ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোটঃ ‘দেশবাসীর কাছে একটা কথা বলতে চাই, আপনারা আমাকে দোয়া করবেন। আমি কোনো খারাপ কাজ করিনি। ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনে আমি এসেছিলাম। এজন্য আমার পরিবার ভুগছে। আমার ফ্যামিলি আত্মীয়-স্বজন সবাই সাফার হচ্ছে। আপনার যদি পারেন আমাকে সেভ (রক্ষা) করবেন।’
রোববার মধ্যরাতে এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথা বলেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র নূরুল হক নূর।
গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে ছাত্রলীগের বেধড়ক মারধরের শিকার হন নূর।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে ধানমণ্ডির আনোয়ার খাঁন মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নূর জানান, বেসরকারি এ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ তাকে চিকিৎসা না দিয়ে রোববার মধ্যরাতে বের করে দেয়।
রাত আড়াইটার পর হুইল চেয়ারে বসা নূরকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসেন তার পরিবারের সদস্যরা। তখন হাসপাতালের কর্মীরা নূরকে নিয়ে টানাহেচড়া করতে থাকেন।
সেখানে সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে হাসপাতালের কর্মীরা ভেতরে চলে যান। তারা সাংবাদিকদের সঙ্গেও কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
সাংবাদিকদের নুরুল হক নূর বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে এখন বের হয়ে যেতে। ওরা বলছে, পুলিশ আপনাকে গ্রেফতার করবে। আমরা আপনাকে রাখতে পারব না। আপনারা এখান থেকে চলে যান।’
ওই সময় নূরকে উদ্দেশ্য করে হাসপাতালের একজনকে বলতে শোনা যায়, মিথ্যা বলবেন না।
তখন কোটা সংস্কার আন্দোলনের এ নেতা বলেন, ‘দেখেন, আমি তো খুন করি নাই বা আমি তো কোনো অপরাধ করি নাই। আমি ঢাকা মেডিকেল গেছি, ওখানে তারা আমার চিকিৎসা করতে ইগনোর করছে। আবার এখানে আসলাম, এখানে শুরুর দিন থেকে ডাক্তার বলতেছে, আপনারা এখান থেকে চলে যান। রাতে চলে যান তাড়াতাড়ি। আজ রাত সাড়ে ১২টার দিকে গোছগাছ করে চলে এসেছি। দেখেন, আমরা তো ইচ্ছা করে চলে আসি নাই। এখন আবার আপনাদের (সাংবাদিক) দেখে তারা আমাদের আটকাইছে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নূর বলেন, ‘ওরা প্রথমে বলেছিল তিন চার দিন থাকতে। এরপর রাতে জানলাম, আমাদের কেউ হাসপাতালে আসলে তাদের ঢুকতে দিচ্ছে না। তারা বলছে, প্রশাসনের নিষেধ আছে। বিকালে ধানমণ্ডি জোনের এডিসি সহকারী কমিশনার আসছেন, আমার পাসওয়ার্ড ইমেল নিয়ে গেছেন। উনি আমাকে ফেসবুকে লাইভে দেখেছেন। উনি বলেছে, তেল বেড়ে গেছে, এরপর যদি আমি ফেসুবকে লাইভে যাই, তাহলে আমাকে গ্রেফতার করা হবে। এটা বলেছে, ডিবি ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত কমিশনার। ’
তিনি বলেন, ‘আমি একটা কথাই বলতে চাই, আমি তো কোনো অপরাধ করি নাই। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, আপনি ছাত্রদের দাবি মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু কেন আজ আপনার ছাত্রলীগ আমাদের পিটিয়ে আহত করছে। অন্যায়ভাবে অনেককে ধরেছে। ’
নূর বলেন, ‘দেশবাসীর কাছে একটা কথা বলতে চাই, আপনারা আমাকে দোয়া করবেন। আমি কোনো খারাপ কাজ করিনি। ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনে আমি এসেছিলাম। এজন্য আমার পরিবার ভুগছে। আমার ফ্যামিলি আত্মীয়-স্বজন সবাই সাফার হচ্ছে। আপনার যদি পারেন আমাকে সেভ (রক্ষা) করবেন। কারণ এদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কারো দ্বারা কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমি অসুস্থ মানুষ। তারপরেও ঘুম থেকে উঠিয়ে তারা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আমি শ্বাস নিতে পারছি না। ওরা এত তাড়াতাড়ি আমাকে বের করে দিয়েছে যে, আমার ক্যানুলা এখনও খোলা হয়নি। ’
সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা বাতিলে সরকারি ঘোষণা বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত শনিবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলন শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুল হক নূরসহ সাত শিক্ষার্থী আহত হন।
ওই সময় নূরকে আটকে রেখে উপর্যুপরি লাথি-ঘুষিসহ বেধড়ক মারধর করা হয়। বাঁচার জন্য নূর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পরিচালক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক ড. জাভেদ আহমেদকে জড়িয়ে ধরেন।
এরপরও হামলাকারীরা থামেনি। তারা নূরের পাশাপাশি শিক্ষক জাভেদকেও মারধর করতে থাকে। এতে তার হাতের একটি আঙুল কেটে যায়।
পরে আহত নূরকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ধানমণ্ডি আনোয়ার খাঁন মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রোববার সকালে বেশ কয়েকবার রক্তবমি করেন নূর।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে রোববার থেকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অনির্দিষ্টকালের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন এবং অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।