সাতক্ষীরায় ঈদকার্ডের শুভেচ্ছা এখন ডিজিটাল মাধ্যমে

আসাদুজ্জামান সরদার: রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ আপনাকে তুই বিলিয়ে আজ দে শোন্ আসমানী তাগিদ।… একমাস সিয়াম সাধনার পর রমজানের ঐ রোজার শেষে গানটির ব্রত নিয়ে দুশমনের সাথে হাত মিলাতে বা প্রিয় বন্ধুকে আরো প্রিয় করে নিতে ঈদ কার্ডের চলন এক সময় ছিল ব্যাপক। কিন্তু সময়ের বির্বতনে ডিজিটাল মাধ্যমে শুভেচ্ছা আদান প্রদান বাড়ছে ব্যাপক হারে। শুভেচ্ছা জানানোর নতুন মাধ্যম হিসেবে যুক্ত হয়েছে মোবাইলফোন এসএমএস। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ঈদে প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধকে শুভেচ্ছা জানাতে সনাতনি ঈদ কার্ডের ব্যবহার কমে গেছে। সেই জায়গা নিয়ে নিয়েছে ভাচুর্য়াল ঈদ কার্ড বা ই-কার্ড। তাই চারদিকে কেবল ই-কার্ডেল জয়জয়কার। তবে ঈদ কার্ড পাঠানোর এ মৌসুমে ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বসবাসকারীরা অনলাইন ব্যাবহারকারীরা সবাই ঝুঁকছে ই-কার্ডের প্রতি।
কষ্ট কমিয়ে কম্পিউটার, ল্যাপটপ না হয় হাতের ট্যাবটা খুলে কোনও একটা ই-কার্ডের সাইটে ঢুকে কার্ড পছন্দ করে পাঠিয়ে দেওয়া কাক্সিক্ষত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের ই-মেইল ঠিকানায়। আর তা না হলে, হাতে সময় থাকলে নিজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন দারুণ সব ই-কার্ড। ঈদের মাত্র কয়দিন বাকী হাতে সময় নেই একদমই। ঈদ উপলক্ষে ভার্চুয়াল আয়োজন নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে বেশ কিছু ওয়েবসাইট। এমনকি ফেসবুকও। যে কোনও বিশেষ দিনে বা উৎসবে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য বিভিন্ন ডিজাইনের ই-কার্ড পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন সাইটে। সার্চ ইঞ্জিন গুগুলে গিয়েও ই-কার্ড সাইট লিখে খুঁজলে পাওয়া যাবে অগুণতি সাইটের ঠিকানা।
একটা সময় ছিলো যখন মানুষ ঈদ কার্ডের মাধ্যমে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাতো। এখন ঈদ কার্ডের কথা উঠলেই মানুষ কেমন জানি পুরানো স্মৃতিতে হারিয়ে যায়। মনে হয় ঈদ কার্ড নামক জিনিসটি একমাত্র জাদুঘরে গেলেই পাওয়া সম্ভব। কিন্তু আজ থেকে আরও ২০/২৫ বছর আগে এই চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ঈদের আগে পাড়ার ছোট ছেলেরা কার্ডের দোকান দিতো। ঈদের আগে কার্ড নিয়ে সবার থাকতো বিশেষ আগ্রহ।
এবার ঈদকে সামনে রেখে সাতক্ষীরা শহরের অনেক দোকান ঘোরাঘুরির পর হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি দোকানে ঈদ কার্ড বিক্রি করতে দেখা যায়। শহরের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ন সংলগ্ন মিনি মার্কেটের দুটি দোকান ও তোফান কোম্পানি ব্রিজের পাশে দুটি দোকানে এখনও ঈদের কার্ড বিক্রির করতে দেখা যায়।
শিক্ষার্থী বাহলুল করিম বলেন, এখান থেকে কয়েক বছর বন্ধু বান্ধবী, ছোট ভাই বোনদের আগে ঈদ দিতাম। কিন্তু এখন আর ঈদ চলে না সব ডিজিটাল হয়ে গেছে এসএমএস, ফেইসবুক বা ইমেলের মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে থাকি।
সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী শিরিন আক্তার জানান, ঈদ কার্ড যে জাদু ঘরে রাখার মতো এখন ঈদ কার্ডের কথা উঠলেই মানুষ কেমন জানি পুরানো স্মৃতিতে হারিয়ে যায়। মনে হয় ঈদ কার্ড নামক জিনিসটি একমাত্র জাদুঘরে গেলেই পাওয়া সম্ভব। তবে আমি এখন ঈদ কার্ড ব্যবহার করি। আমার কিছু ক্লোজ বান্ধবী এবং বন্ধু আছে তাদের ঈদ কার্ডের মাধ্যমে দাওয়াত দিয়ে থাকি।
আপন প্রিন্টিং প্রেস আশরাফুল ইসলাম খোকন বলেন, আজ থেকে ১৫ থেকে ২০ বছর আগে যে পরিমান কার্ড ছাপা হতো এখন এ পরিমান কার্ড ছাপা হয়না। এবার ঈদ উপলক্ষে ১০০টির বেশি ডিজাইনের ঈদ কার্ড করা হয়েছে। ৫টাকা থেকে ও ১০টাকার মধ্যে অধিকাংশ কার্ড পাওয়া যাবে। ইফতারির জন্য কিছু কার্ড ছাপা হয়। এছাড়া অফিসিয়াল কাজে ব্যবহৃত কার্ড এখানো বিক্রি করা হয়।
সোনামনি ছবি ঘরের সত্ত্বাধিকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বর্তমান ডিজিটাল যুগ এখন আর তেমন কেউ কার্ড কিনতে আছে না। সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কিছু শিক্ষার্থীরা কার্ড নিয়ে তাদের বান্ধবীদের ঈদ কার্ড দেয়। তিনি আরো জানালেন তার কাছে সময় উপযোগী ডিজিটাল কার্ডও আছে কার্ড খুললে সাউন্ড করে আই লাভ ইউ বলবে। তার দাম ২০০ টাকা কিছু কার্ড আছে যেগুলোতে মিউজিক ও লাইটের মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা জানানো যাবে তার দাম ১৬০ টাকা। তবে এক সময় যে পরিমান কার্ড বিক্রি হতো এখন সেরকম বিক্রি হয়না।
লাবনী মোড়ের কয়েজন ব্যবসায়ী জানালেন তারা এখান থেকে ৫ বছর আগেও তারা ঈদ কার্ড বিক্রি করতেন এখন আর তার বিক্রি করে না। কারণ হিসেবে জানালেন ডিজিটাল যুগে ঈদে কার্ডের ক্রেতা কম এবং এটি দুটি ঈদ ছাড়া অন্য সময় বিক্রি হয় না। সে জন্য তারা এটি নিয়ে আসেন না।
এদিকে ঈদে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য ভার্চুয়াল উপকরণের দিকেই ঝুঁকছে নতুন প্রজন্ম। আর শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমগুলোতে দিনে দিনে আসছে পরিবর্তন। আর ঈদ উপলক্ষে ভার্চুয়াল ও সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে পাওয়া যায় বিভিন্ন মজার প্রোগ্রাম। এছাড়া জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ফেসবুকে স্ট্যাটাস, মেসেজ কিংবা ফেসবুক স্ট্যাটার্স লেখার মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছে। এবারের ঈদটা কার্ড বিনিময়ে হয়ে উঠুক আরো আন্তরিক এই রকম প্রত্যাশা কার্ড সংশ্লি¬ষ্ট ব্যক্তিদের।

Check Also

৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।