে যান।”

যে দুইজন চিকিৎসক কয়েকদিন আগে খালেদা জিয়াকে কারাগারে দেখতে গিয়েছিলেন তাদের একজন অধ্যাপক সৈয়দ ওয়াহিদুর রহমান। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোলজিস্ট এবং খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের অন্যতম।

অধ্যাপক রহমান বলেন, খালেদা জিয়ার বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে – রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ অন্যতম। চিকিৎসক মি. রহমান বলেন, খালেদা জিয়ার প্রস্রাবে বারবার সংক্রমণ হচ্ছে, কিডনি দুর্বল হয়ে গেছে এবং রাতে জ্বর আসে।

“ওনার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার। যেমন ধরুন – এমআরআই করা দরকার। ওনার দুই হাঁটুতেই আর্টিফিশিয়াল প্রসথেসিস করা আছে যেটা নরমাল এমআরআই মেশিনে হবে না। এখানে সরকারি-বেসরকারি ব্যাপার না। বিষয় হচ্ছে পরীক্ষাগুলো এমন এক জায়গায় করতে হবে যাতে সবকিছু একসাথে করা যায়। বিএসএমএমইউতে ঐ ধরণের এমআরআই মেশিন নাই। এটা সমস্যা হবে,” – বলছিলেন অধ্যাপক রহমান।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যেহেতু ইউনাইটেড হাসপাতালে অনেক আগে থেকেই চিকিৎসা করতেন। সেজন্য সেখানকার চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার যেমন পরিচিত, তেমনি পরিবেশেও পরিচিত বলে মি. রহমান উল্লেখ করেন।

“পেশেন্টের (রোগীর) চয়েস তো সারা পৃথিবীতে আছে। ঢাকা শহরে ১০০টা হার্টের ডাক্তার আছে। আমি তো সব ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করছি না। আমার হার্টের অসুবিধা হলে আমি সবসময় যার কাছে যাই, তার কাছেই যাব।”

চিকিৎসক অধ্যাপক রহমান বলেন, খালেদা জিয়া ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে চান দুটো কারণে। প্রথমত: সে হাসপাতালের পরিবেশ এবং চিকিৎসকরা তাঁর পরিচিত, দ্বিতীয়ত: খালেদা জিয়ার প্রয়োজনীয় সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা সে হাসপাতালে একসাথে করা সম্ভব।

এদিকে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ইউনাইটেড হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার আবেদন জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করলেও সেটি নাকচ করে দিয়েছেন তিনি।

এ আবেদনকে অযৌক্তিক হিসেবে বর্ণনা করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তবে খালেদা জিয়াকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

খালেদা জিয়া ‘মাইল্ড স্ট্রোকে’ আক্রান্ত হয়েছেন – এ কথা চিঠিতে উল্লেখ করে শামীম ইস্কান্দার লিখেছেন, “ভবিষ্যতের জন্য এ ধরণের বিষয় বড় রকমের ঝুঁকির পূর্বাভাস বহন করছে।” ইউনাইটেড হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সব ব্যয়ভার তিনি বহন করবেন বলে নিশ্চয়তা দেন।

Check Also

৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।