আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা জেলা ব্যাপি ঈদের আমেজ বিরাজ করছে। কেনা কাটা শেষ পর্যায়। দু’এক দিন পরেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। তাই চলছে ঈদ মাঠের শেষ প্রস্তুতি। জেলার ঈদগা ময়দান সমূহ নামাজের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঈদের দিন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা থাকায় মসজিদ গুলো ঈদ নামাজের জন্য প্রস্তুত রখা হয়েছে। জেলার ১৬ লক্ষাধীক ধর্মপ্রাণ মুসলমান পবিত্র ঈদুল ফিতর উৎসবে মেতে উঠেছে।
প্রধান প্রধান সড়কসহ ঈদগা ময়দানের প্রধান ফটকে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে ঈদ কার্ড বিতরণ, দেওয়ালে পোষ্টার সাটানো সহ ভোটারদের মণ আকৃষ্ট করতে নানা মুখি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। গরীব ,অসহায় ও দুস্থদের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। যদিও না পাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে অনেকের। নির্বিগ্নে ঈদ উৎযাপন করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা মুখি উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা জানিয়েছে। সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস বলছে চলতি সম্পাহ ব্যাপি মাঝারি পর্যায়ে বৃষ্টি পাত হতে পারে। সকাল ১১টা পর বৃষ্টিপাতের সম্ভবনা বেশি বলেও আবহাওয়াবিদ জানান।
সব মিলিয়ে ঈদের দিন বৃষ্টি না হলে আনন্দের বন্যায় ভাসবে জেলা বাসি।
সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান, সরকারি কলেজ মসজিদ ঈদগাহ ময়দান, সাতক্ষীরা আলিয়া মাদরাসা ,সাতক্ষীরা পাওয়ার হাউজ জামে মসজিদ,মধ্যকাটিয়া মুছা মসজিদ,আল মদিনা জামে মসজিদ , মাছখোলা মধ্যপাড়া জামে মসজিদ,সাতক্ষীরা থানা মসজিদ ,লস্কারপাড়া ঈদগাহ ময়দান , পুরতান সাতক্ষীরা বদ্দীপুর কলোনী আল আমান জামে মসজিদ, রাজার বাগান দারুস সালাম জামে মসজিদ , কামালনগর ঈদগাহ ময়দান, জমঈয়তে আহলেহাদীস পিএন স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গন,সদর থানা জামে মসজিদ সহ বিভিন্ন মসজিদে ঈদের নামাযের সময়সূচিও নির্ধারণ করা হযেছে। কয়েক জন ইমামের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
সারা বিশ্বের মত সাতক্ষীরাতেও পবিত্র ঈদুল ফিতর অনাবিল আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। ঈদ মুসলিম উম্মাহর জাতীয় উতৎসব। ঈদুল ফিতরের দিনটি প্রতিটা মুসলমান নারী ও পুরুষের জীবনে অশেষ তাৎপর্র্য ও মহিমায় অনন্য। ঈদুল ফিতর প্রতি বছর ধরণীতে এক অনন্য-বৈভব বিলাতে ফিরে আসে। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস মাহে রমজানের মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার শেষে শাওয়ালের বাঁকা চাঁদ উকি দিচেচ্ছ পরম আনন্দ ও খুশির বার্তা নিয়ে। সিয়াম পালনের দ্বারা রোজাদার যে পরিচ্ছন্নতার ও পবিত্রতার সৌকর্য দ্বারা অভিষিক্ত হন, যে আত্মশুদ্ধি, সংযম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, উদারতা, বদান্যতা, মহানুভবতা এবং মানবতার গুণাবলি দ্বারা উদ্ভাসিত হন, এর গতিধারার প্রবাহ অক্ষুণ্ন রাখার শপথ গ্রহণের দিন হিসেবে ঈদুল ফিতর আমাদেও মাঝে সমাগত । এদিনে যে আনন্দধারা প্রবাহিত হয় তা অফুরন্ত পুণ্য দ্বারা পরিপূর্ণ। নতুন চাঁদ দেখামাত্র রেডিও-টিভি ও পাড়া-মহল্লার মসজিদের মাইকে ঘোষিত হবে খুশির বার্তা ‘ঈদ মোবারক’। সেইসঙ্গে চারদিকে শোনা যাবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত রোজার ঈদের গান : ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ/ তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানি তাগিদ’…।
