সিলেটে মেয়র পদে জামায়াতের পাশাপাশি বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী#তিন সিটিতে নির্ভার আওয়ামী লীগ অস্বস্তিতে বিএনপি

  প্রচার শুরু আজ

নির্ভার আওয়ামী লীগ অস্বস্তিতে বিএনপি

সিলেটে মেয়র পদে জামায়াতের পাশাপাশি বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী * শেষ দিনে প্রত্যাহার করলেন দুই মেয়র ও ৩৩ কাউন্সিলর প্রার্থী * মেয়র পদে ১৮ ও কাউন্সিলরে ৫৩০ প্রার্থী * কোনো সিটিতেই বিএনপিকে আনুষ্ঠানিক সমর্থন দেয়নি জামায়াত

 ক্রাইমবার্তা  ডেস্করিপোট:
 আসন্ন তিন সিটি কর্পোরেশন (বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট) নির্বাচনে অনেকটা নির্ভার ক্ষমতাসীনরা। তিনটিতেই দলটির একক প্রার্থী রয়েছেন। কাউন্সিলর পদেও বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম। এ ছাড়া খুলনা ও গাজীপুরে জয়লাভের পর দলটির নেতাকর্মীরাও উজ্জীবিত। সব মিলে আপাতত তিন সিটিতে বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় আছে আওয়ামী লীগ। অন্য দিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি বেশ অস্বস্তিতে রয়েছে।

দলীয় কোন্দলের পাশাপাশি জোটের শরিক জামায়াতের সঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে টানাপোড়েন। বিশেষ করে সিলেটে বেশ বেকায়দায় দলটি। সেখানে মেয়র পদে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর পাশাপাশি জামায়াতও নির্বাচনী মাঠে রয়েছে। অন্য দুই সিটিতেও বিএনপিকে আনুষ্ঠানিক সমর্থন জানায়নি দলটি। এ ছাড়া তিন সিটির বিভিন্ন ওয়ার্ডে নিজেদের একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থীর পাশাপাশি মাঠে রয়েছেন জামায়াতের প্রার্থীরাও। এ নিয়েও দল দুটির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে দূরত্ব।

এদিকে বরিশালে জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নির্বাচনী মাঠে থাকায় ভোটের হিসাব নিয়ে চিন্তিত বিএনপি। দলটির নেতাকর্মীরা মনে করেন, তারা নির্বাচনে না থাকলে দল দুটির প্রায় সব ভোটই ধানের শীষের পক্ষে যেত। এমন পরিস্থিতিতে দলীয় ও জোটের কোন্দল মিটিয়ে নির্বাচনে কতটা সুবিধা করতে পারবে তা নিয়ে বেশ চিন্তিত দলের নেতাকর্মীরা। তবে কোন্দল নিরসন করে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছের দলটির নীতিনির্ধারকরা।

জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান  বলেন, আমরা সংকট নিরসনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি শেষ পর্যন্ত সিলেটে বিএনপির একক প্রার্থী থাকবে। দলের বিদ্রোহী ও জামায়াত ধানের শীষকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে।

এদিকে সোমবার শেষ দিনে রাজশাহী ও বরিশালে দুই মেয়রসহ তিন সিটিতে ৩৩ জন কাউন্সিলর তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। এখন এই তিন সিটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ মেয়র পদে ১৮ জন এবং কাউন্সিলর পদে ৫৩০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। আজ প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। এরপর তারা আনুষ্ঠানিক প্রচারে নামবেন। ৩০ জুলাই সিটিগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সিলেট : ব্যুরো অফিস জানায়, সিলেটে দলীয় ও জোটের চাপের মুখেও মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি বিএনপির বিদ্রোহী মেয়রপ্রার্থী ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম এবং জোটের শরিক জামায়াতের প্রার্থী অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। সোমবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি নির্বাচন মনিটরিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সিলেটে আসেন। তিনি জরুরি প্রেসব্রিফিং করলেও বিএনপি তথা জোটের বিদ্রোহীদের ব্যাপারে কঠোর কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানাননি। এসব বিষয়ে দল ও জোট দেখবে বলে জানান। ফলে ২০ দলের পক্ষে তিনজন ও আওয়ামী লীগের সমমনাদের পক্ষে একজন প্রার্থী সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদের চূড়ান্ত লড়াইয়ে অবতীর্ণ হচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতিতে একাধিক প্রার্থী নিয়ে চরম বেকায়দায় বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোট। শুধু তাই নয় ‘চেইন অব কমান্ড’ও ভেঙে পড়েছে বিএনপি ও তাদের নেতৃত্বাধীন জোটে। সিটি নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী যখন ভোটযুদ্ধে মাঠে, সেই সময়ে বিএনপি ব্যস্ত কোন্দল নিরসনে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল আরও গভীর হচ্ছে। নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে আমীর খসরুর প্রেস ব্রিফিংয়ের আগে ছাত্রদলের ক্যাডাররা ওই ভেন্যুতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করায় প্রেস ব্রিফিং হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নগরীর উপশহরে হোটেল রোজভিউয়ে সোমবার দুপুরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান সিলেট বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। এ খবর পেয়ে সম্প্রতি ঘোষিত ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে বিবদমান ছাত্রদলের একাংশের ক্যাডাররা হোটেলে যান। তারা হোটেলের সামনে ভিড় করার পাশাপাশি হোটেলের লবিতে উঠে মুক্তাদিরকে খুঁজতে থাকে। এতে তোলপাড় শুরু হয় ওই এলাকায়। এ সময় বিদ্রোহীদের ধাওয়ায় মুক্তাদির অনুসারী সাবেক ছাত্রদলনেতা সাহেদসহ ৩ জন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ছুটে গেলে ক্যাডাররা পালিয়ে যায় পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।

