বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেলের এক বছরে ২০ কোটি ২২ লক্ষ টাকার রাজস্ব আদায়

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোটঃ    বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সাতক্ষীরা সার্কেল গত ১ বছরে ২০ কোটি ২২ লক্ষ ২০ হাজার ৯শ’ ৪৭ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে (জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০১৮পর্যন্ত) অব্যাহতভাবে জেলার বিভিন্ন সড়কে যানবাহনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে রেজিস্ট্রেশন, মালিকানা, প্রতিলিপি, অন্তর্ভুক্তি, ফিটনেস ইস্যু, নবায়ন, রুট পারমিট ইস্যু, নবায়ন, শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স(লারনার) ইস্যু, নবায়ন ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের ইস্যু ও নবায়নের খাত থেকে এ রাজস্ব আদায় করা হয়। বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেলের সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থ বছরে সাতক্ষীরা সার্কেলে মোট ১০ হাজার ৭৫৩টি রেজিস্ট্রেশন, ১ হাজার ১শ’ ১৩টি মালিকানা, প্রতিলিপি ৫৯টি, ১৪৯টি অন্তুর্ভুক্তি, ফিটনেস সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছে ২৪৩টি এবং নবায়ন করা হয়েছে ৪৮৭টি। রুট পারমিট ইস্যু করা হয়েছে ২২৭টি এবং নবায়ন করা হয়েছে ৮৩টি। শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে ৯ হাজার ৬শ’ ৭৩টি। ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে ৮হাজার ৭৮৯টি। নবায়ন করা হয়েছে ৮৮১টি। ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ডিজিটাল ব্লু-বুক) বিতরণ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৮শ’ ৪০টি। ডিজিটাল নাম্বার প্লেট বিতরণ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৪শ’ ৭২টি। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতে ২২৮ মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে রাজস্ব আদায় করা হয়েছে ১ লক্ষ ৫ হাজার ৮শ’ টাকা।
সূত্রটি থেকে আরোও জানা গেছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন করতে গ্রাহককে প্রথমে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হয়। এরপর ২ মাস পরে লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট দিতে হয়। উত্তীর্ণ হলে নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফি প্রদান করে আবেদন করতে হয়। গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আগুলের ছাপ) গ্রহণপূর্বক স্মার্ট কার্ড ইস্যু করা হয়। স্মার্ট কার্ড গ্রহণের জন্য গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে অবহিত করা হয়। মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন করতে সেবা গ্রহণকারীকে বিআরটিএ অফিসে নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ মোটরযানের জন্য আবেদন করতে হয়। আবেদনটি যাচাই-বাছাই করে সঠিক পাওয়া গেলে গ্রাহককে প্রয়োজনীয় রেজিস্ট্রেশন ফি জমা প্রদান করতে একটি এ্যাসেসমেন্ট স্লিপ প্রদান করা হয় এবং ফি জমা প্রদানের পর গাড়িটি বিআরটিএ অফিসে হাজির করতে অনুরোধ করা হয়। গাড়িটি পরিদর্শন করার পর মোটরযান পরিদর্শকের সুপারিশ সাপেক্ষে সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি:) কর্তৃক রেজিস্ট্রেশনের অনুমোদন প্রদান করা হয় এবং সংশিষ্ট কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরপূর্বক গ্রাহককে রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট সরবরাহ করা হয়। এছাড়া বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেল অফিসে মোটরযানের রুট পারমিট ইস্যু ও নবায়ন, মোটরযানের ফিটনেস ইস্যু ও নবায়ন, মোটরযানের ট্যাক্স টোকেন ইস্যু ও নবায়ন, মোটরযানের হাই সিকিউরিটি উইন্ডশিল্ড স্টিকার (ডিকল) ইস্যু ও নবায়ন, বিনামূল্যে মোটরযান ও ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত যে কোন ধরনের আবেদনপত্রের প্রাপ্যতা, মোটরযান সংক্রান্ত পরিসংখ্যান, সড়ক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত পরিসংখ্যান, ইন্সট্রাক্টর লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন, পরিবহনযানের কন্ডাক্টর লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন করা হয়।