সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ জেলার বিভিন্ন উপজেলার সড়ক ও আভ্যন্তরীণ সড়কের বেহাল দশা। এসব সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। এ কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। খানাখন্দে ভরা এসব সড়কে নাড়ির টানে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষ ভোগান্তিতে পড়ার আশঙ্কা করছেন। সংস্কার না হওয়ায় সাতক্ষীরা-আশাশুনি, সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ-শ্যামনগর ও সাতক্ষীরা-কলারোয়া জেলার আভ্যন্তরীণ সড়কে খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলার সব চেয়ে খারাপ সড়কের নাম সাতক্ষীরা-আশাশুনি। সাড়ে ছয় বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় সড়কটির এমন বেহাল হয়েছে। এই সড়কটির ছাল চামড়া উঠে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই খালের আকার ধারণ করে গর্তগুলো। শুষ্ক আবহাওয়া ধুলোর আবরণে ধুয়াচ্ছন্ন মনে হয় জেলার অন্যতম প্রধান এই সড়ক। সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে ২৫ কিলোমিটার রাস্তা আস্ত নেই। এতে করে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়েছে। বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে সময় লাগছে দ্বিগুণ। পথের মধ্যে প্রায়ই বিকল হয়ে ‘আর যেতে পারবো না বলে দাঁড়িয়ে যায় যানবাহন’। এতে দুর্ভোগে নাকাল হতে হচ্ছে চালক ও যাত্রীদের। নাড়ির টানে ঈদে ঘরের ফেরার মানুষদের সবচেয়ে বেগ পোহাতে হচ্ছে এই সড়কে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের জেলা কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আশাশুনি থেকে জেলা সদরে যাতায়াতের এটি প্রধান সড়ক। ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে সদর উপজেলায় ১৪ কিলোমিটার ও আশাশুনি উপজেলায় ১৬ কিলোমিটার রয়েছে। আশাশুনির ১১টি ইউনিয়নসহ সদর উপজেলার চারটি ও তালার একটি ইউনিয়ন, শ্যামনগর এবং খুলনার পাইকগাছা ও কয়রার মানুষও এ সড়ক ব্যবহার করে। দীর্ঘদিন সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহনে চলাচল করতে হয়। আবার শীত মৌসুমে ও শুষ্ক আবহাওয়ায় ধুলোবালিতে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের আলিয়া মাদ্রাসার মোড়, ধুলিহর বাজার, বুধহাটা বাজার ও নোয়াপাড়া এলাকায় খানাখন্দে ভরা। আবার কোথাও কোথাও পিচ উঠে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বড় গর্তগুলোয় ইটের খোয়া ফেলা হয়েছে। এর ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচলের ফলে এসব খোয়া রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কে অর্ধশতাধিক বাস চলাচল করে। শহরের বিভিন্ন সড়কের খুড়াখুড়ির কারণে মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
এছাড়া সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জের-শ্যামনগর সড়কের সদরের আলিপুর থেকে পারুলিয়া পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশা। কিছুদিন আগের সংস্কার করা হলেও গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে আবার খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সাতক্ষীরা-শ্যামনগর সড়কের যাদপুর-চিংড়িখালী সড়কে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কালিগঞ্জ উপজেলার তারালি-উজিরপুর সড়ক মানুষের গলার কাটায় পরিণত হয়েছে। যশোর-কলারোয়া-সাতক্ষীরা সড়কের যুগিবাড়ী, আমানউল্লা কলেজ এলাকার সড়কের বেহাল দশা। এরপাশি কলারোয়া উপজেলা থেকে চন্দনপুর ইউনিয়নে যাওয়ার সড়ক ও কলারোয়া থেকে ঝাঙ্গলঝাড়া সড়কটিও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এলাকাবাসি জানিয়েছেন, ১৬বছরেও সংস্কার করা হয়নি কলারোয়ার-চন্দনপুর-চান্দুড়িয়া সড়কটি। জনগুরুত্বপূর্ণ ও কয়েক হাজারো মানুষের চলাচলের জন্য মাত্র একটি সড়ক। চন্দনপুর ইউনাইটেড কলেজ মোড় থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দুরত্ব চান্দুড়িয়া বাজারের রাস্তাটি কার্পেটিং ধস নেমে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ ও মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
আশাশুনি উজেলার বুধহাটা এলাকার নাইম আহমেদ তুহিন বলেন, ঢাকা থেকে সাতক্ষীরায় আসা সহজ হলেও শহর থেকে আশাশুনি পর্যন্ত যাওয়া অনেক কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি ঢাকার একটি স্কুলে জব করি। স্কুলে বন্ধ হয়ে গেছে সেজন্য বাড়িতে ফিরেছি। সাতক্ষীরার অধিকাংশ সড়ক বেহাল দশায় কারণে ঘরে ফিরতে অনেক কষ্ট হয়ে গেছে।
স্থানীয় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এমাদুল ইসলাম বলেন, সামান্য ঝড় বৃষ্টি হলে স্কুলটির সামনে সড়কে পানি জমে খালের আকার ধারণ করে। অনেক শিক্ষার্থী সাইকেলে করে বিদ্যালয়ে আসে। যানবাহনকে পাশ কাটাতে গিয়ে তারা প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনার শিকার হয়। অভিভাবকেরা সব সময় আতঙ্কে থাকেন।
বাসচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কে ঝাকায় ঝাকায় গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই বাসের যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় গাড়ি নষ্ট হয়ে মাঝপথে পড়ে থাকে। এসব কারণে যাত্রীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। ৩০ কিলোমিটার সড়ক পার হতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মতো। অথচ রাস্তা ভালো থাকা অবস্থায় এর অর্ধেক সময় লাগত। খুবই ঝুকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে এই সড়কে।
সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ (সওজের) নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জরুল করিম বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত সহজ করতে সব সড়ক-মহাসড়ক মেরামত করা হচ্ছে। সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়ক একটু খারাপ আছে। এই সড়কের জন্য বরাদ্ধ একনেকে পাশ হয়ে গেছে। এদিকে গত বছর আলিয়া মাদ্রাসার মোড়ে এক কিলোমিটার ও যতন মালির মোড় এলাকার আড়াই কিলোমিটার স্থান মেরামতে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। সেই টাকা দিয়ে ইটের খোয়া ও ঘ্যাস দিয়ে গর্ত ভরাট করা হয়। বাকি অংশ মেরামতে বরাদ্দ পাওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সাতক্ষীরার অধিকাংশ সড়কের খারাপ অংশে সংস্কার কাজ চলছে।