ক্রাইমবার্তা রিপোট:গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচে পেনাল্টি মিস করেন লিওনেল মেসি। পেনাল্টি মিস করলেন অপর বিশ্বসেরা ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও। গতকাল বি’ গ্রুপে নাটকীয় দুই ম্যাচে ঘাম ঝরিয়ে ড্র নিয়ে শেষ ষোলো রাউন্ডের টিকিট কাটে দুই ফেভারিট স্পেন ও পর্তুগাল। নিজেদের শেষ ম্যাচে মরক্কোর সঙ্গে কোনোমতো ২-২ গোলের ড্রতে হার ঠেকায় ২০১০’র চ্যাম্পিয়ন স্পেন। ম্যাচের যোগ করা সময়ে ভিএআর সহায়তায় সমতাসূচক গোল পায় স্প্যানিয়ার্ডরা। অপর ম্যাচে ইরানের সঙ্গে ১-১ গোলের ড্র নিয়ে খেলা শেষ করে পর্তুগাল।
যোগ করা সময়ের পেনাল্টি গোলে সমতায় ফেরে ইরান। আর ম্যাচের শেষ ৬ মিনিট ইরানি তোপের মুখে পার করে পর্তুগিজরা। গ্রুপে তিন ম্যাচ শেষে স্পেন ও পর্তুগালের সংগ্রহ সমান ৫ পয়েন্ট। তবে গোল ব্যবধানে গ্রুপ সেরার মর্যাদা নিয়ে পরের রাউন্ডে পৌঁছে স্পেন। ইরান ৪ ও মরক্কো ১ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ পর্বের খেলা শেষ করে । নকআউট পর্বের শেষ-ষোলো রাউন্ডে স্বাগতিক রাশিয়ার বিপক্ষে খেলবে ২০১০’র চ্যাম্পিয়ন স্পেন। আর ‘এ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ের মুখোমুখি হবে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল। গ্রুপে নিজেদের শুরুর দুই ম্যাচ শেষে স্পেন-পর্তুগালের পয়েন্ট ও গোল ব্যবধান ছিল সমান। শুরুর দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্টের সঙ্গে নিজেদের চার গোলের বিপরীতে ৩ গোল হজম করে দু’দলই। তবে ফেয়ার প্লে রেকর্ডের নিরিখে গ্রুপে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে ছিল স্পেন। ফেয়ার প্লে’তে স্পেনের বিয়োগ ১ আর পর্তুগালের খাতায় ছিল বিয়োগ ২ পয়েন্ট (হলুদ কার্ডের নিরিখে)। কালিনিনগ্রাদ স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতেই ফেভারিট স্পেনকে ধাক্কা দেয় মরক্কো । ১৪তম মিনিটে বল পায়ে অনেকটা দৌড়ে স্পেনের ডি বক্সে ঢুকে দারুণ শটে অন্যতম বিশ্বসেরা গোলরক্ষক ডেভিড ডি গেয়াকে পরাস্ত করেন মরক্কান ফরোয়ার্ড খালিদ বুতায়িব। ১৯তম মিনিটে বাম দিক দিয়ে দারুণ নৈপুণ্যে মরক্কোর বক্সে ঢুকে পড়েন এফসি বার্সেলোনার সাবেক সুপার স্টার আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। আর বাই লাইনের কাছ থেকে ইনিয়েস্তার নিখুঁত কাটব্যাকে বল পেয়ে যান ইসকো অ্যালারকন। ঠা-া মাথায় কাছ থেকে নেয়া শটে গোল নিয়ে স্পেনকে সমতায় ফেরান রিয়াল মাদ্রিদের এ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। ২৪তম মিনিটে পরিষ্কার সুযোগ পান সেই খালিদ বুতালিব। স্পেনের বিশ্বসেরা দুই ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকে ও সার্জিও রামোসকে ফাঁকি দিয়ে বল পায়ে গোলের কাছাকাছি পেঁৗঁছে যান তুর্কি ক্লাব ইয়েনি মালাটিয়াসপরের এ ফরোয়ার্ড। তবে বুতালিবের শট ফিরিয়ে দেন ডি গেয়া। চলতি বিশ্বকাপে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের স্প্যানিয়ার্ড গোলরকক্ষকের এটি বলতে গেলে প্রথম সেভ। তবে ৮১তম মিনিটে ফের গোল নিয়ে এগিয়ে যায় উত্তর আফ্রিকার দল