ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোটঃআসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দল জামায়াতে ইসলামী এখনও অনড়। জোটটির শরিক দলগুলো সিটি নির্বাচনে একক প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে একমত হলেও জামায়াত নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে। এমনকি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মঙ্গলবার (৩ জুলাই) জামায়াতের এক নেতাকে ফোন করলেও কোনও অগ্রগতি হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বুধবার (৪ জুলাই) বিকালে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শরিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ প্রসঙ্গে বৈঠকের পর যোগাযোগ করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অগ্রিম কোনও মন্তব্য করতে আমি রাজি নই।’
বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপি-জোটের শরিক দলগুলোর একাধিক দলীয় প্রধান জানান, বুধবারের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশনে বিএনপি ও জামায়াতের আলাদা-আলাদা প্রার্থিতা নিয়ে। বৈঠকে জোটের পক্ষ থেকে জামায়াতকে প্রার্থী প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করার এজেন্ডা থাকলেও অনেকেই এ বিষয়ে নীরব ছিলেন।
একটি শরিক দলের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আন্দালিভ রহমান পার্থ ও আমি কোনও মন্তব্য করিনি। সৈয়দ ইব্রাহিম কিছু কথা বলেছেন। আমি বলিনি। কারণ, জামায়াত নিজেদের দলীয় সিদ্ধান্ত একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নেয়। সেক্ষেত্রে কাকুতি-মিনতি করার কিছু নেই।’
বৈঠকের শুরুতেই মির্জা ফখরুল বক্তব্য রাখেন। তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার সিলেটে মেয়র প্রার্থী প্রত্যাহার করতে তারেক রহমান ফোন করে অনুরোধ জানিয়েছেন জামায়াতের একজন নেতাকে। যদিও জামায়াতের ওই নেতা কোনও সাড়া দেননি।’
মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের পর শরিক দলগুলোর কেউ-কেউ একক প্রার্থী দেওয়ার পক্ষে বক্তব্য রাখেন। এরপর বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধি, দলটির নির্বাহী পরিষদের সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, ‘অতীতে পৌরসভা নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচনসহ অনেক নির্বাচনেই জামায়াত সহযোগিতা করেছে, ছাড় দিয়েছে। অতীতের সহযোগিতার মূল্যায়নও যেন বিএনপি করে।’ সম্প্রতি টাঙ্গাইলের বাসাইলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থীকে ছাড় দেওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, ‘জোট নেতারা আমাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ করেছেন। তবে আমি বলেছি, আমাদের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানাবো। বিএনপির প্রার্থী আছে, আমাদেরও প্রার্থী আছে। এখানে তো কোনও সমস্যা দেখছি না। তবে এখনও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় আছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।’
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলও জানান, ‘এখনও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হয়ে যায়নি। আমরা একজন প্রার্থীর জন্য কাজ করবো। সিলেটে জামায়াতের প্রার্থীকে সমর্থন দেবো কিনা, সেটা পরে জানতে পারবেন। তবে সিলেটে বিএনপি যে প্রার্থী দিয়েছে, ২০ দলীয় জোট সেটা সমর্থন করেছে।’
প্রসঙ্গত, আগামী ৩০ জুলাই সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল অনুযায়ী প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ জুলাই। বিএনপির পক্ষ থেকে সেখানে জোটগত প্রার্থী দেওয়া এবং জামায়াতের প্রার্থী প্রত্যাহারের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করা হলেও জামায়াত একেবারেই তা খারিজ করে দিয়েছে। দলটির নেতারা বলছেন, সিলেটে দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহারের কোনও সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের প্রভাবশালী নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘এখন আমাদের প্রার্থী প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। বাছাইতে আমাদের প্রার্থী বৈধ হয়েছেন। তিনি গণসংযোগ করছেন। জোটের বৈঠকে আমাদের দলের নেতা মাওলানা আবদুল হালিম ছিলেন। মির্জা ফখরুল বৈঠকে এটা বলেছেন যে, নির্বাচনে আমরা সব দল একসঙ্গে হয়ে নির্বাচন করবো। কিন্তু তিনি এ কথা বলেননি যে, জোটের প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের না আরিফুল হক চৌধুরী বা অন্য কেউ।’
মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, ‘জোটের প্রার্থীর নাম উল্লেখ করে এভাবে বলা হয়নি। সবাই মিলে নির্বাচন করবো। এমন একটা কমন কথা বলেছেন।’ তিনি বলেন, ‘তারা যদি বলে থাকেন, আরিফুল জোটের প্রার্থী, বিএনপি বড় দল সেটা বলে দিলেও আমাদের বক্তব্য যে, তিনি বিএনপির প্রার্থী, জোটের একক প্রার্থী না। যেহেতু আমাদের প্রার্থী আছেন, আমরাও তো জোটের শরিক দল। এ কারণে একটা বড় দলের মতো না থাকলে আরও একটা দলের প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, তাহলে আমরা বলবো, আরিফুল হক চৌধুরী জোটের একক প্রার্থী নন।’
সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার এও বলেন, ‘বিএনপিরও তো আরও একজন প্রার্থী আছেন। (মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, বিদ্রোহী প্রার্থী)। ফলে, কোনও সমঝোতা ছাড়া বিএনপি বা জোটের একাধিক প্রার্থী হয়েই যায়, তাহলে তো এমন কোনও অসুবিধা নেই। এতে জোটের দ্বন্দ্ব হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। এই জোট খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে। একটা-দুটো স্থানীয় নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী হলে জোটের কিছু আসে-যায় না। অতীতে আমরা সমঝোতা করেছি, এখন হচ্ছে না, এতে জোটে কোনও প্রভাব পড়বে না।’
তারেক রহমানের ফোনের বিষয়ে ‘কিছু জানেন না’ বলে জানান মিয়া গোলাম পরওয়ার। জোটের দুই শরিক দলের প্রধান ফোনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে তারেক রহমান জামায়াতের কাকে ফোন করেছেন, এই নামটি মির্জা ফখরুলও বলেননি।
বিএনপি জোটের একাধিক শরিক দলের প্রধানরা মনে করছেন, সিলেট সিটি করপোরেশনে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের কোনও সমঝোতা হচ্ছে না। আর বিষয়টি ‘ফরমালি’ করতেই জোটের বৈঠক ডেকে বলানো হয়েছে।
বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, ‘সিলেটের জামায়াতের প্রার্থী প্রত্যাহার করার জন্য আমরা অনুরোধ করেছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াত নেতা আব্দুল হালিম বলেছেন, এ বিষয় নিয়ে আমাদের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিবের কথা হচ্ছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়। তবে ২০ দলের সবাই তিন সিটিতে একক প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন।’ বাংলা ট্রিবিউন
Check Also
১৫ বছরে আওয়ামী লীগ ২৬ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে; ডা. শফিকুর রহমান
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ ২৬ লাখ কোটি টাকা …