রয়টার্স : আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) হামলার প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পাল্টা বর্বর অভিযানের মুখেই দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্য থেকে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা অধিবাসী প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ৩৩ ও ৯৯ পদাতিক ডিভিশন রোহিঙ্গাবিরোধী ওই অভিযানটি চালায় বলে এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী, রাখাইনের বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী, নিরাপত্তা রক্ষী ও সেনাসদস্যদের নেয়া বিরল সাক্ষাৎকারের ভেতর দিয়ে পদাতিক এ দুই ডিভিশনের হত্যাযজ্ঞ ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি সেনাপ্রধান মিন অং হাইংয়ের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়ও তুলে এনেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
মিয়ানমারের এই দুই লাইট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন বেশ কয়েকটি আদিবাসী গোষ্ঠীর ওপর নির্মম ‘বিচ্ছিন্নতা দমন’ অভিযান চালানোর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও কানাডার দেওয়া সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞায় দেশটির যে ৭ জেনারেলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে ডিভিশন দুটির প্রধানরাও রয়েছেন।
দশকের পর দশক ধরে মিয়ানমারের রাজনীতি ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বেশ সক্রিয় দেশটির সেনাবাহিনী এমনিতেই তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে চরম গোপনীয়তা বজায় রাখে। আরসার হামলা পরবর্তী অভিযান বিষয়েও তারা কাউকে খুব বেশি কিছু জানার সুযোগ দেয়নি। ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ দাবি করে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদেরও অভিযান চালানো রাখাইন অঞ্চলে যেতে দেয়নি তারা।
আক্রান্ত জনগোষ্ঠী, রাখাইনের এখনকার অধিবাসী এবং অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা ছাড়াও তথ্য সংগ্রহে রয়টার্সকে নির্ভর করতে হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকের ওপরও। গত বছরের অগাস্টে আরসার হামলার আগে-পরে পদাতিক ডিভিশন দুটির সদস্যদের দেওয়া বিভিন্ন পোস্ট থেকে অভিযানের নানা অংশ এবং রোহিঙ্গাদের নিয়ে তাদের মনোভাবের ছবিও ফুটে উঠেছে।
এদেরই একজন লেফটেন্যান্ট কেয়ি নিয়ান লিন। গত বছর অগাস্টের শুরুতেই আরও শতাধিক সৈন্যর সঙ্গে গোলযোগপূর্ণ রাখাইনে উড়ে যান ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের এ তরুণ কর্মকর্তা।
“বিমানের ভেতরে খাওয়ার জন্য কেক পেয়েছি আমরা,” ১০ আগস্টে দেওয়া পোস্টে লেখেন ২৪ বছর বয়সী লিন।
‘তোমরা কি বাঙালিদের মাংস খেতে যাচ্ছ?’ তার ওই পোস্টেই মন্তব্য করেন এক বন্ধু। মিয়ানমারের অনেক নাগরিকই রোহিঙ্গাদের ‘বাঙ্গালি’ বা আরও নিন্দাসূচক অভিধা ‘কালার’ বলে ডাকে।
“হোয়াটএভার, ম্যান,” জবাব দেন ওই লেফটেন্যান্ট। “কালারদের গুঁড়িয়ে দাও, দোস্ত,” আর্জি জানান আরেক বন্ধু। “অবশ্যই,” জবাব লেফটেন্যান্ট লিনের, ফেসবুকে যিনি মাই নুয়াং লিন নামে পরিচিত।
কয়েক সপ্তাহ পর লিনদের ইউনিটের ধারাবাহিক অভিযান লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বাস্তুচ্যুত করে ঠেলে দেয় বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে। ওই অভিযানে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ‘গণহত্যা চালিয়েছিল’ বলে ভাষ্য জাতিসংঘের, যুক্তরাষ্ট্রের মতে সেনাবাহিনীর ওই পদক্ষেপ ছিল রোহিঙ্গা নির্মূলে ‘জাতিগত শুদ্ধি অভিযান’।
এ ধরনের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। লিনও বলছেন, ‘বাঙালি সন্ত্রাসীদের’ হামলার শিকার হওয়ার পরই সৈন্যরা পাল্টা অভিযানে নামে।
