অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি : বাংলার অপরূপ প্রকৃতি ও প্রাচীন ঐতিহ্যের লীলাভূমি যশোরের অভয়নগরের ভৈরব উত্তর-পূর্ব জনপদ। অভয়নগরের ৪টি ইউনিয়নসহ দক্ষিণ নড়াইলের বিছালী ইউনিয়ন নিয়ে এ জনপদ গঠিত হলেও স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি অবহেলিত থেকে গেছে এ জনপদ। সড়কের নাজুক অবস্থা নিয়ে দুই এমপি’র ভোটারদের অভিযোগ, দক্ষিণ নড়াইলের সাংসদ কবিরুল হক মুক্তি এবং যশোর ৪’র এমপি রণজিত রায়ের দেখা মেলে ভোটের সময়। আর ভোট শেষ হয়ে গেলে পরবর্তী ৫ বছরে আর দেখা মেলে না তাদের।
অতীব দুঃখের বিষয় হলো এ জনপদের অধিকাংশ রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন ঘটছে অসংখ্য দূর্ঘটনা। আর্থিক সংকটে পড়ছে পথচারী, চালক ও পরিবহন মালিকেরা। অথচ এ সকল সড়ক দিয়েই অভয়নগরের ঐতিহ্যবাহী বাঘুটিয়ার ১১ শিব মন্দির, শ্রীধরপুরের পুড়াখালী বাওড় ও দিঘি, শুভরাড়ার ঐতিহ্যবাহী খানজাহান আলীর দিঘি ও মসজিদ, এছাড়াও অসংখ্য পুরাকীর্তি ও স্থাপনা। তাছাড়া শিল্প শহর নওয়াপাড়ার সাথে নড়াইলের রূগগঞ্জ থেকে কালনা হয়ে ঢাকা, শংকরপাশা-নড়াইলের সিঙ্গিয়া-শোলপুর, শংকরপাশা-আমতলা যাতায়াতের জন্য যাত্রীদের এ সকল সড়ক ব্যবহার করতে হয়।
অভয়নগরের ভৈরব উত্তর-পূর্ব জনপদের সাথে শিল্প শহর নওয়াপাড়ার সড়ক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলো শংকরপাশা-সিঙ্গিয়া সড়ক। এর মধ্যে যশোর-নড়াইল সীমান্তের গরুহাট খ্যাত চাকই বাজার থেকে সিঙ্গিয়া সড়কের অবস্থা এতোই নাজুক যে, প্রায়ই ঘটছে বড় বড় দূর্ঘটনা। যার ফলে ব্যাপক জান-মালের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সড়কটি এখন ভেঙ্গেচুরে নাকাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে চাকই বাজারের পর থেকে দক্ষিন নড়াইলের রুখালী গ্রাম থেকে সিঙ্গিয়া যাওয়ার সড়কটি এখন চলাচলে অযোগ্য প্রায়। এ সড়কের অন্তত ২০-২৫টি স্থানের অবস্থা এতোই নাজুক ও খানা-খন্দে ভরা যে, আকষ্মিক দূর্ঘটনায় ঘটে যেতে পারে মারাত্মক দূর্ঘটনা এমনকি প্রাণহানির মতো হৃদয় বিদারক ঘটনা।
অভয়নগরের শুভরাড়া ইউনিয়নের সবচেয়ে খারাপ দশা বাশুয়াড়ী থেকে সিকিরঘাট সড়ক। এ সড়কের পিচ ও খোয়া একেবারে উঠে গেছে। যেখানে সেখানে বড় বড় গর্ত। বৃষ্টি হলে নতুন চালক ও যাত্রীরা মোটর সাইকেল ও ভ্যান-নছিমন নিয়ে হঠাৎ গর্তে পড়ে সীমাহীন দূর্ভোগে পড়েন। সড়কটি সংস্কারের অঙ্গীকার করেছেন এ পর্যন্ত অনেক জনপ্রতিনিধি। কিন্তু নেতাদের বক্তব্য বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রইল। জনসাধারণের দূর্ভোগের সুরহা হলো না।
এ অঞ্চলের বাঘুটিয়া ও বিছালী ই্উনিয়নের সীমান্তে রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বিরাট গরু হাট। যা চাকই গরুহাট নামে পরিচিত। খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে গরু-ছাগলের সরবরাহ হয়ে থাকে। ভাঙ্গাচোরা ও খানাখন্দে ভরা পাকা সড়কগুলোর বেহাল দশার ফলে উক্ত হাটেরও আজ নাজুক অবস্থা। ক্রেতা-বিক্রেতারা ভাঙা সড়কের কারণে আসতে চান না। বিশেষ করে চাকই বাজার থেকে দক্ষিণ নড়াইলের শিঙ্গা-শোলপুর পর্যন্ত সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের বেশিরভাগ স্থানে নেই কোনো পথর-পিচ। খানা-খন্দে ভরা এ সড়ক চলাচলে একেবারেই অনুপযোগী।
খুলনার গরু ব্যবসায়ী রিপন মাহমুদ এ প্রতিবেদককে জানান, রাস্তা খারাপ থাকার কারনে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। প্রায়ই ঘটছে দূর্ঘটনা। এ সড়কের এক স্থান বাবুর হাট। এখানে বসে অভয়নগরের সবচেয়ে বড় পানের হাট। অথচ সড়কের অবস্থা এতোই খারাপ যে, ব্যবসায়ীদের এখানে পৌছতে অনেক কষ্ট হয়। ভৈরব উত্তরের এ সকল সড়ক ব্যবহার করে প্রতিদিন নওয়াপাড়ার আকিজ ও ফুলতলার আইয়ান মিলসহ বিভিন্ন মিলে শতশত শ্রমিক ঝুকি নিয়ে যাতায়াত করে থাকে। অনেকে সঠিক সময়ে পৌছতে না পারায় কাজ পায় না।
রাস্তার এমন দূরাবস্থা চোখে পড়ে বাঘুটিয়ার নিমতলা, পাচুড়িয়ার তাজ স’মিল, সিংগাড়ী থেকে ভাটপাড়া পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। এছাড়াও মরিচা-চাকই বাজার থেকে সিঙিয়া পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক ও চলাচলের অযোগ্য। মারাত্মক খারাপ অবস্থা এ সড়টিতে পায়ে হেঁটে চলতেও কষ্ট হয়। নেই কোথাও পিচ-পাথর। উঠে গেছে খোয়া, বড় বড় গর্ত হয়ে আছে সড়কের উপর। বর্ষায় সড়কটির অবস্থা আবাদী জমির মত দেখায়। স্থানীয় এমপি, চেয়ারম্যানরা মাঝে মাঝে সড়ক সংস্কারের কথা বললেও গত ৪-৫ বছর এভাবে কেটে গেলেও জনসাধারণের দেখা হয়নি সংস্কার কাজ ও ভাল সড়ক। এখন শুধুই অপেক্ষা কবে হবে এসকল সড়কের সংস্কার!