পরে মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর কুমারপাড়াস্থ বাসায় প্রেস ব্রিফিং হয়। ২০ দলীয় জোটের নেতৃত্বে থাকা খোদ বিএনপিরই যেখানে এমন অবস্থা, সেখানে বিপাকে আছেন শরিক দলের নেতারা। তারা বিএনপি ও জামায়াতের মেয়র প্রার্থীদের পক্ষ থেকে ডাক এলে দু’জন প্রার্থীর ডাকেই সাড়া দিচ্ছেন।

২০ দলীয় জোটের প্রার্থী নিয়ে একাট্টা হয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি এখনও নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় পরিকল্পনানুসারে সুসংগঠিত আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীকে নিয়ে মাঠে তৎপর। শক্ত সমর্থন নিয়ে সঙ্গে আছেন শরিক ১৪ দলের নেতারাও। বিএনপি তথা ২০ দলের এমন লেজেগুবরে অবস্থায় মেয়র নির্বাচন নিয়ে অনেকটা নির্ভার আওয়ামী লীগ।

এদিকে নাগরিক পরিষদের ব্যানারে মেয়র পদে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমের মোবাইল ফোন সোমবার ছিল বন্ধ। অনেক চেষ্টা করেও গণমাধ্যমকর্মী ছাড়াও দলের নেতারা তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।

সোমবার মনোনয়ন প্রত্যাহার শেষে সন্ধ্যায় তার মোবাইল ফোন খোলা পাওয়া যায়। তিনি  বলেন, আরিফকে ধানের শীষ দেয়া ভুল, তাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়াও ভুল। ৩০ জুলাই জনগণ ভুলের জবাব দেবে। এ দুই ভুলের বিপরীতে আমি অনড়। দল যদি কঠোর থেকে কঠোরতম সিদ্ধান্ত নেয়, তাতেও আমি সরে দাঁড়াব না। আমি এরই মধ্যে আমার সভাপতি বরাবরে অব্যাহতিপত্র জমা দিয়েছি। প্রয়োজনে আমি বহিষ্কারও কবুল করব। তিনি বলেন, দলের পছন্দের প্রার্থী আরিফ না। আমাকেই দলের তৃণমূলরা সাপোর্ট দিচ্ছে। এ নির্বাচনে বিএনপির কেউই আরিফের পক্ষে নেই।

অপরদিকে জামায়াতের মেয়রপ্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ছাড়াও দলের দায়িত্বশীল নেতাদের মোবাইল ফোন খোলা থাকলেও সোমবার দফায় দফায় কল করলেও তারা গণমাধ্যমকর্মীদের ফোন রিসিভ করেননি। জামায়াতের প্রার্থী জুবায়েরসহ দায়িত্বশীল নেতারা মনোনয়ন জমার পর থেকে দাবি জানিয়ে আসছেন, জয়-পরাজয় পরের ব্যাপার; কিন্তু সিলেট তাদের চাই-ই চাই। সিলেটে জামায়াত নয়, বিএনপিকেই ছাড় দিতে হবে। নতুবা নির্বাচনের মাঠ ছাড়বে না জামায়াত।

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক শফিকুর রহমান চৌধুরী  বলেন, বিএনপি সংগঠিত নয়। তারা নিজেরাই কামড়াকামড়ি করে সিলেটকে অশান্ত করার পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে।