মরক্কো। আর ম্যাচের যোগ করা সময়ে ইয়াগো আসপাসের গোলে হার ঠেকায় স্পেন। বি’ গ্রুপে আগুনে ম্যাচ দিয়ে মিশন শুরু করে স্পেন-পর্তুগাল। ওই ম্যাচে ৩-৩ গোলের সমতায় খেলা শেষ করে দু’দল। হ্যাটট্রিক করেন পর্তুগালের সুপার স্টার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। আর স্পেনের ব্রাজিলিয়ান বংশোদ্ভূত স্ট্রাইকার দিয়েগো কস্তা পান জোড়া গোল। গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মরক্কোর বিপক্ষে লড়াই শেষে রোনালদোর একমাত্র গোলে ১-০ ব্যবধানে জয় দেখে পর্তুগাল। আর ঘাম ঝরিয়ে ইরানের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয় পায় স্প্যানিয়ার্ডরাও।
রোনালদোর পেনাল্টি মিস
এক জয় নিয়ে গ্রুপে সুযোগ খোলা ছিল এশিয়ান জায়ান্ট ইরানেরও। গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে শক্তিধর পর্তুগালের বিপক্ষে খারাপ ছিল না তাদের নৈপুণ্যটাও। প্রথমার্ধের ৪৪ মিনিট পর্যন্ত পর্তুগিজদের ঠেকিয়ে রেখেছিল তারা। কিন্তু ৪৫তম মিনিটে গোল হজম করে বসে ইরান। ফুলব্যাক সেডরিক সোয়েরেসের সঙ্গে দ্রুত ওয়ান-টু পাস শেষে শূন্যে বাঁকানো শটে ইরানের জালে বল জড়ান ইংলিশ ক্লাব চেলসির সাবেক স্ট্রাইকার রিকার্ডো কারেসমা। শুরুর দুই ম্যাচে ৪ গোলের কৃতিত্ব দেখান রোনালদো। আর গতকাল ইরানিদের কড়া মার্কিংয়ের বিপরীতে রোনালদোকে প্রথমবার স্বরূপে দেখা যায় ৪০তম মিনিটে। এসময় রোনালদোর বাঁকানো দূরপাল্লার শট রুখে দেন ইরানি গোলরক্ষক আলী বিয়ানভান্দ। আর ম্যাচের ৫৩তম মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন রোনালদো। এসময় ইরানি ডিফেন্ডার ডি বক্সে রোনালদোকে মাটিতে ফেলে দিলে ভিডিও অ্যাসিসটেন্ট রেফারির সহায়তায় পেনাল্টি পায় পর্তুগাল। তবে রোনালদোর স্পট কিক ডানদিকে ঝাঁপিয়ে রুখে দেন ইরানি গোলরক্ষক বিয়ানভান্দ। তবে রেফারির সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পরে রেগেমেগে ডাগআউট থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায় পর্তুগিজ কোচ কার্লোস কুইরোজকে। যদিও ফের ডাগআউটে ফিরে আসেন আন্তর্জাতিক ফুটবলে বিশ্বের অন্যতম দামি এ ফুটবল কোচ।
উড়ন্ত রাশিয়াকে মাটিতে নামালো উরুগুয়ে
স্বাগতিক রাশিয়াকে পেছনে ফেলে ‘এ’ গ্রুপের শীর্ষে থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠলো উরুগুয়ে। গতকাল সামারা অ্যারেনায় উরুগুয়ের কাছে ৩-০ গোলে হার মানে দশজনের দলে পরিণত হওয়া রাশিয়া। চলতি আসরে এটি রাশিয়ার প্রথম হার। ঘরের মাটিতে প্রথম দুই ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে ৮ বার বল পাঠায় স্বাগতিক রাশিয়া। অন্যদিকে প্রথম দুই ম্যাচেই ন্যূনতম ব্যবধানের কষ্টার্জিত জয় পায় উরুগুয়ে। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ম্যাচে জ্বলে ওঠে দুইবারের চ্যাম্পিয়নরা। লুইস সুয়ারেজের গোলে খেলা শুরুর ১০ মিনিটেই লিড নেয় উরুগুয়ে। ১৩ মিনিট না যেতেই আত্মঘাতী গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ হয়। উরুগুইয়ান মিডফিল্ডার দিয়েগো লাক্সাল্টের শট ডেনিশ চেরিশেভের গায়ে লেগে জালে জড়ায়। রাশিয়ার আগের দুই ম্যাচেই গোল করেন চেরিশেভ। দুই গোলে পিছিয়ে থাকা রাশিয়া শিবিরে আরো বড় আঘাত হানে ডিফেন্ডার ইগোর স্মোলনিকভের লালকার্ড। ৩৬তম মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন তিনি। ৯০তম মিনিটে গোল পান এডিনসন কাভানি। রাশিয়া ও উরুগুয়ে এর আগে একবারই মুখোমুখি হয়। ২০১২ সালের প্রীতি ম্যাচটি শেষ হয় ১-১ সমতায়। