ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোটঃ কক্সবাজার: রোহিঙ্গাদের অবস্থা জানতে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম আজ সকালে কক্সবাজার পৌঁছেছেন।
সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাংলাদেশ বিমান (ইএ১৭০৮) একটি বিশেষ বিমানে করে তারা কক্সবাজার পৌঁছান।
সেখানে অবস্থানকালে এ দুই নেতা রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও উখিয়া সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করবেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সকালে বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর ৯টার দিকে তাদের সায়মন বিচ রিসোর্টে নেয়া হবে। সেখানে তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং করবেন। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উদ্দেশে রওনা হবেন এবং ১০টা ৪০ মিনিটে কুতুপালং ট্রানজিট রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছাবেন। দুপুর ১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত ট্রানজিট ক্যাম্পের এক্সটেনশন-৪, নিবন্ধিত সি-ব্লক ও ডি-৫ ব্লকের বিভিন্ন ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। এসময় ইউএনএফপিএ-এর নারী কেন্দ্রে ১০-১৫ জন নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে কথা বলবেন। এরপর আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এর ৫টি প্রাইমারি স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র পরিদর্শন করবেন। পরে ডি-৫ ব্লকে নির্যাতিত ৫০ জন রোহিঙ্গা নারী ও ১০০ জন রোহিঙ্গা পুরুষের সঙ্গে আলাপ করবেন। দুপুর ২টার পরে একই ব্লকে প্রেস ব্রিফিং করার কথা রয়েছে।
বিকেল ৩টার দিকে কক্সবাজার শহরে ফিরে আসবেন। আর সাড়ে ৪টার দিকে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ও এনজিও কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে করবেন। বিকেল সাড়ে ৫টা দিকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন। আর এ নিয়ে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা রেডিসন হোটেলে প্রেস ব্রিফিং করার কথা রয়েছে।
এর আগে ২০০৮ সালে ইউএনএইচসিআর-এর শীর্ষ পদে থাকা অবস্থায় জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে এসেছিলেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশে এটাই তার প্রথম সফর। তবে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম দুই বছর আগেই একবার বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন।
——0————-
জাতিসংঘ নির্ধারিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল-এসডিজি) বাস্তবায়নের পথে বাংলাদেশের নেওয়া পদক্ষেপের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন সফররত জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। রবিবার (১ জুলাই) ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সংলাপে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে অন্যদের জন্য ‘অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি। রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করায় বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন গুতেরেস। জাতিসংঘের সংবাদবিষয়ক ওয়েবসাইট ইউএন-নিউজের খবর থেকে এসব কথা জানা গেছে।
রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস শনিবার (৩০ জুন) দিবাগত রাতে ঢাকায় আসেন। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমও একই দিন বিকালে ঢাকায় আসেন। রবিবার (১ জুলাই) ঢাকায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আয়োজিত একটি মাল্টি স্টেকহোল্ডার সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়নকে আলোচনায় আনেন। বলেন, টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাগুলো জাতীয় উন্নয়ন নীতিমালার সঙ্গে একীভূত করে নেওয়ার যে কাজ বাংলাদেশ করেছে তা ‘অন্যদের জন্য অনুকরণীয়।’
গত বছর ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সন্ত্রাসবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের নামে হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে ধারাবাহিকভাবে। নিধনযজ্ঞের বলি হয়ে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় অন্তত সাত লাখ রোহিঙ্গা। মূলত রোহিঙ্গা সংকটে ভূমিকা রাখতে ঢাকা সফর করছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্বে যখন বহু দেশের সীমান্তই বন্ধ, তখন বাংলাদেশ সরকার তাদের সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়েছে এবং মিয়ানমারে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়া তাদের ভাই-বোনদের গ্রহণ করেছে।’
এদিন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়েও কথা বলেছেন গুতেরেস। বাংলাদেশের মতো নিম্নাঞ্চলীয় দেশগুলোর ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব পড়বে বলে সতর্ক করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস জলবায়ু চুক্তির আওতায় করা অঙ্গীকারগুলো উপলব্ধি করতে দেশগুলোকে অনুরোধ জানান তিনি। সেইসঙ্গে দেশগুলোর উষ্ণতা বৃদ্ধির হার সীমিত করতে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
নারী ও তরুণদের ক্ষমতায়নের ওপরও জোর দিয়েছেন গুতেরেস।
জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে এটাই অ্যান্তোনিও গুতেরেসের প্রথম বাংলাদেশ সফর। এর আগে শরণার্থী সংস্থার প্রধান হিসেবে এই রোহিঙ্গাদের দেখতেই বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি। সফরসূচির অংশ হিসেবে আজ (সোমবার) রোহিঙ্গা শিবিরে ভাগ্যদুর্গত শরণার্থীদের দেখতে গেছেন গুতেরেস। তহবিল দাতাদের সহায়তা বাড়াতে বিভিন্ন প্রতিনিধি ও ত্রাণকর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।