ক্রাইমবার্তা রিপোট: কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে মিল আছে বলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি।মঙ্গলবার দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান হলে এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়।এ সময় আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও সম্পাদক এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বক্তব্য রাখেন।জয়নুল আবেদীন বলেন, কোটা সংস্কার নিয়ে ঢাবি কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে ভাইস চ্যান্সেলরের বক্তব্য রহস্যজনক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম পৃথিবী বিস্তৃত।তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে যখন সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা সোচ্চার এবং সব মহল যখন এই আন্দোলনকে যৌক্তিক আন্দোলন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, ঠিক তখনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই সাধারণ কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের জঙ্গী হিসেবে আখ্যা দিয়ে তাদের জঙ্গি সংগঠনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক।সমিতির সভাপতি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সরকারের হীন স্বার্থ চরিতার্থে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের কোটা আন্দোলনে জঙ্গি সম্পৃক্ততা উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে কলংকিত করেছেন। যেখানে উপাচার্য এই ধরনের বক্তব্য রাখেন, সেখানে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের মারধর করবে এটাই স্বাভাবিক।আন্দোলনকারীদের ওপর অমানবিক হামলা ও তাদের জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দেয়া কোনো সচেতন নাগরিক মেনে নিতে পারে না উল্লেখ করে জয়নুল আবেদীন বলেন, ভিসির দায়িত্ব হচ্ছে এই বিশ্ববিধ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার বিধান করা। অথচ তিনি তা না করে নানা রকম উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে সরকারের হীন স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত রয়েছেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সবার প্রবেশের অধিকার আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢালাওভাবে ছাত্রছাত্রীদের জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে ঘোষণা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার বন্ধ করার আদেশ উপচার্যের স্বেচ্ছাচারিতা বলে আমরা মনে করি।
তিনি বলেন, সত্য-মিথ্যা যাচাই না করে আন্দোলনকরী ছাত্রছাত্রীদের অহেতুক গ্রেফতার না করার জন্য এবং তাদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে বাধা সৃষ্টি না করার জন্য আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি।
এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে জয়নুল আবেদীন বলেন, সরকারকে অনুরোধ করব কাল বিলম্ব না করে অনতিবিলম্বে দাবি মেনে নিয়ে গেজেট প্রকাশ করুণ। এছাড়া যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের মুক্তি এবং যারা ক্ষতিগ্রস্ত ও পঙ্গু হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করুন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জঙ্গিবাদি কর্মকাণ্ডের মিল আছে উল্লেখ করে ঢাবি ভিসির বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সমিতির সভাপতি আরও বলেন, সুপ্রিমকোর্টের একজন বিচারপতি এবং সাবেক দুইজন ভাইস চ্যান্সেলরের সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে উক্ত ঘটনায় জড়িত ব্যাক্তিদের সংশ্লিষ্টতা অনতিবিলম্বে জনসম্মুখে প্রকাশের দাবি করছি।
এ সময় তিনি দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেন।
পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ঢাবি ভিসি আকতারুজ্জামানকে প্রমাণ করতে হবে যে ছাত্ররা জঙ্গি। জঙ্গি হিসেবে এখন কাউকে মেরে ফেলা হলে এর দায় ভিসিকে নিতে হবে। অবিলম্বে উপাচার্যের পদত্যাগ করা উচিত।
সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সমিতির সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা, গোলাম রহমান ভূঁইয়া,কোষাধ্যক্ষ নাসরিন আক্তার, সিনিয়র সহসম্পাদক কাজী মো.জয়নুল আবেদীন, সদস্য মাহফুজ বিন ইউসুফ, ব্যারিস্টার শফিউল আলম মাহবুব, আহসান উল্লাহ,মেহেদী হাসান সহবিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা।
—————–0———————
সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জঙ্গি বলেননি দাবি করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আকতারুজ্জামান।
