ইসলামী ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখার ক্ষুদ্র ঋণ গ্রামীণ জীবনকে পাল্টে দিয়েছে

# ইসলামী ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখার ক্ষুদ্র ঋণ আমার জীবন পাল্টে দিয়েছে
আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরা: ‘ইসলামী ব্যাংক আমার জীবন বদলিয়ে দিয়েছে। এই ব্যাংকের পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প (আরডিএস) থেকে প্রথমে ৬ হাজার টাকা বিনিয়োগ নিয়ে দুটি ছাগল কিনি। পরে সেই ছাগল থেকে একটি গাভী কিনি। দ্বিতীয় দফায় ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ নিয়ে একটি সেলাই মেশিন কিনে দর্জির কাজ শুরু করি। এ কাজেও সফল হই। স্বপ্ন দেখি বড় কিছু করার। বছর শেষে গাভী পালন করে ৫০ হাজার টাকা মুনাফা অর্জন করি। তৃতীয় আরো কিছু বিনিয়োগ সুবিধা নিয়ে কৃষিজ পণ্যের ব্যবসা শুরু করি। এখন আমি এলাকার ব্যবসায়ী। আমার এক ছেলে অনার্স পড়ছে আর এক মেয়ে মার্স্টাস পড়ছে। বাড়িতে পাকাঘর ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা নির্মাণ করেছি। সুখেই কাটছে আমার দিনগুলো। অথচ এক সময় ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করেছি। ইসলামী ব্যাংক আমার জীবন পরিবর্তন করে দিয়েছে।’

ইসলামী ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখার পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের গ্রাহক শহরের বাগানবাড়ি এলাকার তাসলিমা বেগমের সাথে কথা হলে তার জীবনে ধাপে ধাপে সাবলম্বী ও একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প শুনালেন। এমন গল্প আরো অনেক নারী উদ্যোক্তার।

প্রান্তিক মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, সম্পদ বিকেন্দ্রীয়করণ, বিনিয়োগ সম্প্রসারণ ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ইসলামী ব্যাংক কাজ করছে। সাতক্ষীরায় ইসলামিক মাইক্রোফাইন্যান্সের বেশিরভাগ অংশ পরিচালিত হচ্ছে ইসলামী ব্যাংকের আরডিএস প্রকল্পের মাধ্যমে বলে ব্যাংক সূত্র জানায়।

সূত্র জানায়,সাতক্ষীরা সদরে ইসলামী ব্যাংক ক্ষুদ্র বিনিয়োগের মাধ্যমে উদ্যোক্তা উন্নয়ন, গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও নারীর ক্ষমতায়নে লক্ষ্যে ১৭ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে আরডিএস এর মাধ্যমে ৯ কোটি ৪৯ লক্ষ এবং এমইআইএস এর মাধ্যমে ৭ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা বিনা জামানাতে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করেছে।
সর্ব নিন্ম ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ দিচ্ছে সাতক্ষীরা ইসলামী ব্যাংক ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প থেকে।

এ প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যাংটির সাতক্ষীরা শাখা ৪ হাজার ১৭৩ ব্যক্তিকে বিনিয়োগ দিয়েছে। এসব বিনিয়োগের ফলে সাতক্ষীরা সদরের ২০ হাজার নারী উদ্যোক্তা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে ব্যাংকটির এক কর্মকর্তা জানান। ২ হাজার ৯৭০ জন নারী ও ১৮ শ জন পুরুষ ইসলামী ব্যাংক সাতক্ষীরা সদরের ব্যাংটির ৩ জন অফিসার ও ১৫ জন মাঠ কর্মকর্তা ঋণ দান কর্মসূচির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৯৫ সঅর থেকে সাতক্ষীরায় এর কার্যক্রম চালু রয়েছে বলে ব্যাকটির এক কর্মকর্তা জানান।

সাতক্ষীরা সদরে ইসলামী ব্যাংক ক্ষুদ্র বিনিয়োগ গ্রহীতার মধ্যে আগরদাড়ীতে ৪৭৬ জন,সুলতানপুরে ৪৪৩ জন,মাছখোলায় ৪৭৬ জন,খানপুরে ৪৪৮ জন,কুকরালিতে ৪৭৬ জন,মাহমুদপুরে ২৬৮ ৮ জন,বাগানবাড়িতে ৫২৩ জন,মাগুরায় ৪১৭ জন,বিনেরপোতায় ৪১৩ জন,এল্লারচরে ৪৬৪ জন, আলীপুরে ৪৪৭ জন,মাধবকাটিতে ৪৩৮ জন ,ধুলিহরে ৪৫১ জন এছাড়া সরাসরি ব্যাংটির কর্মকর্তারে মাধ্যমে ১৩শ ৯১ জন ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণ করেছে।