বছরজুড়ে নানা প্রতিকূলতা, দুঃখ-কষ্ট, বেদনা সব ভুলে এ ঈদেও দিনেই মানুষ মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিলিত হয়। তাদের আশা পেছনের সব গ্লানি বিস্মৃতি হবে এ দিনে। ঈদগাহে কোলাকুলি সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, ভালোবাসার বন্ধনে সবাইকে নতুন করে আবদ্ধ করবে। এ দিন সাধ্যমতো নতুন পোশাকে আনন্দের আবির মেখে পথে নামে মানুষ। এর-ওর বাসায় দাওয়াত খাওয়া ও আড্ডা দেওয়ার ধুম পড়ে যায়। ঈদ এমন এক নির্মল আনন্দের আয়োজন, যেখানে মানুষ আত্মশুদ্ধির আনন্দে পরস্পরের মেলবন্ধনে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং আনন্দ সমভাগাভাগি করে। মুসলিমেদের ধারণা মাহে রমজানের এক মাসের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নিজেদের অতীত জীবনের সব পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হতে পারার পবিত্র অনুভূতি ধারণ করেই পরিপূর্ণতা লাভ করে ঈদের খুশি।
ঈদের দিনে ধনী-গরিব, বাদশা-ফকির, মালিক-শ্রমিক নির্বিশেষে সব মুসলমান এক কাতারে ঈদের নামাজ আদায় ও একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করে সাম্যের জয়ধ্বনি করেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘যারা ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য ময়দানে একত্রিত হয়, আল্লাহ তাআলা তাদের সম্পর্কে ফেরেশতাদের জিজ্ঞাসা করেন, যারা স্বেচ্ছায় দায়িত্ব পালন করে আজ এখানে উপস্থিত হয়েছে তাদের কী প্রতিদান দেওয়া উচিত? ফেরেশতারা বলেন, তাদের পুণ্যময় কাজের সম্পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়া উচিত। তখন আল্লাহ তাআলা তাঁর মর্যাদার শপথ করে বলেন, অবশ্যই তিনি তাদের প্রার্থনা কবুল করবেন। এরপর আল্লাহ তাআলা ঈদের নামাজ সমাপনকারী তাঁর নেক বান্দাদের উদ্দেশে ঘোষণা করেন, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। আর তোমাদের কৃত অতীত পাপকে পুণ্যে পরিণত করে দিয়েছি।’
নবী করিম (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘‘ঈদুল ফিতরের দিন ফেরেশতারা রাস্তার মুখে মুখে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে থাকেন হে মুসলিম! নেককাজের ক্ষমতাদাতা ও সওয়াবের আধিক্যদাতা আল্লাহর কাছে অতি শিগগির চলো। তোমাদেরকে রাতে ইবাদত করার হুকুম করা হয়েছিল, তোমরা তা করেছ, দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তোমরা তা পালন করেছ। তোমরা তোমাদের সৃষ্টিকর্তাকে খাইয়েছ,আজ তার পুরস্কার গ্রহণ করো। অতঃপর মুসলমানরা যখন ঈদের নামাজ পড়ে তখন একজন ফেরেশতা উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করেন তোমাদেরকে তোমাদের সৃষ্টিকর্তা ক্ষমা করে দিয়েছেন। এখন তোমরা তোমাদের পুণ্যময় দেহ-মন নিয়ে নিজ নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করো। এদিনটি পুরস্কারের দিন, আকাশে এই দিবসের নাম ‘উপহার দিবস’ নামে নামকরণ করা হয়েছে।’’ (তাবারানী)