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার বিভিন্ন উপজেলার একাধিক গ্রাহক জানান, লার্নার ও মোটর সাইকেলের কাগজ করতে সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিসে আগে নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা শোনা যেত কিন্তু এখন গ্রাহকরা খুব সহজে অন লাইনে সকল কাজ সম্পন্ন করতে পারে। বিআরটিএ খুলনা বিভাগীয় প্রধান জিয়াউর রহমানের দিক নিদের্শনায় ও বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেল অফিসের সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী তানভীর আহমেদের যোগদানের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে এসেছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির উর্দ্ধে থেকে তানভীর আহমেদসহ অফিসের অন্য সকল ষ্টাফ কাজ করে দেয় তার জন্য অন্য কোন অতিরিক্ত টাকা লাগেনি বলেও জানান তারা।
বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেলের সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ চৌধুরী বলেন,বর্তমানে এ অফিসে আমার সহকারি হিসাবে কর্মরত রয়েছে মোটরযান পরিদর্শক মো. আমির হোসেন, মেকানিক্যাল এ্যাসিসন্টেট মো. আবু জামাল, অফিস সহকারি মোঃ নাসির উদ্দীন, সীল মেকানিক শেখ আমিনুর হোসেন ও অফিস সহায়ক মো. আব্দুল গফফার। এনাদের নিরালত পরিশ্রমে গ্রাহক সেবায় বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেলের সফলতা আমার একার না অফিসের সবার। বর্তমানে অনলাইন পদ্ধতিতে বর্তমানে প্রতিদিন ওয়ানস্টপ সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে। চালকদের জন্য সর্বাধুনিক স্মার্ট লাইসেন্স সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে ভুয়া লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা কমবে। ফলে মানুষ প্রতারিত হবে না। এছাড়া সাতক্ষীরা সার্কেলের নিজস্ব ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ এর মাধ্যমে গ্রাহকদের সকল অভিযোগ গ্রহণ ও নিস্পত্তি করা হয়। সাতক্ষীরা সার্কেল অফিসের সেবার মান মূল্যায়ন করবে গ্রাহকরা। বিআরটিএ’র দালাল দৌরাত্য সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা সব দালালদের সরিয়ে দিয়েছি। মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করা হয়। এছাড়া যে কোন অভিযোগের ক্ষেত্রে হট লাইন নাম্বারে (০১৯৬৬৬২২০৭৭) গ্রাহকরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবে।
বিআরটিএ সাতক্ষীরা সম্পর্কে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন বলেন, বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেলের কার্যক্রমে ইতিবাচক পরিবর্তন ও সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। সকল প্রকার সেবা অন লাইনে প্রদানের ফলে বিআরটিএ অফিসে এসে এখন আর মানুষকে হয়রানি পোহাতে হয়না। এছাড়া জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে বিআরটিএ’র টাকা জমা দেওয়ার জন্য এনআরবি ব্যাংকের একটি বুথ চালু হওয়ায় গ্রাহকরা সহজে টাকা জমা দিতে পারে। এছাড়া ইতোমধ্যে বিআরটিএ’র জন্য জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন ভবন করতে পারলে সাধারণ মানুষ আর হয়রানীর শিকার হবেনা। এছাড়া আগে ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষাগুলো মাসে একবার নেওয়া হতো এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে নেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল নাম্বার প্লেট দেওয়া হতো প্রতি মাসে, এখন তা প্রতিদিন দেওয়া হচ্ছে। এভাবে আগের তুলনায় সেবার মান অনক বৃদ্ধি পেয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশ অনুসারে বিআরটিএ গঠিত হয়। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সৃষ্টির পর থেকে সড়ক পরিবহন সেক্টরের সার্বিক তত্ত্বাবধান, ব্যবস্থাপনা ও সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে কাজ করে আসছে। বর্তমান সরকারের আমলে সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃংখলা ও গতি আনয়নের লক্ষ্যে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সাতক্ষীরা সার্কেল। সময়োপয়োগী গৃহীত এ সকল পদক্ষেপের ফলে একদিকে যেমন রাজস্ব আদায়ের মাত্রা গড়ে পরবর্তী বছরগুলোর তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে গ্রাহক সেবার মান দিন দিন উন্নত হচ্ছে।

Check Also

সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন এর আয়োজনে বিজয় দিবস পালন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,পুরুষ্কার বিতারণ ও আলোচনা সভা  অনুষ্ঠিত হয়েছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।