ক্রাইমবাতা রিপোটঃ ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এইচটি ইমাম তিন দিনের ভারত সফরে গিয়ে দেশটির নীতি-নির্ধারকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন- আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে সমর্থন না দিতে। সেই সাথে আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে ভারত সরকারের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো মতামত বা সিদ্ধান্ত জানায়টি প্রতিবেশী দেশটির ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। কূটনৈতিকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, তিন দিনের ভারত সফরের শেষ দিন শনিবার এইচটি ইমাম ‘বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি’ নিয়ে ওআরএফে বক্তব্য দেন। সেখানে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটকে পকিস্তানপন্থী বলে ‘বিষোদগার’ করে এইচটি ইমাম ভারতের মনোযোগ কারার চেষ্টা করেন। তবে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীনদের গভীর সম্পর্ক ইস্যুতে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় এইচটি ইমামকে। সেই সাথে ‘বিতর্কিত’ হেফাজত ইস্যুতে আওয়ামী লীগের ভূমিকা এবং তিস্তা ইস্যু উঠে আসে ওই মতবিনিময় সভায়। এ সময় সাংবাদিকসহ ভারতীয় নীতি-নির্ধারকদের নানা প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হন আওয়ামী লীগের এই নীতি-নির্ধারক। তবে এসব বিষয় পাশ কাটিয়ে তিনি বারবার বিএনপিকে পাকিস্তানপন্থী, জামায়াত ইসলামি দ্বারাই বিএনপি পরিচালিত, বিএনপি ক্ষমতায় এলে পাকিস্তান ফের বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করবে, যা ভারতের জন্যও অশান্তির কারণ হবে- এমনটা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।
সেখানে তিনি বলেছেন, দুই দেশের সম্পর্ক পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের ওপর ভিত্তিশীল বলে ভবিষ্যতে তা আরও বিস্তার লাভ করবে। তিস্তা অধরা থাকলেও বহু ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্ক যে দৃঢ় হয়েছে। সম্পর্কের এই বহুমুখী উন্নতি সত্ত্বেও বিরোধীরা যে ভোটের সময় তিস্তাকে ইস্যু করবে তা তিনি অস্বীকার করেননি।
ভারত বিএনপিকে সুযোগ দেবে না
ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকরা এইচটি ইমামকে নানা প্রশ্ন করেন।
ভারতের ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনে (ওআরএফ) মতবিনিময় সভা শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হোসেন তৌফিক ইমাম (এইচটি ইমাম) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘ভারতের মন ভোলানোর হাজার চেষ্টা চালালেও বিএনপির নেতারা সফল হবেন না।’
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ভারতকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে। না নিলে তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন হারাবে। তিনি ভারতের কাছে অভিযোগ করেন, আগামী নির্বাচনে ‘পাকিস্তানপন্থী শক্তিগুলো গোলমাল বাধানোর চেষ্টা করবেই’। তার মতে, দেশে চীনপন্থী তেমন বিশেষ কেউ নেই। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কও বাণিজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বাণিজ্যের স্বার্থেই তারা বাংলাদেশে স্থিতিশীল সরকার চায়। কিন্তু পাকিস্তানপন্থীরা তা চায় না। তবে তাদের মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুত।
‘তিস্তা ইস্যু কোনো সমস্যা নয়’
তিস্তা নদীর পানি নিয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি হওয়া না-হওয়ার বিষয়টি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য কোনো সমস্যা হবে না বলে দাবি করেছেন এইচটি ইমাম। শনিবার দুপুরে দিল্লির গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনে মতবিনিময় সভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ দাবি করেন।
এইচটি ইমাম বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে বিরোধীরা নিশ্চয় বলার চেষ্টা করবে শেখ হাসিনার সরকার তো তিস্তা চুক্তিও করাতে পারলো না, ভারত কিছুই দিলো না ইত্যাদি। আমরা কিন্তু পরিষ্কার বলতে চাই, তিস্তা এখন আর তেমন কোনো বড় সমস্যা নয়।’
হেফাজতের কাছে আ.লীগের নতি স্বীকার কেন?
