কোটা বাতিল নিয়ে আওয়ামী লীগ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোটঃকোটা সংস্কারের দাবিতে নতুন করে আন্দোলনে নামছে ছাত্র-ছাত্রীরা। বাংলাদেশে ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকুরিতে নিয়োগের কোটা পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রায় আড়াই মাস আগে।

কিন্তু এ নিয়ে দৃশ্যত কোন অগ্রগতি না হওয়ায় আন্দোলনকারীরা আবার রাস্তায় ফিরে এসেছে। তাদের অভিযোগ সরকার বিষয়টি নিয়ে গড়িমসি করছে। এমনকি তাদের আন্দোলন দমনের জন্য দমন-পীড়নও শুরু করেছে।

কোটা ব্যবস্থা বাতিলের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান আসলে কি? কবে, কখন, কিভাবে সরকার এই ব্যবস্থা বাতিল করবে, সেটা নিয়ে কেন এত অস্পষ্টতা?

পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা সত্ত্বেও গত আড়াই মাসে কোটা বাতিলের ব্যাপারে সরকারি কোনো প্রক্রিয়া দৃশ্যমান ছিল না।

এই প্রেক্ষাপটেই গড়িমসির অভিযোগ করে আসছিলেন আন্দোলনকারিরা। এখন শিক্ষার্থীদের নতুন আন্দোলনের মুখে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছে।

একই সাথে সরকার আন্দোলনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।

অন্যদিকে, মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য কোটা রাখার পক্ষে সংসদে বক্তব্য আসায় ছাত্রদের মধ্যে পুরো বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

আওয়ামী লীগের এমন অবস্থানের পিছনে রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

তবে এসব অভিযোগ মানতে রাজি নন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ. টি. ইমাম।

তিনি বলেছেন, `জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ দাবি করেছেন যে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা রাখা হোক এবং তখন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, এটা পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে পুনর্বিবেচনা করে কিভাবে হবে বা কতটুকু, সেটাতো এই কমিটি দেখবে।’

‘একটি প্রশ্ন হলো, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কত এবং তারা এর থেকে উপকৃত হচ্ছেন কিনা এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী যারা, তাদের জন্য কত অংশ আসবে? এগুলোওতো দেখা দরকার। সেজন্য এটার সমাধান সহজ নয়।’

আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে আবার বলছেন, এই আন্দোলনে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য কোটা বাতিলের বিষয়কেই মুল টার্গেট করা হয়েছে বলে তারা এখন বিশ্বাস করেন।

তাদের সরকারই মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য কোটার হার বাড়িয়েছিল। এখন তা আওয়ামী লীগের হাত দিয়েই বাতিল করার বিষয়টি তাদের জন্য রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর বিষয় বলে তারা মনে করেন।

কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, বিষয়টাতে তাদের ভোটব্যাংকে সন্দেহ তৈরি হতে পারে। আর সেকারণে আওয়ামী লীগ নেতারা এখন রাজনৈতিকভাবে বক্তব্য তুলে ধরছেন।

কিন্তু এইচ টি ইমাম বলেছেন, বিরোধীদল বিএনপি যেহেতু এই আন্দোলন নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছে, সেকারণে তারাও একটা অবস্থান রাখছেন।

কোটা বিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতারা যেমন রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন। একইসাথে দেখা গেছে, ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী গত দু’দিনে ঢাকায় এবং রাজশাহীতে আন্দোলনকারিদের উপর হামলা করেছে। গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটেছে।

আওয়ামী লীগের অন্যান্য সূত্রগুলো বলছে, এই আন্দোলন যাতে অন্যদিকে মোড় না নেয়, সে কারণেও তারা এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অবস্থান রাখছে।

ছাত্রলীগের একজন সাবেক নেতা এনামুল হক শামীম বলেছেন,এই আন্দোলনের নেতাদের অনেকের ব্যাপারে তাদের মধ্যে এখন সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যারয়ের শিক্ষক নাসরিন সুলতানা মনে করেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যেমন আওয়াম লীগের ভোটব্যাংক আছে। তেমনি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হলে সেখানেও ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের জন্য ঝুঁকি রয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা অবশ্য সব ধরণের ঝুঁকির বিষয় বিবেচনায় রাখার কথা বলছেন এবং সে কারণে তারা কৌশলে এগুচ্ছেন।

ফলে তাদের এবং সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে এটা মনে হয়েছে যে,তারা একটা সিদ্ধান্ত দিতে অনেকটা সময় নেবেন।

 

আরো পড়ুন: কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধ

 

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ‘নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দের’ ব্যানারে এই মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

একই সময়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীর’ ব্যানারে পাল্টা আরেকটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে এই মানববন্ধনে নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও বিভিন্ন হল কমিটির নেতারা।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর যে হামলা হয়েছে তার বিচার দাবি করেন এবং দোষীদের শাস্তি দাবী জানান। এ ছাড়া ডাকসু নির্বাচনেরও দাবি তোলেন। এই শিক্ষার্থীবৃন্দের মধ্যে ছিলেন, চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থী সামান্থা শারমিন, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি বেনজির আহমেদ, বিশ্ব ধর্ম সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী জাকারিয়া হোসেন, নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দের সদস্য নূর আরাফাত, আলমগীর কবির সুমন।

মানববন্ধন শেষে নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রাব্বানীর অফিসের সামনে আসেন। এ সময় তারা প্রক্টরকে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু তাঁদের সে প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেননি প্রক্টর। প্রক্টর তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘ক্যাম্পাসের শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রক্টরের বক্তব্য শেষ হলে নিপীড়ন বিরোধী ছাত্র সমাজ প্রক্টরের অফিসের সামনে অবস্থান নেন।

রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীর’ ব্যানারে পাল্টা মানববন্ধনে ছিলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তানভীরুল হক সৈকত, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক শেখ সাগর, জহুরুল হক হলের সহ সভাপতি কামালউদ্দীন রানা, জিয়া হলের উপপ্রচার বিষয়ক সম্পাদক হাসিবুল হক শান্ত, বিজয় ৭১ হলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সাকিব হাসান, এস এম হলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক।

মানববন্ধন চলাকালীন সময়ে পেছনে গতকালের হামলায় অংশ নেয়া বিভিন্ন হল শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা দাঁড়িয়ে ছিলেন।

মানববন্ধনে তাঁরা বলেন, কোটা সংস্কারের নামে একটি দল দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্ট ঘোষণার পরও এ ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরির ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে।

বক্তব্যের একপর্যায়ে তানভীরুল হক সৈকত বলেন, রাশেদ এবং নূর (সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান ও নূর হোসেন) অন্য রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে আমরা দাঁড়িয়েছি। আমরা যে কোনো অন্যায় প্রতিহত করব।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর গতকাল সোমবার সকালে হামলা চালানো হয়। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করতে জড়ো হওয়ার সময় তাঁদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এর আগে গত শনিবারও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।নয়া দিগন্ত অনলাইন

Check Also

বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেবহাটায় মানববন্ধন

দেবহাটা প্রতিনিধি: স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার এবং বিএনপির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।