অপরদিকে প্রেস ব্রিফিংয়ে আমীর খসরু অভিযোগ করেন, ‘ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্বাচন দখলের যে প্রক্রিয়া, তা তারা (আওয়ামী লীগ) আপাতদৃষ্টিতে শুরু করে দিয়েছে। বিএনপি যাতে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে, তা শুরু হয়ে গেছে। আমরা আশা করি, জনগণ তাদের সঠিক জবাব দেবে।’

বিএনপির মনোনয়নপ্রাপ্ত মেয়রপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী ব্যতীত জোটের অন্য দুই প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করছেন কি না, এ নিয়ে যখন নগরজুড়ে আলোচনা- ঠিক এমন মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনে ছুটে যান আরিফ। দুপুরে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও নাগরিক ফোরামের ব্যানারে প্রার্থী হওয়া সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনেন।

সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আলিমুজ্জামানের কাছে এ অভিযোগ করেন সদ্য সাবেক এ মেয়র। এ সময় নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও তল্লাশির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় পুলিশি অভিযানের নামে এ হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানান তিনি।

এ ব্যাপারে আলিমুজ্জামান জানান, আরিফুল হক চৌধুরী মৌখিকভাবে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন। পরে আরিফুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আচরণবিধি অনুযায়ী আগামী ১০ জুলাই প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনী প্রচারণার কোনো সুযোগ নেই। তবুও এ আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বারবার নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ সময় আরিফের সঙ্গে ছিলেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেন, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদসহ আরও নেতারা।

সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন মোট ৯ প্রার্থী। এর মধ্যে দু’জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়। তারা হলেন- মুক্তাদির হোসেন তাপাদার ও কাজী জসিম। বর্তমানে ৭ জন মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। তারা হলেন-আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির বিদ্রোহী বদজ্জামান সেলিম, ইসলামী আন্দোলনের ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন, মহানগর জামায়াতের এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিপিবি-বাসদ মনোনীত প্রার্থী আবু জাফর ও এহসানুল হক তাহের। এদিকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে ৬ কাউন্সিলর প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। এর ফলে এ সিটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ১৮৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী। এর মধ্যে সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ১২৭ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ৬২ জন। আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনঃনির্বাচিত হতে যাচ্ছেন ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পদক আজাদুর রহমান আজাদ।

কাউন্সিলর আজাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আবদুল গাফফার ও ছাত্রলীগ নেতা মিঠু তালুকদার। বাছাইয়ে গাফফারের মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও বৈধতা পায় মিঠু তালুকদারের মনোনয়নপত্র। তবে আওয়ামী লীগের নেতাদের হস্তক্ষেপে মিঠু গতকাল সোমবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তথ্য কর্মকর্তা প্রলয় কুমার সাহা জানান, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন প্রার্থী মিঠু। ফলে ওই ওয়ার্ডে যিনি আছেন তাকেই বিধি অনুযায়ী বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।

সিলেটে সর্বশেষ সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন। সেই নির্বাচনে ৩৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী। পরাজিত হন আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। তবে এর আগে দুই দফায় মেয়র ছিলেন কামরান।

রাজশাহী : ব্যুরো অফিস জানায়, রাজশাহীতে লিটনের কর্মী সমর্থকদের মাঠ দখলে কোণঠাসা বুলবুলের অনুসারীরা। মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের লড়াই হবে। লিটনকে বছরখানেক আগেই মেয়রপ্রার্থী হিসেবে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। এ কারণে আওয়ামী লীগ আগে থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে থাকে। আর দলীয় কোন্দলসহ রাসিক সামলাতে ব্যস্ত থাকেন বুলবুল। এমনকি শেষ মুহূর্ত পর্যন্তও মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে টানাপোড়েন চলে। অবশেষে বুলবুলকে বিএনপি হাইকমান্ড মনোনয়ন দেয়। কিন্তু নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগ এগিয়ে থাকায় সমস্যায় পড়ে বিএনপি। আর বর্তমানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী লিটনের কর্মী সমর্থকদের মাঠ দখলের কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন বুলবুলের অনুসারীরা।

বুলবুল অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সিটি কর্পোরেশন ভবনকে দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করেছেন। ইতিমধ্যে নগরীর প্রতিটি আইল্যান্ডে খুঁটি পুঁতে নৌকার ব্যানার ফেস্টুন টাঙানোর জন্য দখল করে নেয়া হয়েছে। অথচ ১০ তারিখের পূর্বে এগুলো করা সম্পূর্ণ নির্বাচন আচরণবিধির পরিপন্থী। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অনুপস্থিত। মাঠে বিএনপি নেতার্মীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে না বলে মন্তব্য করেন সদ্যবিদায়ী এ মেয়র।