গত রোববার কোটা আন্দোলনের সঙ্গে জঙ্গিবাদকে তুলনা করে মন্তব্য করেন উপাচার্য। এ নিয়ে শিক্ষার্থীসহ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
সমালোচনার মুখে তিন দিনের মাথায় আজ মঙ্গলবার তিনি নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, আমি কোটা আন্দোলনকারীদের জঙ্গি বলিনি। আমি বলেছি শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম উগ্রপন্থী জঙ্গিদের সঙ্গে মিলে যায়। এর মানে এই নয় যে আমি শিক্ষার্থীদের জঙ্গি বলেছি।
অধ্যাপক আকতারুজ্জামান তার বক্তব্য সংবাদ মাধ্যমে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, পত্রপত্রিকায় যেভাবে বক্তব্য এসেছে তার জন্য আমি দুঃখিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো বহিরাগত ক্যাম্পাসে এসে ক্লাসপরীক্ষা বিঘ্নিত করে এমন কার্যক্রম করা যাবে না।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে ক্যাম্পাসে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে রোববার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আকতারুজ্জামান।
ওই সময় তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনকারীরা ফেসবুক লাইভে এসে জঙ্গিদের মতো করে ভিডিওবার্তা দিয়ে কর্মসূচি বা কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেন। তাদের এমন মনোভাবের সঙ্গে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের মিল আছে। তারা কারা? কোন রাজনৈতিক অশুভ শক্তি, আমরা তা জানি না। সেটা বের করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের সহায়তা করব আমরা।
তিনি বলেন, অনেক সুস্পষ্ট ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, একটি বড় অপশক্তি ক্রিয়াশীল আছে। উদাহরণ হিসেবে বলব- ফেসবুক লাইভে তাদের ভিডিওবার্তার কথা। আমার কয়েকজন সহকর্মী একটি লাইভ ভিডিও দেখিয়েছেন। সেটি দেখলাম। দেখার পর মনে হল— জঙ্গিগোষ্ঠী তালেবান ও বোকো হারাম যেমন ভিডিওবার্তার মাধ্যমে বিভিন্ন উসকানি ও নাশকতার অপপ্রয়াস নেয়, কোটা আন্দোলনকারীদের ভিডিওতেও ঠিক তেমন একটি প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছি।
উপাচার্য আরও বলেন, ভিডিওতে দেখা গেল আন্দোলনকারীরা একটি চেয়ারে বসা। সেখান থেকে বিভিন্ন কর্মপন্থার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। কর্মসূচি পালনের অনুরোধ জানানো হচ্ছে। এ বার্তায় একটি কথা আছে- ‘আমরা মৃত্যুকে ভয় পাবো না।’ এটি খুব উগ্র চরমপন্থী। এ ধরনের মতাদর্শ-ভাবাদর্শ প্রচারের ভিডিও আমি নিজে দেখেছি। এমন ভিডিও দুই-তিন ঘণ্টা পর পর ছাড়া হচ্ছে। জঙ্গি কর্মকাণ্ডের আরেকটি বহিঃপ্রকাশ হল- তারা অশুভ কাজ সম্পাদনের জন্য নারীদের ব্যবহার করে। একইভাবে কোটা সংস্কার আন্দোলনে মেয়েদের হলগুলোতে গভীর রাতে ২০-২৫ ছাত্রীকে দিয়ে উচ্চস্বরে চিৎকারের মাধ্যমে মিছিল করানো হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পরিপন্থী কোনো ধরনের কাজ আমরা বরদাশত করব না।
উপাচার্যের এ ধরনের বক্তব্যের পর ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যম তরুণ প্রজন্ম তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। অনেকে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যের জন্য উপাচার্যের পদত্যাগও চেয়েছেন।
এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই সোমবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটা আন্দোলনকারীদের সব কাজই ‘জঙ্গিবাদের বহিঃপ্রকাশ’ বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (উপাচার্য) ড. আখতারুজ্জামান যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ বা আমি পুরোপুরি একমত নই।
তিনি বলেন, আন্দোলনের সময় ভিসির বাড়িতে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে তা পুরোপুরি জঙ্গি স্টাইলে হয়েছে। কিন্তু পুরো আন্দোলন জঙ্গিবাদের বহিঃপ্রকাশ বলে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সঙ্গে ঢালাওভাবে আমি একমত নই।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি বেশ কিছু দিন অসুস্থ ছিলাম। তেমন একটা খোঁজখবর রাখতে পারিনি। তবে বলব- কোটা সংস্কারে প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়টি জটিল প্রক্রিয়া, সময় লাগবে। তবে কোটা সংস্কারের বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কমিটি কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতদিন কমিটি ছিল না। এখন ক্যাবিনেট সেক্রেটারির নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে, ইতিমধ্যে বৈঠকও করেছে। তারা কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবে। দেশেই বাইরে থেকেও অভিজ্ঞতা নেয়া হবে। সুতরাং আন্দোলনকারীদের বলব- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায় আস্থা রাখুন।