হেফাজতে ইসলামকে আওয়ামী লীগ কেন তোষামোদ করছে- বৈঠকে এমন প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টাকে। হেফাজতে ইসলামের চাপের কাছে আওয়ামী লীগ সরকার নতি স্বীকার করেছে- ভারতের নীতি নির্ধারকরা এমন মন্তব্য ছুড়ে দেন মতবিনিময় সভায়।
তবে এইচটি ইমাম অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দেননি, বলেছেন, ‘দেখুন, হেফাজতের সমর্থকের সংখ্যা কত বেশি! দেশজুড়ে লাখ লাখ কওমি মাদ্রাসার অগণিত ছাত্র এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। কাজেই বলপ্রয়োগ করে তাদের সঙ্গে ডিল করা যাবে না। তাতে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। আমরা তাই ‘ফোর্স’ দিয়ে নয়, বরং কৌশলের সঙ্গে (ট্যাক্টফুলি) হেফাজতের সঙ্গে ডিল করছি।’
বাংলাদেশে চীনের প্রভাবে ভারতের উদ্বেগ
বাংলাদেশে সামরিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে চীনের প্রভাব বাড়ছে বলে মনে করছে নয়াদিল্লি। যা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ আছে। সেটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সভাতেও সেই উদ্বেগের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে বারবার। যদিও এইচটি ইমাম তাকে কার্যত নাকচই করে দিয়েছেন।
চীন প্রসঙ্গে দিল্লির ওই বৈঠকে নানা প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘দেখুন চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা পুরোপুরি বাণিজ্যিক। আমাদের দেশের রাজনৈতিক ব্যাপারে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। তারা শুধু ঢাকায় একটা রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল সরকার দেখতে চায়, যা তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থের অনুকূল হবে। তা ছাড়া চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে যে ধরনের গভীর সম্পর্ক আছে, আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক তার কোনো তুলনাতেই আসবে না। বরং পাকিস্তান আমাদের চিরশত্রু একটা দেশ, পাকিস্তান ভেঙেই আমাদের জন্ম। এটা মাথায় রাখলে বলতে হয়- চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কখনো সেই স্তরে পৌঁছাবে না।’
এই সফরে এইচটি ইমাম ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এমজে আকবর ও বিজেপি নেতা রাম মাধবের সঙ্গেও দেখা করেছেন।
এর আগে গত জুনের প্রথম দিকে বিএনপির তিন নেতা- স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর দিল্লি সফর করেন। সেই সফরে তারা বিভিন্ন মহলে দুটি রাজনৈতিক বার্তা দিয়ে আসেন। তা হচ্ছে, পারস্পারিক স্বার্থে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বিএনপি প্রতিশ্রুতবদ্ধ। দ্বিতীয় বার্তা ছিল, ভারতের উচিত তার নিজের স্বার্থে বাংলাদেশের নির্বাচনে কোনো বিশেষ দলকে সাহায্য না করা। ভারতের এটা করা উচিত গণতন্ত্রের স্বার্থে। প্রতিবেশী হিসেবে দু’দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধি প্রকৃত বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্বই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দেখতে চায় বিএনপি।
অবশ্য এরও মাস খানেক আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে বিশাল একটি প্রতিনিধি দল ভারত সফর করেন। পরে পশ্চিমবঙ্গে ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন করতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে বিভিন্ন ইস্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সঙ্গে কথা হয় শেখ হাসিনার।
তবে নির্বাচনের বছর হওয়ায় রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতাদের বারবার ভারত সফর নিয়ে দেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে বলে বিশ্লষকরা মনে করছেন।
Check Also
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করেননি সমাজী
জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে আন্তর্জাতিক …