ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোটঃ শেষ পর্যন্ত টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পাচ্ছেন না বঞ্চিত চাকরিজীবীরা। সরকারের বেতন বৈষম্য দূরীকরণ কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সরকারি চাকুরেদের দীর্ঘদিনের এ দাবি বাস্তবায়নের আর কোনো সুযোগ থাকল না। বর্তমানে সরকারি চাকুরেদের একটি অংশ এই সুবিধা পাওয়ায় এ নিয়ে বঞ্চিতদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মাঝামাঝি থেকে এ সুবিধা বাতিল করে সরকার।
এ নিয়ে কথা হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি বলেন, সরকারের যে কোনো সিদ্ধান্ত একটি নির্দিষ্ট সময় থেকেই কার্যকর হয়, এটিই স্বাভাবিক নিয়ম। টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড সুবিধা বাতিলের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। যে তারিখ থেকে এটি বাতিল হয়েছে নতুন করে তা পরিবর্তন বা বাড়ানো চিন্তা এই মুহূর্তে সরকারের নেই। একটি সূত্র বলছে, চাকরিজীবীদের ক্ষুব্ধ অংশটি সরকারের এমন সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর করা হয়। ওই বছর ১৫ ডিসেম্বর থেকে টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড ও ইনক্রিমেন্ট (বর্ধিত বেতন) পদ্ধতি বাতিল করা হয়। অর্থাৎ এর আগ পর্যন্ত সরকারি চাকরিজীবীদের যে অংশটি এই সুবিধা লাভ করেন তাদেরটা বহাল থাকলেও আরেকটি অংশ বঞ্চিতই থাকছে। সুবিধাদি বাতিলের তারিখ অর্থবছরের মাঝামাঝি হওয়ায় বড় একটি অংশ নিজেদের বঞ্চিত মনে করছেন। সূত্র মতে, দীর্ঘদিনের এই ক্ষোভ দূর করতে গত জুনের শেষদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে সরকারের বেতন বৈষম্য দূরীকরণ কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বৈঠকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এ সুবিধা দেয়া হলে অন্তত সাত লাখ সরকারি চাকরিজীবীকে দিতে হবে। এটি সরকারের জন্য আর্থিক বোঝা। এছাড়া এই সুবিধা দেয়া শুরু হলে নতুন নতুন দাবি উঠে আসবে, যা সরকারের জন্য বিব্রতকর হবে। বৈঠকে এ নিয়ে অর্থমন্ত্রীও কথা বলেন, জানতে চান। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, শেষ পর্যন্ত সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে কমিটি টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড সুবিধা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, সুবিধা দিলে ৭ লাখ চাকরিজীবীকে দিতে হবে বৈঠকে উপস্থাপিত এমন তথ্য ঠিক নয়। কেননা অর্থ মন্ত্রণালয়ে ৭০০ থেকে ৮০০ কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন। এর মধ্যে সিলেকশন গ্রেড সুবিধাবঞ্চিত মাত্র ১৯ জন। সব মন্ত্রণালয় মিলিয়ে এই সংখ্যা এক লাখও হবে না।
জানা গেছে, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড সুবিধা চেয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে যারা আবেদন করেছেন তার মূল বক্তব্য হচ্ছে- অর্থবছরের মাঝামাঝি এমন সিদ্ধান্ত নেয়ায় অনেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে অর্থবছরের শুরু বা শেষদিন হচ্ছে যৌক্তিক সময়। কিন্তু টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত বছরের মাঝামাঝি হওয়ায় এই বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। বঞ্চিতরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে একই অর্থবছরে একই পদে কর্মরত চাকরিজীবীদের মধ্যে ২০১৫ সালের ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পাওয়া চাকুরেরা ১০ গ্রেড থেকে নম্বর গ্রেডে উন্নীত হয়েছেন। এতে বেতন স্কেল ১৬ হাজার টাকার স্থলে ২২ হাজার টাকা হয়েছে। কিন্তু দু-একদিনের ব্যবধানে ২০১৫ সালের ১৪ ডিসেম্বরের পর যাদের টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পাওয়ার কথা তারা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এতে একই অর্থবছরে একই শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও সমপর্যায়ে চাকরি করা অবস্থায় একজনের বেতন স্কেল দাঁড়িয়েছে ২২ হাজারে এবং অন্যজনের অর্থাৎ বঞ্চিতদের বেতন স্কেল ১৬ হাজারে নেমে এসেছে।
টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড সুবিধা জটিলতা দূর করতে ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই সরকারের বেতন বৈষম্য দূরীকরণ কমিটির বৈঠক ডাকা হয়। ওই বৈঠকে আলোচনার ১২ নম্বর এজেন্ডায় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু অনিবার্য কারণে বৈঠকটি স্থগিত হয়ে যায়। এ নিয়ে আরও দুই দফা বৈঠক হয়। সর্বশেষ জুনের শেষ সপ্তাহের বৈঠকে এ সুবিধা না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যুগান্তর