ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোটঃ পাবনা সামাজিক বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে। টেন্ডারের মাধ্যমে ৯টি লটে ১১২৬টি গাছ প্রায় ৮ লাখ টাকায় নিলামে বিক্রি করা হলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে ঠিকাদার কেটে নিয়ে যাচ্ছে ছোট-বড় ফলজ, ওষুধি গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৫ সহস্রাধিক গাছ যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় এক থেকে সোয়া কোটি টাকা।
এতে সরকার হারাচ্ছে বড় অঙ্কের রাজস্ব। পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয়সহ বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হচ্ছে। এছাড়া অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে গাছ রোপণকারী গরিব-অসহায় শতাধিক পরিবার বঞ্চিত হচ্ছে এর সুফল থেকে। স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্র বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে প্রকৃত গাছ রোপণকারী সেজে সুফলভোগ করার পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ তাড়াশ-নিমাইচড়া বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের দু’পাশে নতুন পুরাতন মিলে মেহগনি, রেইন্ট্রি কড়ই, ইউক্যালিপ্ট্যাস, নিম, অর্জুন, ছাতিম, বাবলা, শিশু, আম, কাঁঠাল ও বিভিন্ন ফলজগাছসহ ৫ সহস্রাধিক গাছ রয়েছে।
আর এই গাছগুলো রোপণ ও পরিচর্যা করে বড় করে তুলেছেন বাঁধের দু’পাশে আশ্রিত গরিব-অসহায় মানুষ। বিদ্যুৎ লাইন সরবরাহের অজুহাতে পাবনা সামাজিক বন বিভাগ ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট ৯টি লটে ১১২৬টি গাছ বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করলে ৮টি লট পান সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আরিফুল ইসলাম এবং একটি লট পান পাবনার চাটমহরের জিন্নাত আলী।
সে মোতাবেক ২১ জুন ঠিকাদার জিন্নাত আলী ৩নং লটের ১৫১নং থেকে ৩৭৭নং পর্যন্ত ২২৬টি খাড়া গাছ কাটার অনুমতি পান। কাটার জন্য নির্ধারিত গাছগুলো নিয়ম অনুযায়ী মার্কিং করার কথা থাকলেও কোনো গাছেই মার্কিং করা হয়নি।
এছাড়া সিডিউলে বলা হয়েছে- আবশ্যিকভাবে গাছের মোথা ৩ থেকে ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত কাণ্ডসহ মাটিতে রেখে দিতে হবে এবং কোনো অবস্থাতেই মার্কবিহীন অন্য কোনো গাছ কাটা যাবে না। অথচ এর কোনো শর্তই মানা হচ্ছে না। ঠিকাদার বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সামনেই মাটি খুঁড়ে বড় বড় গর্ত করে গাছের শিকরসহ গাছগুলো তুলে ফেলছেন।
এতে বাঁধের দু’পাশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। বাঁধে বসবাসরত প্রকৃত গাছ রোপণকারীরা অবাধে গাছ কাটার প্রতিবাদ করলে তাদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আর এই কাজে ঠিকাদার ও বন বিভাগকে সহায়তা করছেন এলাকার সুফলভোগী সদস্যের নামে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি।
নিয়ম অনুযায়ী নিলামের মাধ্যমে গাছ বিক্রি করে যা আয় হবে তার ৫৫ শতাংশ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সুফলভোগীরা (যারা গাছ রোপণ করেছে) পাবে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা তা না করে তাদের ইচ্ছেমতো এলাকার কিছু প্রভাবশালীকে সুফলভোগী সদস্য বানিয়ে এ টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারা করছে।
এ বিষয়ে বাঁধে বসবাসরত ভুক্তভোগী রাশিদা খাতুন বলেন, আমার বাড়িতে প্রায় ২০ বছর আগে নিজে রোপণ করা ১৬টি ইক্যালিপ্টাস ও ৩টি নিম গাছ ছিল। অনেক যত্ন করে গাছগুলো বড় করেছি। অথচ সব গাছই কেটে নিয়ে গেছে।
অনেক মিনতি করেও একটি গাছও রাখতে পারিনি। উল্টো গাছ কাটায় বাধা দেয়া হলে পুলিশে দেয়া হবে বলে হুমকি দেন ঠিকাদার ও ঠিকাদারের লোকজন।
শাহাজাহান আলী বলেন, বাঁধ থেকে প্রায় প্রায় ২০ ফুট দূরত্বে আমি ২৫টি শিশু গাছ রোপণ করেছিলাম। কিন্তু ঠিকাদার ও ঠিকাদারের লোকজন সব গাছই কেটে ফেলেছে।
এ ব্যাপারে শনিবার দুপুরে ঠিকাদার জিন্নাত আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নিলামে ৮৭ হাজার টাকায় একটি লট কিনেছি। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মোতাবেক গাছ কাটা হয়েছে। কোনো অনিয়ম করা হয়নি।
রায়গঞ্জ রেঞ্জ অফিসার শরিফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সিডিউল মোতাবেক গাছগুলো কাটা হচ্ছে। কোনো অনিয়ম করা হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে সামাজিক বন বিভাগের পাবনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কবির হোসেন পাটোয়ারীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যবস্ততার অজুহাত দেখিয়ে মোবাইল সংযোগ কেটে দেন।