অভিযোগের ব্যাপারে লিটনের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগী রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী বলেন, এ ধরনের অভিযোগ সঠিক নয়। সিটি কর্পোরেশনে কোনো সভা হবে কিনা সেটা কর্পোরেশনের কর্মকর্তা আর কর্মচারীদের নিজস্ব ব্যাপার। তারা যদি কোনো সভা করেন, তাহলে সেটা করার অধিকার তাদের আছে।

এদিকে রাজশাহীতে মেয়রপদে জামায়াত প্রার্থী না দিলেও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে তারা বিএনপিকে সমর্থন দেয়নি। কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থন দিলেই মেয়রপদে বিএনপিকে সমর্থন দেবে জামায়াত। কিন্তু প্রত্যাহারের শেষ দিনে বিএনপি তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেনি। ফলে শেষপর্যন্ত জামায়াত বিএনপির প্রার্থী বুলবুলকে আনুষ্ঠানিক সমর্থন জানাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

রাজশাহীর আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাসিক নির্বাচনে একজন মেয়র প্রার্থী ও ৮ কাউন্সিলর প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। ৭ জুলাই জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ওয়াসিউর রহমান দোলন আওয়ামী লীগ প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে সমর্থন দিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। এর ফলে মেয়র পদে লড়াইয়ে আছেন ৫ জন প্রার্থী। বাকি চারজন হলেন- বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির হাবিবুর রহমান, গণসংহতি আন্দোলনের অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম।

এছাড়া সোমবার শেষ দিনে ৮ সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। এর ফলে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৬০ জন এবং সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৫২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ও রাসিক নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে মেয়র পদে ছয়জন, সাধারণ কাউন্সিলর ১৬৯ জন এবং নারী কাউন্সিলর পদে ৫২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দেন।

২০০৮ সালের সিটি নির্বাচনে দলীয় সমর্থন নিয়ে প্রথমবারের মতো মেয়র পদে লড়াই করেন তৎকালীন মহানগর যুবদলের সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তবে সে নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে পরাজিত হন। নির্বাচিত হয়ে লিটন উন্নয়ন দিয়ে রাজশাহী শহরের চিত্র পাল্টে দেন। তবে নানা সমীকরণের কারণে ২০১৩ সালের নির্বাচনে বুলবুলের কাছেই পরাজিত হন লিটন। এ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দায়িত্ব গ্রহণের পর ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় বুলবুল মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হন একাধিকবার। দুই দফায় জেল খাটেন প্রায় ৬ মাস। পাঁচ বছরের মধ্যে সব মিলিয়ে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন ২৬ মাস। নির্বাচনে অংশ নিতে বুধবার তিনি মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

বরিশাল : ব্যুরো অফিস জানায়, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে মেয়র প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের খেলাফত মজলিসের প্রার্থী একেএম মাহাবুব আলম। এতে বিএনপিতে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নির্বাচনে প্রার্থী দেয়ায় অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে বড় এ রাজনৈতিক দলটি। এমনটাই জানিয়েছেন বিএনপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা।

তারা জানান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ যদি প্রার্থী না দিত তাহলে এ সংগঠনের সমর্থকদের বেশিরভাগ ভোটই ধানের শীষ পেত। যে কারণে বেশ চিন্তায় রয়েছেন বিএনপি নেতারা। তবে এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না বিএনপির মেয়র প্রার্থী হেভিওয়েট নেতা মজিবর রহমান সরোয়ার। তিনি বলছেন, ‘তারা নির্বাচন করছেন সেটা তাদের ব্যাপার। বিএনপির যে জনসমর্থন রয়েছে তাতে সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপিই জয়ী হবে।’

অপরদিকে বেশ স্বস্তিতে রয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। কেননা তাদের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষে জনসমর্থন রয়েছে বিপুল পরিমাণ। এছাড়া তাদের ভোট ব্যাংকে আঘাত হানার মতো কোনো প্রার্থীও নেই এবারের সিটি নির্বাচনে। অপরদিকে অন্য জায়গায় জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিলেও বরিশালে তেমনটা হয়নি। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস শেষপর্যন্ত মাঠে থাকবেন বলে জানিয়েছেন যুগান্তরকে।