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে সাতটি ম্যাচ খেলে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৬২ ও ১৯৭০ বিশ্বকাপ ম্যাচ। সাত ম্যাচের ছয়টিতে জয় পায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। দক্ষিণ আমেরিকান পরাশক্তিদের একমাত্র জয়টি আসে ১৯৭০ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের একমাত্র গোলে। ১৯৬২ বিশ্বকাপে উরুগুয়েকে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ২-১ গোলে হারায় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন।
আরব ডার্বিতে হার সালাহর মিশরের
বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে গোল পেয়েছেন মোহাম্মদ সালাহ। কিন্তু দলকে জেতাতে পারেননি মিশরের মহাতারকা। ভলগোগ্রাদ অ্যারেনায় একই গ্রুপে নিয়ম রক্ষার ম্যাচটিতে সৌদি আরবের কাছে শেষ মিনিটের গোলে ২-১ ব্যবধানে হার দেখে মিশর। ম্যাচের ২২ মিনিটের মাথায় দারুণ গোল উপহার দেন সালাহ্। মুখোমুখি অবস্থানে সৌদি গোলরক্ষক ইয়াসের আল মোসাইলেমের মাথার ওপর দিয়ে বল জালে পাঠান তিনি। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে পেনাল্টি থেকে গোল পরিশোধ করেন সৌদি মিডফিল্ডার সালমান আল ফারাজ। ইনজুরির সময়ে খেলা যখন ড্রয়ের পথে তখনই মিশরের জালে বল পাঠান সৌদি মিডফিল্ডার সালেম আল দাউসারি। পুরো ম্যাচে বল দখল ও আক্রমণে মিশরের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল সৌদি আরব। এ ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড়ের রেকর্ড গড়েন মিশরের ৪৫ বছর বয়সী গোলরক্ষক ইসাম এল হাদারি। প্রথম দুই ম্যাচে তাকে একাদশে রাখেননি মিশরের আর্জেন্টাইন কোচ হেক্টর কুপার। গত বিশ্বকাপে ৪২ বছর বয়সে মাঠে নামেন কলম্বিয়ার গোলরক্ষক ফরিদ মনদ্রাগন। ১ পয়েন্ট নিয়ে শেষ হলো সৌদি আরবের রাশিয়া বিশ্বকাপ মিশন। তিন ম্যাচেই হারালো ২৮ বছর পর বিশ্বকাপ খেলতে আসা মিশর। নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচ হেরে টুর্নামেন্ট থেকে আগেই মিশর ও সৌদি আরবের বিদায় নিশ্চিত হয়। কাঁধের ইনজুরির কারণে উরুগুয়ের বিপক্ষে (১-০) ৮৯ মিনিটের গোলে হেরে যাওয়া ম্যাচে ছিলেন না সালাহ্। রাশিয়ার বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে ফিরলেও ৩-১ গোলে হার দেখেন তিনি। বিশ্বকাপে নিজের অভিষেক ম্যাচটিতে পেনাল্টি থেকে একমাত্র গোলটি করেন লিভারপুল ফরোয়ার্ড সালাহ্। উদ্বোধনী ম্যাচে রাশিয়ার কাছে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত হয় সৌদি আরব। দ্বিতীয় ম্যাচে উরুগুয়ের বিপক্ষে হার ১-০ গোলে। এর আগে সৌদি আরবের বিপক্ষে ছয়বারের সাক্ষাতে চার ম্যাচে জয় পায় মিশর। একটিতে সৌদি আরব ও এক ম্যাচ ড্র হয়। বিশ্বকাপে এটাই দুইদলের মধ্যকার প্রথম ম্যাচ।