কয়েকজন গ্রাহকের সাথে কথা হয়। তারা জানালেন, অনেক এনজিও মত এখানে গ্রাহক হয়রানিতে পড়তে হয়না। ঋণ নিতে তেমন কোন সমস্যায়ও পড়তে হয়না। এছাড়া ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের আওয়তায় গ্রাহকদের মাঝে বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ করা হয়। গ্রাহকদের ছেলে মেয়েদের প্রতিবছর শিক্ষা উপকরণ,শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করা হয়। এছাড়া প্রতিবছর বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি,স্যানিটেশন,কর্জে হাসনা,ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প,চক্ষু ক্যাম্প,সুন্নতে খাৎনা,দক্ষতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণ,স্কুল ও মক্তব প্রতিষ্ঠা সহ নানা মুখি উন্নয়ন মূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে দেখা যায়।

প্রকল্পটির সাতক্ষীরা শাখার অফিসার এসএম ইয়াকুব আলী জানান, সাতক্ষীরা শাখারা উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে গরু ছাগল পালন,হাস মুরগী পালন,নার্সারি,পশু পালন ,কৃষি ফার্ম সহ নানা মুখী কার্যক্রম চালিয়ে স্বালম্বী হচ্ছে কয়েক হাজার নারী পুরুষ। দিন দিন এর আওয়তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া গ্রামীণ দারিদ্র দূরীকরণসহ পল্লী জনগোষ্ঠির শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সার্বিক উন্নয়নে কাজ করছে ইসলামী ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প।

ব্যাংকটির সাতক্ষীরা শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপক মোঃ আছাদুজ্জামান জানান, অন্য যে কোন ব্যাংকের চেয়ে ইসলামী ব্যাংক এর ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প সাতক্ষীরায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংক ক্ষুদ্র বিনিয়োগের মাধ্যমে উদ্যোক্তা উন্নয়ন, গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। তিনি আরো বলেন, এ ব্যাংক দেশের সকল গণ মানুষের ব্যাংক হিসেবে প্রতিটি নাগরিকের প্রয়োজন পূরণে কাজ করছে। শরীআহ’র উদ্দেশ্যের আলোকে ন্যায়ভিত্তিক সম্পদ বণ্টন ও সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করছে ইসলামী ব্যাংকের আরডিএস প্রকল্প।

তিনি আরো জানান ব্যাংকটির রয়েছে নারী উদ্যোক্তা বিনিয়োগ প্রকল্প, ক্ষুদ্র শিল্প বিনিয়োগ প্রকল্প, যানবাহন বিনিয়োগ প্রকল্প, ক্ষুদ্র ব্যবসা বিনিয়োগ প্রকল্প এবং প্রবাসী উদ্যোক্তা বিনিয়োগ প্রকল্পের মতো বেশ কিছু এসএমই প্রোডাক্ট।

একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি আরো জানান, ইসলামী ব্যাংক স্বতন্ত্র দুটি এসএমই বিভাগের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ব্যাংকটি এইচপিএসএম, বাই মুরাবাহা, বাই মুয়াজ্জাল, মুদারাবা ও মুশারাকা পদ্ধতির মাধ্যমে এসএমই খাতে মেয়াদি বিনিয়োগ, চলতি মূলধন ও ব্যবসায় বিনিয়োগ করে থাকে।

খাদ্য, কৃষিজাত, চামড়া, বস্ত্র, হস্তশিল্প, ইলেক্ট্রনিক, পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ, আমদানি ও রপ্তানি খাত, টেলিকমিউনিকেশন, ট্রান্সপোর্ট, ইনফরমেশন টেকনোলজি, হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ওয়ার্কশপসহ সব ধরনের শরিয়া অনুমোদিত পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায় ইসলামী ব্যংক ঋণ দেয়।

বাংলাদেশকে বর্তমান বিশ্বে ক্ষুদ্রঋণের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। ব্যাংকটির ক্ষুদ্র ঋণ জেলা ব্যাপি ছড়িয়ে দেয়ার দাবী জানিয়েছে এলাকা বাসি।

Check Also

৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।