বরিশালের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। কেননা তাদের এখন মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী। কেননা এই প্রার্থী নির্বাচন না করলে প্রায় সব ভোটই পেত বিএনপি প্রার্থী। এদিক থেকে ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ায় বেশ বেকায়দায় পড়েছেন বিএনপি নেতারা। তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের ভোট ব্যাংক নিয়ে কোনো ঝামেলা হওয়ার সন্দেহ নেই।

কেননা জাতীয় পার্টি যদি সমর্থন করত, তাহলেও তাদের ভোট বিএনপির কাতারে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল বরিশালের প্রেক্ষাপটে। এখানে জাতীয় পার্টি নিজ দলীয় প্রার্থী দেয়ায় তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। এখান থেকে লোকসান গুনতে হবে বিএনপিকে।

জানা গেছে, বামপন্থী দুই দল সিপিবি ও বাসদের প্রার্থী যথাক্রমে একে আজাদ ও মনীষা চক্রবর্তীকে নিয়ে তেমন ভাবনা নেই ক্ষমতাসীনদের। কেননা তাদের সমর্থক সংখ্যা খুবই কম। যেটা বড় দুই দল আওয়ামী লীগ বা বিএনপির ওপর প্রভাব পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর মুখপাত্র বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল জানান, আমাদের উঠান বৈঠক, মিছিল ও মাইকিংয়ের কর্মসূচি রয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ড থেকেই এসব কর্মসূচি পালিত হবে। এছাড়া অনলাইনভিত্তিক প্রচারণাও শুরু করার কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।

জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস যুগান্তরকে বলেন, প্রতীক পাওয়ার পরই নির্বাচনী অফিস উদ্বোধন করা হবে। এছাড়া লিফলেট বিতরণ ও পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শেষ দিনে ১ মেয়র প্রার্থী ও ১৯ কাউন্সিলর নিজেদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। মেয়র প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ২০ দলীয় জোটের শরিক খেলাফত মজলিসের প্রার্থী একেএম মাহাবুব আলম। এর ফলে এ সিটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৬ মেয়র প্রার্থী ও ১২৯ কাউন্সিলর প্রার্থী। এর মধ্যে সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ৯৪ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিল প্রার্থী ৩৫ জন। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা ৬ মেয়র প্রার্থী হলেন- আওয়ামী লীগের সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, বিএনপির মজিবর রহমান সরোয়ার, জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহাবুব, বাসদ প্রার্থী মনীষা চক্রবর্তী, সিপিবি প্রার্থী এ কে আজাদ।

বরিশালে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ৮ জন। এতে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস ও দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী বশির আহমেদ ঝুনুর মনোনয়নপত্র বাতিল করে কমিশন। পরে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পান তাপস।

বরিশালে সর্বশেষ সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৩ সালের ১৫ জুন। সেই নির্বাচনে ৮৫ হাজারের কিছু বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামাল। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের তৎকালীন মেয়র মরহুম শওকত হোসেন হিরন পান ৬৭ হাজারের কিছু বেশি ভোট।

গাজীপুর ও খুলনার নির্বাচনে শঙ্কিত সরোয়ার : বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেছেন, গাজীপুরে ও খুলনায় যে নির্বাচন হয়েছে তাতে আমি শঙ্কিত। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর আÍীয় এই সিটির আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী। সেক্ষেত্রে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কায় থাকাটাই স্বাভাবিক। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন। রোববার শহীদ আবদুর বর সেনিয়াবাত বরিশাল প্রেস ক্লাব সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

সরোয়ার আরও বলেন, ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বিএনপি। খুলনা, গাজীপুরের ভোট দেখে আমরা হতবাক হয়েছি। বরিশালে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।’ বরিশাল সিটির প্রথম মেয়র থাকাকালীন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে সরোয়ার বলেন, ‘আমি চাই বরিশালের উন্নয়নে অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে। আর সেই লক্ষ্যে আমি কাজ করে যাব।

এ জন্য তিনি বরিশালের সব সাংবাদিকের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন চাই। কারণ সেনাবাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থা রয়েছে।’

প্রেস ক্লাব সভাপতি কাজী নাসির উদ্দিন বাবুলের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা নুরুল আলম ফরিদ, ইসরাইল পন্ডিত, আনোয়ারুল হক তারিন, মুরাদ আহম্মেদ, হুমায়ুন কবির, কাজী মিরাজসহ বরিশালের বিভিন্ন মিডিয়ার কর্মীরা। এর আগে নগরীর একটি রেস্তোরাঁয় নিউজ এডিটর কাউন্সিল বরিশালের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন সরোয়ার।যুগান্তর

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।