ক্রাইমবার্তা রিপোট: যশোরের চৌগাছায় দুর্বৃত্তদের হাতে মাদ্রাসা ছাত্রী শর্মিলা খাতুন (১০) হত্যার আসামীদের আটক করেছে পুলিশ। বুধবার বিকেলে মেহেরপুর থেকে প্রথমে প্রধান আসামী তজিবরকে ধরে নিয়ে আসে গ্রামবাসি। এরপর তার স্বীকারোক্তিতে অপর দুই সহযোগী রাজু (১৪) ও তুষার (১৩) কে তাদের বাড়ির মধ্যে ঘেরাও করে র্যাবকে খবর দেয়া হয়।
খবর পেয়ে যশোর-৬ র্যাবের একটি দল ও থানা পুলিশ যৌথ বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। চৌগাছা থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই আকিকুল ইসলাম হেফাজতে নেয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়জনকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
আটক আসামীরা হলো মেহেরপুর জেলার বাসিন্দা ও ফকিরাবাদ গ্রামের আব্দুল বারিক ওরফে কালু বারিকের মেয়ের জামাই তজিবর রহমান (৪৫), ফকিরাবাদ গ্রামের আবু বক্করের ছেলে জাহাঙ্গীর (৪৮), তার পুত্র রাজু (১৪), জাহাঙ্গীরের জামাই ও জলিল ওরফে ভাষনের ছেলে সুমন (৩২), জাহাঙ্গীরের বোন-জামাই ও রফিকুলের ছেলে তুষার (৩২) এবং তুষারের ছেলে নাহিদ (১৩)।
নিহত শর্মিলার পিতা হাফিজুর রহমান বলেন আমার মেয়ে শুক্রবার বিকালে বাড়ির সামনের পিচ রাস্তায় বাইসাইকেল চালাচ্ছিল। সন্ধ্যায়ও সে বাড়িতে না ফেরায় খুঁজতে গিয়ে দেখি সাইকেলটি একটি নারিকেল গাছের সাথে রাখা রয়েছে। কিন্তু মেয়ের কোথায়ও কোন খোজ নেই। পরে শনিবার চৌগাছা থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করি এবং বিভিন্নস্থানে খুঁজতে থাকি। তবে কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাড়ির অদূরে একটি আমবাগান থেকে দূর্গন্ধ পেয়ে গ্রামের লোকজন খুঁজতে থাকলে সেখানে তার অর্ধ গলিত লাশ দেখতে পায়। এ সময় মেয়ের পরনে থাকা লাল হাফপ্যান্ট দেখে তাকে সনাক্ত করি। পরে চৌগাছা থানায় খবর দিলে রাতে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।
শর্মিলার দাদা ওয়াজেদ আলী জানান শুক্রবার সন্ধ্যায় শর্মিলা নিঁখোজ হওয়ার পর শনিবার সকাল থেকেই রাস্তার পাশের জনৈক তৈমুর খাঁনের আমবাগানের পাহারাদার ও গ্রামের ঘরজামাই তজিবর পালাতক ছিল। মঙ্গলবার রাতে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার পর সে একই ইউনিয়নের মাঠচাকলা গ্রামে আমার বোন-জামাই রফিকুলের বাড়িতে যায়। তখন রফিকুল আমাকে ফোন দিয়ে জানালে তজিবরকে কৌশলে আটকে রাখতে বলি। ফোনের কথা শুনে সে টয়লেটে যাওয়ার কথা বলে পারিয়ে যায়। পরে বুধবার সকালে গ্রামের কয়েকজন যুবক তজিবরকে মেহেরপুরে তার গ্রামের বাড়িতে খুঁজতে যায়।
শর্মিলার চাচাতো ভাই মাহবুবুর রহমান জানান, গ্রামের যুবকরা মেহেরপুরে তাকে বাড়িতে না পেয়ে খুঁজা-খুঁজির এক পর্যায়ে বিকেল তিনটার দিকে মেহেরপুর রেল স্টেশন এলাকা থেকে তাকে ধরে ফেলে। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং অন্যদের নাম জানায়। পরে গ্রামের যুবকরা মোবাইলে আমাদের বিষয়টি জানালে আমরা অভিযুক্তদের বাড়ি ঘেরাও করে রাখি।
এ সময় গ্রামের একজন র্যাবের টহল টিমকে সংবাদ দিলে ডিএডি নাহিদের নেতৃত্বে র্যাবের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌছায়। একই সময়ে থানা পুলিশ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অভিযুক্তদের নিজেদের হেফাজতে নেয়। ঘটনাস্থল থেকে র্যাব চলে যাওয়ার সময় নিহত শর্মিলার বাবা হাফিজুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ২২ জুন মেয়েকে না পেয়ে ২৩ জুন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি। ২৬ জুন মেয়ের লাশ উদ্ধার হলো। মাঝে ৪ দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ জিডির বিষয়ে কোন খোজ খবর নেয়নি।
র্যাব-৬ এর ডিএডি নাহিদ বলেন আমরা প্রথম থেকে বিষয়টির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলাম না। ঘটনাস্থল চৌগাছা থানার মধ্যে হওয়ায় থানা পুলিশ আসামীদের হেফাজতে নিয়েছে।
হাকিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান বলেন শিশুটি গত ২২ জুন থেকে নিখোঁজ ছিল। এ ব্যাপারে মেয়েটির পিতা চৌগাছা থানায় নিখোঁজ মর্মে একটি সাধারন ডায়েরি করেন। আমি এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।