“প্রথমে তারাই আমাদের আতঙ্কিত করেছিল। এরপর তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর দায়িত্ব ন্যস্ত হয়। আমরা যখন অভিযানে নামি, তখন গ্রামসুদ্ধ সবাই পালিয়ে যায়,” অভিযানে কোনো হত্যাযজ্ঞ বা অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বলেও রয়টার্সকে জানান এ লেফটেন্যান্ট।
জাতিগত সহিংসতার কারণে রাখাইনের উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতি আগে থেকেই উত্তপ্ত ছিল। রোহিঙ্গা মুসলিম ও রাখাইনের বৌদ্ধদের মধ্যে প্রায়ই সেখানে নানারকম দ্বন্দ্ব সংঘাতের খবর মিলছিল। ২০১৬ সালে রোহিঙ্গা জঙ্গিদের বেশ কয়েকটি হামলার পর তৎপরতা বেড়েছিল নিরাপত্তা রক্ষীদেরও। ‘সন্ত্রাসীদের’ আশ্রয় দেওয়ার জন্য সাধারণ রোহিঙ্গাদেরও দায় দিচ্ছিল তারা।
ওই ধারাবাহিকতাতেই ২০১৭ সালের অগাস্টের শুরুতে রাখাইনে মোতায়েন করা হয় ৩৩ ও ৯৯ পদাতিক বাহিনীর সদস্যদের। ফেইসবুকে দেওয়া সৈন্যদের তখনকার ছবিগুলোতে বাহিনীর সদস্যদের রাখাইনের সিটুই বিমানবন্দরে অবতরণ করতে ও নৌকাবোঝাই হতে দেখা গেছে।
নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী অং সান সুচির সরকার তখন উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যটিতে ‘শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করতেই এ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছিল। যদিও ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত, মানবাধিকার লংঘনে দীর্ঘদিন ধরে অভিযুক্ত ডিভিশন দুটির সদস্যদের উপস্থিতি ঘটিয়েছিল তার উল্টোটা। তারা উত্তপ্ত অঞ্চলটিকে আরও অসহিষ্ণু করে তুলেছিল, বাড়াচ্ছিল উত্তেজনা।
২০১৭-র আগস্টে ফেইসবুকে দেওয়া বাহিনী সদস্যদের বিভিন্ন ছবিতে যেসব এয়ারক্রাফট ও নৌকা দেখা গেছে তাতে মিয়ানমারের বিমান, নৌ ও সামরিকবাহিনীর যৌথ অভিযানের প্রস্তুতি ছিল বলে নিশ্চিত করেছেন মিলিটারি কমান্ড স্ট্রাকচার বিষয়ক তিন বিশেষজ্ঞ।
ছবিগুলোতে শতাধিক সৈন্যকে ধারণক্ষমতাসম্পন্ন চীনের শানঝি ওয়াই-৮ বিমান ও ফরাসী টারবোপ্রোপ বিমানে করে সেনা সদস্যদের রাখাইনে নামিয়ে দেওয়ার চিত্র পাওয়া গেছে। এসময় পদাতিক ওই সৈন্যরা বহন করছিলেন রাইফেল ও ভারী মর্টার।
পরে নৌযানে চেপে উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যটির রাথেডং-এ নেমে সৈন্যদল সেখান থেকে উত্তরের দিকে রওনা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গা গ্রামবাসীদের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে। এর মধ্যে ৩৩ পদাতিক ডিভিশন অগ্রসর হয় মায়ু পাহাড়ের পূর্ব দিক ধরে; ৯৯ পদাতিক ডিভিশন যায় পশ্চিম দিকে।
রাখাইনের অন্তত ২২টি গ্রামে ৩৩ ও ৯৯ পদাতিক ডিভিশন অবস্থান নেয় বলে জানান রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকেও নিজেদের অবস্থানের জানান দেয় এ ‘নতুন সৈন্যরা’। গোলযোগপূর্ণ এলাকা হওয়ায় রাখাইনে আগে থেকেই সেনাবাহিনী মোতায়েন করা ছিল, তাদের তুলনায় এ সৈন্যদের আচরণ ‘ভিন্ন রকম ছিল’ বলে জানিয়েছেন পরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা শরণার্থীরা।
“এখানে আসার আগে আমরা কাচিনের যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলাম। আমরা সেখানে ভয়াবহ খারাপ আচরণ করেছি, তারা ছিল নাগরিক, তোমরা তাও না, এখন ভাবো কি হবে,” মধ্য আগস্টে ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের এক কমান্ডার পিন গ্রামের অধিবাসীদের এমনই হুমকি দেন বলে জানান আবুল বাশার নামে এক রোহিঙ্গা শরণার্থী।
সীমান্ত লাগোয়া তয়পিওলেটওয়ায় ৯৯ পদাতিক ডিভিশনের এক কমান্ডারও একইরকমভাবে শাসিয়েছিলেন বলে জানান আরিফ নামে আরেক রোহিঙ্গা অধিবাসী।
“যদি কোনো সন্ত্রাসী পাই, তাহলে তোদের গ্রাম ছাইয়ে পরিণত করে দেওয়া হবে, তোমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও টিকতে পারবে না,” বলেছিলেন ওই কমান্ডার।
২৫ আগস্ট আরসা ডজনের ওপর নিরাপত্তা চৌকি ও রাখাইনের সেনাঘাঁটিতে হামলা চালালে তাৎক্ষণিক ভাবে অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে সঙ্গে নিয়ে পদাতিক ডিভিশন দুটো পাল্টা অভিযান শুরু করে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে একের পর এক রোহিঙ্গা গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার কথা পরে রয়টার্সকেও জানিয়েছেন পুলিশ ও বৌদ্ধ গ্রামবাসীরা।
