ক্রাইমবার্তা রিপোট: সাতক্ষীরা::“হরিণ শিকার বন্ধ কর, বণ্যপ্রাণী রক্ষা কর, সুন্দরবন বাঁচাও’ শ্লোগানে” সুন্দরবনের কুখ্যাত হরিণ শিকারী, সুন্দরবন ও জীববৈচিত্র ধ্বংসকারী সাত্তার মোড়লের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাতক্ষীরা সচেতন নাগরিক সমাজের আয়োজনে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন, মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সুভাষ সরকার। মানববন্ধনে বক্তর্য রাখেন, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এড. আবুল কালাম আজাদ, সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের আহবায়ক এড. ফাহিমুল হক কিসলু, জেএসডির জেলা সাধারণ সম্পাদক সুধাংশু শেখর সরকার, জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক শেখ ওবায়েদুস সুলতান বাবলু, ডেইলি সাতক্ষীরা’র সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুম, সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক রাশেদুজ্জামান রাশি, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অহিদুজ্জামান টিটু, আ’লীগ নেতা সবুর খান প্রমুখ। মানববন্ধন পরিচালনা করেন, গণফোরাম সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আলীনুর খান বাবুল।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সাত্তার মোড়ল তালিকাভুক্ত চিহ্নিত হরিণ শিকারি। বাংলাদেশে যে পরিমান হরিণ শিকার করেছে তার অর্ধেক হরিণ শিকার করেছে সাত্তার মোড়ল নিজে। অথচ অজানা কারণে এতদিন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নি।
ুসাত্তার মোড়ল সুন্দরবন থেকে শুধু হরিণ শিকার নয়। বাঘ পাচারের সাথেও জড়িত। সুন্দরবনের গাছপালা কেটে উজাড় করে লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হয়েছেন। আর তার এ অবৈধ অর্থ ও সুন্দরবনের হরিণের মাংস বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়ে সে বহাল তবিয়ত রয়েছেন।
বক্তারা আরো বলেন, গত ৯ জুলাই সুন্দরবনের দোবেকী নামকস্থান পুলিশের একটি টহল দল সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় সেখান থেকে ৩টি জবাই করা হরিণ, ৩টি একনালা বন্দুক ও একটি নৌকাসহ দুই চোরাশিকারী মঞ্জু ও মহিবুল্লাহকে আটক করা হয়। সে সময় সাত্তার মোড়ল ঘটনা স্থলে ছিলেন বলে গোপন সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে এঘটনায় ওইদিন সন্ধ্যায় সাত্তার মোড়লকে আসামী করে ৩ জনের নামে মামলা রেকর্ড করা হয়।
দীর্ঘদিন পরে জীব বৈচিত্র ধ্বংসকারী কুখ্যাত হরিণ শিকারি সাত্তার মোড়লের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করায় বর্তমান সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারসহ জেলা পুলিশকে ধন্যবাদ জানান এবং অবিলম্বে সাত্তার মোড়ল কে আগামী ১ সপ্তারের মধ্যে গ্রেফতার পূর্বক আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানান বক্তারা। অন্যথায় বৃহত্তর কর্মসূচির গ্রহণের ঘোষণা দেন তারা।
সুন্দরবনের কুখ্যাত হরিণ শিকারী সাত্তার মোড়লসহ ৩ জনের নামে মামলা
সুন্দরবনে জবাই করা হরিণ সহ ২জন হরিণ শিকারী আটকের ঘটনায় কুখ্যাত হরিণ শিকারী জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সাত্তার মোড়লসহ ৩ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার বিকালে শ্যামনগর থানা পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। যার নং-৩। অন্য আসামিরা হলেন, শ্যামনগর উপজেলার কদমতলা গ্রামের ইমান গাজীর ছেলে মঞ্জু গাজী ও পাতাখালি গ্রামের আমজাদ গাজীর ছেলে মহিবুল্লাহ গাজী।
আসামীদের মধ্যে মঞ্জু ও মহিবুল্লাহ আটক হলেও সাত্তার মোড়ল পলাতক রয়েছে বলে থানা সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য: সোমবার ভোর রাতে সুন্দরবনের চুনকুড়ি নদী সংলগ্ন সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের দোবেকী এলাকা থেকে ৩টি হরিণ, ৩টি একনালা বন্দুক ও একটি নৌকা এবং সাত্তার মোড়লসহ ৩জন চোরাশিকারীকে পুলিশ আটক করলেও সাত্তার মোড়ল প্রভাবশালী হওয়ায় অজ্ঞাত কারণে তাকে মামলা না জড়ানোর চেষ্টা করা হয়।
শ্যামনগর থানা ওসি সৈয়দ আব্দুল মান্নান জানান, সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের গহীনে বনদস্যু জাকির বাহিনীর সদস্যরা ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চুনকুড়ি নদী সংলগ্ন দোবেকী নামকস্থান পুলিশের একটি টহল দল সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় সেখান থেকে ৩টি জবাই করা হরিণ, ৩টি একনালা বন্দুক ও একটি নৌকাসহ উক্ত দুই চোরাশিকারী মঞ্জু ও মহিবুল্লাহকে আটক করা হয়।
এদিকে শ্যামনগরের একাধিক ব্যক্তি জানান, সাত্তার মোড়ল নিয়মিত সুন্দরবনের হরিণ শিকার করে প্রভাবশালী মহলে বিতরণ করে বিভিন্ন স্বার্থ সিদ্ধি করেন। যে কারণে সে চিহ্নিত হরিণ শিকারী হলেও তার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে কখনো কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।