মৌলভীবাজারে বন্যায় ৭ জনের মৃত্যু

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ মৌলভী বাজারের মনু ও ধলাই নদীর পানি ধীর গতিতে নামতে শুরু করেছে। গত এক সপ্তহের বন্যায় ৭ জনের প্রাণ হানির ঘটনা ঘটেছে। তবে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নামলেও সোমবার বিকেলে মনু বিপদ সীমার ৭৮ ও কুশিয়ারা বিপদ সীমার ৩৭ সেন্টি মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত রবিবার মধ্যে রাতে মৌলভীবাজার শহরে মনু প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙ্গন দেওয়ার পর আর মনু নদীতে কোন ভাঙ্গন দেখা দেয়নি।
এখন লোকালয় থেকেও পানি নামতে শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহের টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মনু নদীর ১২ টি ধলাই নদীর ৬ টি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দেয়। এ ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ করায় মৌলভীবাজার জেলার মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর, কমলগঞ্জ,কুলাউড়া, শ্রীমঙ্গল এই ৫ টি উপজেলার দু’টি পৌরসভা ও ৩০ টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের তথ্য অনুযায়ী চলতি বন্যায় ৪০ হাজার ২০০ পরিবারের ১ লাখ ৯৫ হাজার ৯৬ জন লোক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ পর্যন্ত ৭ জনের প্রাণ হানির ঘটনা ঘটেছে।
৫টি উপজেলায় ৫০টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ৬ হজার ১৫৫ জন লোক আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। অধিকাংশ ওেলাক জন তাদের আতœীয় বাড়িতে অবস্থান নিয়েছে। ২ হাজার ৯ শত ৬০ হেক্টর আউশ জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
এ দিকে সোমবার দুর্গত এলাকায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। মৌলভীবাজার সার্কিট হাউজে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বিশেষ সভা শেষে সাংবাদিকদের জানান বন্যা দুর্গত এলাকায় ইতোমধ্যে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রয়োজনে আরো ত্রাণ পাঠিয়ে দেব। এখন পর্যন্ত ৬০০ টন চাল ও ১০ লাখ টাকা মজুত রয়েছে। কোনো মানুষ যাতে না খেয়ে থাকে না সে বিষয়ে আমরা তৎপর রয়েছি। তিনি বলেন, যে সব মানুষ বন্যায় ঘরবাড়ি হারিয়েছেন তাদের পুনর্বাসনের জন্য এ জেলায় ১ হাজার বান টিন, ঘর মেরামতের জন্য ৩০ লাখ টাকা বন্যার্তদের নগদ প্রদানের জন্য আরো ১০ লাখ টাকা ও ৫০০ টন চালের প্রাথমিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যতদিন মানুষের দুর্ভোগ না কাটবে ততদিন আমাদের ত্রাণ দেওয়া অব্যাহত থাকবে।


গত রবিবার মধ্যে রাতে মৌলভীবাজার শহরতলীর বড়হাটের বাড়ইকোনা এলাকায় মনুর বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়ায় মৌলভীবাজারের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছে বানভাসি মানুষ। গতকাল সোমবার পর্যন্ত পৌরসভাধীন বড়হাট এলাকায় মৌলভীবাজার-সিলেট রোডে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। মৌলভীবাজার জেলা খাদ্য গুদামের চাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত অপসারণের কাজ চলছে। ইনচার্জ মো: সাখাওয়াত হোসেন জানান, রাতে হঠাৎ বন্যা দেখা দেয়ায় সরকারি খাদ্য গুদামের ভিতর প্রায় ২ হাজার মেট্রিকটন চাল ছিল তা উদ্ধার করা যায়নি। তবে আমরা বাকী চাল উদ্ধারের আপ্রাণ চেষ্চা চালাচ্ছি।
মনুর বাঁধ ভাঙায় মৌলভীবাজার শহরের একাংশ প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ড ও তিনটি ইউনিয়নের ২০/২৫হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন নিচু এলাকার ড্রেন দিয়ে পানি প্রবেশ করায়। শহর ও শহরতলীর বাসাবাড়ির আশে পাশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
এদিকে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো: তোফায়েল ইসলাম ৫ টি আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষনা করেছেন আশ্রয় কেন্দ্র গুলো হলো মৌলভীবাজার সরকারী কলেজ,মৌলভীবাজার সরকারী মহিলা কলেজ, প্রাইমারি টিচার্স ইনস্টিটিউট, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরতলীর বড়হাট এলাকা,কুসুমবাগ, বড়কাপন, যোগীডর দূর্লভপুর, ঘরুয়া, বাহারমর্দন, সমপাশি, ভুজবল, খিদুর, দ্বারক, পাগুলিয়া,এবং সদর উপজেলার হিলালপুর ও শেখেরগাওঁ প্লাবিত হয়েছে।
মৌলভীবাজার পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী রণেদ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, ধলাই নদীর বিপদ সীমার নিচে রয়েছে। তবে মনু ও কুশিয়ারা বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে, জেলার কুলাউড়া, রাজনগর ও কমলগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলার সবচেয়ে দুর্যোগপুর্ন রাজনগর উপজেলার কামার চাক ইউনিয়নের তারা পাশা বাজারে  সরেজমিনে গেলে কথাহয় মুক্তিযোদ্ধা নজব উল্লার সাথে তিনি জানান কামার চাক ইউনিয়নের ইসলামপুর , হাটীকড়াইয়া মশাজান, ইসলামপুর, নয়াগাও এসব এলাকার শতশত ঘরবাড়ি বানের তোড়ে ভেসে গেছে বন্যা পরবর্তী সময়ে মানুষের মাথা গুঁজার টাই হবে না। ইসলামপুরের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী সোহেনা জানান প্রথমে বাড়ি ছেড়ে দেওয়া ই”চ্ছা ছিল না মনে ভরসা ছিল হয়তো আর পানি বৃদ্ধি পাবে না কিন্তু শেষে শুন্য হাতে বাড়ি ছেড়ে দিযে আসতে হলো। কোন কিছু আনতে পারিনি। একই গ্রামের সিরাজুন বলেন ঘরের ধান চাল নগদ টাকা পয়সা সোনা দানা সব ফেলে দিযে আসতে হলো।
এ দিকে কামার চাক ইউনিয়নের চেয়ার ম্যান নাজমুল হক সেলিম বলেন তার ইউনিয়নের হাজার খানেক বাড়ি ঘর বিধ্বস্ত ও ধ্বসে গেছে তার প্রাথমিক তথ্যানুসারে ১০/১৫ লাখ নগদ টাকা মানুষ হারিয়ে ফেলেছে। সারা বছরের জন্য সংগ্রহ করা ধান চাল পানিতে নষ্ট হয়েছে বন্যা পরবর্তী সময়ে এলাকায় হাহাকার সৃষ্টি হবে।

Check Also

ইসলাম-বৌদ্ধ-হিন্দু-খ্রিষ্টান, সবাই মিলে সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চাই: সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান

সব ধর্ম, ইসলাম-বৌদ্ধ-হিন্দু-খ্রিষ্টান, সবাই মিলে সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চান বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।