“আমাদের তাড়াতাড়ি রাখাইনের সন্ত্রাস কবলিত এলাকায় পাঠানো হোক। আমি যুদ্ধ করতে চাই। প্রতিশোধ নিতে দেশ আমাকে যেভাবে আহ্বান করছে, তা অগ্রাহ্য করতে পারছি না,” আরসার হামলার পর ফেইসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বলেছিলেন ৯৯ লাইট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের লেফটেন্যান্ট সাই সিট থোয়াই। ২৬ বছর বয়সী ওই লেফটেন্যান্টের ইচ্ছা পূরণ হয়েছিল।
“আমরা যখন সেখানে পৌঁছাই, কালাররা সব চলে গিয়েছিল,” কোনো ধরনের হত্যাযজ্ঞ কিংবা অগ্নিসংযোগে তিনি নিজে অংশ নেননি বলে দাবি করেন থোয়াই।
রোহিঙ্গা অধিবাসীদের অভিযোগ, পদাতিক ডিভিশনের সেনাদের সঙ্গে পরে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা এবং স্থানীয় রাখাইন বৌদ্ধরা মিলে তাদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। চালায় অকথ্য নির্যাতন, হত্যাযজ্ঞ ও ধর্ষণ।
অভিযানের প্রত্যেকদিন যে একটার পর একটা গ্রাম মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হতো তার সাক্ষ্য দিয়েছেন পুলিশের এক কর্মকর্তাও। আরসার হামলার পর ৩৩ ও ৯৯ পদাতিক ডিভিশনের অভিযানে অংশ নিতে নির্দেশ আসার কথাও জানান তিনি।
“প্রতিদিন সকালে আমরা একটা গ্রামে যেতাম, সেখানকার বাড়িঘরগুলোতে আগুন লাগিয়ে দিতাম। সন্ধ্যায় আরেকটি গ্রামে যেতাম, পরদিন আবার শুরু করতাম ” বলেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
প্রতিটি দলে ৫ থেকে ৭জন পুলিশ সদস্য ও ২০ জন সেনাসদস্য থাকতো। পুলিশ ঘরগুলো ঘিরে রাখতো, সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেগুলোতে তল্লাশি চালিয়ে এসে আগুন ধরিয়ে দিতো। পাতায় ছাওয়া, বাঁশ দিয়ে বানানো ঘরগুলো জ্বালিয়ে দিতে জ্বালানিরও প্রয়োজন পড়তো না। “সেনা সদস্যরা বলতেন, নিরাপত্তার জন্যই এ কাজ করা হচ্ছে,” বলেন তিনি।
উত্তর মংডুর মিন গেয়ি গ্রামে সৈন্যরা হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও। তুলাতুলি নামে পরিচিত ওই গ্রামে সৈন্যরা পালাতে থাকা রোহিঙ্গাদের দিকে গুলি ছুড়েছিল বলে অভিযোগ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের অনুসন্ধানকারীদের।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, শতাধিক রোহিঙ্গাদের ঘিরে রেখে ‘ধীরে ধীরে তাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল’ মিয়ানমারের সৈন্যরা। ওই গ্রামের নারী ও শিশুদের ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছিল বলেও জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ।
৯৯ পদাতিক ডিভিশনের সৈন্যরা যে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছিল তার পক্ষে সাক্ষ্য মিলেছে গ্রামটিতে অবস্থান করা রাখাইন চেয়ারম্যানের কাছ থেকেও। রোহিঙ্গাদের ‘হাত থেকে উদ্ধার করায়’ পদাতিক ডিভিশনটিকে ‘মুক্তিদাতা’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন তিনি।
“আমি জানি না ঠিক কতজন মুসলমান মরেছে, কারণ আমরা আমাদের গ্রাম হাতছাড়া করতে চাইনি,” বলেন অং কেয়া থেইন।
মং হ্লা সেইন নামে আরেক রাখাইন অধিবাসীও অভিযানের সময় তুলাতুলির দিক থেকে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছিলেন। যদিও সেখানে ঠিক কী হয়েছে, সে সম্বন্ধে ধারণা দিতে পারেননি তিনি।
তুলাতুলি গ্রামের তিন নারী, যারা এখন বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছেন, ৯৯ পদাতিক ডিভিশনের সৈন্যদের হাতে নিজেদের ধর্ষিত হওয়ার মর্মস্পর্শী বর্ণণা দিয়েছেন রয়টার্সকে। বেগম নামে একজন জানিয়েছেন, তাকে ধর্ষণের আগে তার ছোটবোনকে জবাই করেছিল মিয়ানমারের এক সৈন্য।
“কালাররা শান্ত হয়ে গেছে। তাদের গ্রামগুলো পুড়ে গেছে,” ফেইসবুকে ৫ সেপ্টেম্বর দেওয়া অপর এক পোস্টে বলেন লেফটেন্যান্ট সাই সিট থোয়াই অং। রোহিঙ্গারাই নিজেদের বাড়ি পুড়িয়ে সেনাবাহিনীর ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছে বলেও দাবি এ সেনা কর্মকর্তার।
