ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ বেসরকারি স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগে বয়সসীমা ও বদলির ব্যবস্থা থাকলেও মাদ্রাসা শিক্ষকদের ক্ষেত্রে তা থাকছে না। মাদ্রাসা শিক্ষকদের এ বাধ্যবাধকতা না রেখেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, গত ১৪ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে জারি করা নীতিমালায় স্কুল-কলেজের শিক্ষক নিয়োগে বয়সসীমা ৩৫ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি বদলির ব্যবস্থাও রাখা হয়। তবে মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত (মান্থলি মেমেন্ট অর্ডার) করতে চূড়ান্ত করা ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) এর জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮’ তে বয়সসীমা ও বদলির ব্যবস্থা রাখা হয়নি। উল্লেখ্য,আগের নীতিমালাতেও এ ধরনের বাধ্যবাধকতা ছিল না।
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদ্রাসা) রওনক মাহমুদ বলেন,‘নীতিমালাটি চূড়ান্ত প্রক্রিয়ায় রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। অর্থ মন্ত্রণালয় কিছু অবজারভেশন দিয়েছে। এগুলো সমন্বয় করে চূড়ান্ত করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, খসড়াটি সচিবের টেবিলে পাঠানো হয়েছে। সচিব অনুমোদন দিলেই এ মাসের যে কোনোদিন এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।
কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বেসরকারি স্কুল ও কলেজ এমপিওভুক্ত করতে সম্প্রতি প্রকাশ করা নীতিমালার মতোই এই নীতিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। তবে বেশ কিছু জায়গায় রয়েছে ভিন্নতা। বেসরকারি স্কুলগুলোতে শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় এমপিওভুক্ত করতে যেসব ব্যবস্থা হয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতেও সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আবেদন গ্রহণ ও বাছাইয়ের জন্য কমিটি গঠন করার বিধান রাখা হয়েছে। গ্রেডিংয়ের মাধ্যমেই মাদ্রাসা বাছাই করে এমপিওভুক্ত করা হবে। প্রতিষ্ঠান বাছাই কমিটিতে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (মাদ্রসা) আহ্বায়ক করে কমিটি করার বিধান রাখা হয়েছে। এই কমিটির বাছাইয়ের পর মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে।
মাদ্রাসা শিক্ষকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়স নির্ধারণ করা হয়নি এবং বদলিও ব্যবস্থা রাখা হয়নি কেন জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব রনত মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘মাদ্রাসা শিক্ষার পলিসি সাধারণ স্কুল কলেজের পলিসি থেকে খানিকটা ভিন্ন। অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্যই বয়সের বাধা রাখা হয়নি। দীর্ঘদিন বিনা বেতনে কষ্ট করে যেসব শিক্ষক এক জায়গায় সেটেল্ড হয়েছেন, বদলির ব্যবস্থা রাখলে তারা তা মানতে চাইবেন না। এতে লক্ষ্য বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে।’
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর থেকে জানা গেছে, দেশে মোট এমপিওভুক্ত ও অনুদানপ্রাপ্ত মাদ্রাসার সংখ্যা ৯ হাজার ১৩৭টি। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত দাখিল ও কামিল মাদ্রাসার সংখ্যা ৭১৮টি। সরকারি অনুদান পাওয়া এবতেদায়ি মাদ্রাসা এক হাজার ৫১৯টি। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাখিল ও কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষক রয়েছেন এক লাখ ১৯ হাজার ৫৮৭ জন, এবতেদায়ি পর্যায়ের শিক্ষক চার হাজার ৫২৯ জন এবং আইসিটি শিক্ষক এক হাজার ২২৮ জন। এমপিওভুক্ত ও সরকারি অনুদান পাওয়া মোট শিক্ষক এক লাখ ২৫ হাজার ৪৪৪ জন।
তবে সম্প্রতি অস্তিত্বহীন ২০২টি মাদ্রাসা শিক্ষা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠানের একযোগে এমপিও বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এছাড়া একসঙ্গে পাঁচটি মাদ্রাসার এমপিও বন্ধ করা হয়েছে কয়েকদিন আগেই। অন্যদিকে শূন্য পাস করা আরও ৯৬টি দাখিল মাদ্রাসাকে শোকজ করা হয়েছে।
এদিকে, বেসরকারি স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে গত ১০ জুন থেকে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। এই কর্মসূচির মধ্যেই গত ২৫ জুন থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকরা।