ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোটঃ কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা ফারুক হাসানসহ তিন জন কারাগারেসাধারণ ছাত্র পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসানসহ তিন জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। বাকি দুই আসামি হলেন—তরিকুল ইসলাম ও জসিম উদ্দিন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা, গাড়ি পোড়ানো ও নাশকতার অভিযোগে শাহবাগ থানায় দায়ের করা দুই মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার (৩ জুলাই ) ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক সুব্রত ঘোষ শুভ উভয় পক্ষের শুনানি শেষে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।আদালতে সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাহাউদ্দীন ফারুকী (পরিদর্শক, ডিবি পুলিশ) তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামিদের কারাগারে রাখার আবেদন করে আদালতে হাজির করেন।’
এরপর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান জানান, ফারুক হাসান শাহবাগ থানায় আছে।তাকে গ্রেফতার দেখানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।’
তবে ফারুককে তুলে নিয়ে যাওয়া ঢাবি শাখার ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান সানি বলেন, ‘আমি তাকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে আসলে জনরোষ থেকে রক্ষা করেছি। তাকে শাহবাগ থানায় দিয়ে এসেছি। এরপর তার ব্যাপারে পুলিশ কী ভূমিকা নিয়েছে, তা আমার জানা নেই।’
এর আগে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘আমরা তিনজন যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজ, ফারুক হাসান ও জসিম উদ্দিনের কোনও সন্ধান পাচ্ছি না।’ তিনি দাবি করেন, ‘ফারুক হাসানকে মারধরের পর শহীদ মিনার থেকে ও জসিম উদ্দিনকে পাবলিক লাইব্রেরির ভেতর থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া মাহফুজ নামের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ককে রাশেদ নামে এক কর্মীর বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু, পুলিশ কাউকে আটকের কথাই স্বীকার করছে না।’
আসামিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৮ এপ্রিল দিবাগত রাত ১টার দিকে সহস্রাধিক বিক্ষোভকারী ভিসির বাসভবনে প্রবেশ করে। তারা মূল গেট ভেঙে ও দেয়াল টপকে বাসায় ঢোকে। তাদের হাতে রড, হকিস্টিক, লাঠি ও বাঁশ ছিল। এছাড়া বাসভবনের আশপাশেও একাধিক মোটরসাইকেলে তরা আগুন ধরিয়ে দেয়।
ওই ঘটনায় শাহবাগ থানায় (উপ-পরিদর্শক) রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে কয়েক মাস ধরে চলমান ছাত্র আন্দোলন ঢাকাসহ দেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি চাকরি থেকে কোটা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে দেওয়া হবে। এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন তিনি।তবে কবে থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে সে বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট ঘোষণা এখনও আসেনি।
—————0——————–
সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, গ্রেফতার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সভা পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে। এ সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা বাকী বিল্লাহকে আটক করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার বিকালে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ কর্মসূচিতে সংহতি জানাতে আসা অভিভাবক, শিক্ষক ও রাজনৈতিক নেতাদের লাঞ্ছনা করেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, ‘উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজ’ ব্যানারে বিকাল ৪টার দিকে ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক, সংস্কৃতিকর্মী ও রাজনৈতিক দলের নেতারা মানববন্ধনে দাঁড়াতে চাইলে পুলিশ বাধা দিয়ে ব্যানার কেড়ে নেয়।
এ সময় ব্যানার নিয়ে পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি বাকী বিল্লাহকে আটক করে পুলিশ। তাকে ছাড়াতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ স্বেচ্ছায় পুলিশ ভ্যানে উঠে পড়েন।
——————0———————-
অবশেষে কোটা আন্দোলনের নেতা ফারুককে গ্রেফতার দেখাল পুলিশ
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) একটি মোটরসাইকেল পোড়ানোর মামলায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা ফারুক হোসেনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন) মাসুদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে বিকাল ৩.৪১ মিনিটে ফারুক হোসেনের বড় ভাই আরিফুল ইসলাম বলেন, আমার ছোট ভাই ফারুককে সোমবার থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। শাহবাগ, নিউমার্কেট ও রমনা থানায় খোঁজ করেছি কিন্তু কোনো জায়গায় তারা গ্রেফতারের কথা জানায়নি।
আরিফুল ইসলাম জানান, ভাইয়ের খোঁজ জানতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আল আমিন নামের ছাত্রলীগের এক কর্মী জানান, তিনিই ফারুককে তুলে নিয়ে শাহবাগ থানায় দিয়ে আসেন।
এ বিষয়ে আল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফারুককে তিনি তার মোটরবাইকে করে শাহবাগ থানায় দিয়ে এসেছিলেন।
ফারুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানতে চাইলে আল আমিন বলেন, ফারুকের বিরুদ্ধে ‘মহামারী’ অভিযোগ। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আল আমিন বলেন, ‘কোটা সংস্কার চাই’-এই ফেসবুক পেজ থেকে ‘সরকারবিরোধী’ কথাবার্তা ছড়ানো হয়। যেহেতু ফারুক হোসেন ওই প্ল্যাটফর্মের যুগ্ম আহ্বায়ক, তাই তিনিও দোষী।
ফারুক গ্রেফতার হয়েছে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ডিউটি অফিসার রমজান হোসেন বলেন, থানায় ফারুক হোসেন নামের কেউ গ্রেফতার নেই। কোনো মামলাও নেই।