অভিযানের পর পদাতিক বাহিনীর সদস্যদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করার ছবিও মিলেছে ফেইসবুকে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওই অভিযান সারা বিশ্বেই চরম সমালোচিত হয়েছে। অভিযানের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে। সর্বশেষ ২৫ জুন মিয়ানমারের ৭ জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও।
যদিও এসব নিষেধাজ্ঞার কোনোটিই সেনাবাহিনীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি মিন অং হ্লাইংকে স্পর্শ করেনি। গোল রিমলেস চশমা ও সুশ্রী মুখশ্রীর মিন অংকে দেখতে তেমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মনে না হলেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মোতায়েন অন্যতম বৃহৎ সেনাবাহিনীর ওপর তার ‘একচ্ছত্র কর্তৃত্ব’ আছে বলেই ধারণা পর্যবেক্ষকদের।
মিন অং নিজে একসময় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ৪৪ পদাতিক ডিভিশনের নেতৃত্বে ছিলেন। ২০০৯ সালে মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলীয় ছিটমহলে সশস্ত্র বিদ্রোহ দমনে ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের বিশেষ অভিযানেরও দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ২০১১ সালে তাকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
মিয়ানমারের পদাতিক ডিভিশনগুলোর ওপর কার নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে বেশি, এমন প্রশ্নের জবাবে দেশটির সামরিক ইতিহাসবিদ ও ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের সাবেক কর্নেল থং ওয়াই ও-র উত্তর, “জ্যেষ্ঠ জেনারেল মিন অঙ হ্লাইংয়ের।”
রাখাইনের অভিযান নিয়ে কিছু বলতে রাজি না হলেও সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা জানান একমাত্র সেনাপ্রধানই বড় বড় সামরিক অভিযানে পদাতিক ডিভিশন মোতায়েন করতে পারেন।
“চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত শীর্ষ জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের কাছ থেকেই আসে,” বলেন থং।
রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো অভিযানের কয়েকদিন আগেও সেনাপ্রধান মিন অংকে রাখাইন নেতাদের সঙ্গে নিরাপত্তা বৈঠকে অংশ নিতে দেখা গিয়েছিল।
অভিযানের পর ১৯ সেপ্টেম্বর রাখাইন প্রদেশের রাজধানী সিটুইতেও গিয়েছিলেন বলেও তার ফেইসবুক পেইজে দেখা যাচ্ছে; শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা সেখানে তাকে অভিযানের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেন।
রয়টার্স বলছে, ৩৩ ও ৯৯ পদাতিক ডিভিশনের আগের বিভিন্ন অভিযানের খবর চাপা পড়ে গেলেও রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো আক্রমণের খবর লুকানো যায়নি। বর্বর ওই নির্যাতন বাংলাদেশকে কয়েক লাখ ‘শরণার্থীর ভার’ নিতে বাধ্য করেছে, বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে খ্যাত অং সান সুচির ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন করেছে।
ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক দাতা গোষ্ঠী মিতস সঁ ফঁতিয়া (এসএসএফ) বলেছে, অভিযানের প্রথম মাসেই অন্তত ৬ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গা হত্যার শিকার হয়েছে।
মৃতের সংখ্যা, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও নির্যাতনের বিষয়ে কিছু না বললেও ২৫ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা অভিযান ও সংঘর্ষে নিরাপত্তা বাহিনীর ১৩ সদস্য নিহত হওয়ার কথা নবেম্বরে জানিয়েছিল মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। অভিযানে ৩৭৬ আরসা সদস্যের লাশ উদ্ধারের কথাও বলেছিল তারা। ৫ সেপ্টেম্বর অভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় বলেও জানিয়েছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনী।