সাতক্ষীরায় গ্রেফতার আতঙ্ক: আটক-১৩৬:মুহাদ্দীস আব্দুল খালেক কারাগারে অসুস্থ
ক্রাইমবার্তা রিপোট: সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরায় গত দু’দিনে বিএনপি জামায়াতের ১০ নেতাকর্মীসহ ১৩৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতদের নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ বাসা বাড়ি থেকে ঘুমান্ত ব্যক্তিদের তুলে নিয়ে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়েরকরা মামলায় আসামী করা হচ্ছে আটককৃতদের। জামিন নিতে দীর্ঘ সময় ও উচ্চ আদালতে যেতে হবে আসামীদের। নিন্ম আদালত বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মামলায় জামিন দিচেচ্ছ না বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব গ্রেফতার অভিযান বলে জেলার বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের অভিযোগ। তবে জেলা পুলিশের অভিযোগ নাশকতার পরিকল্পনা ও আটককৃতদেও বিরুদ্ধে থানায় মামলা থাকায় আসামীদের আটক করা হচ্ছে। এছাড়া এটা পুলিশের রুটিন ওয়ার্ক। গ্রেফতার কিম্বা আটকের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মানা হচ্ছে না বলে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ।
মাওলানা নুরউদ্দীন। ইটাগাছা মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষক। শহরের পুরাতন সাতক্ষীরায় নিজ বাড়িতে প্রতিবন্ধি ছেলেকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। বুধবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে সাতক্ষীরা সদও থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। থানাতে কর্তব্যরত পুলিশের সাথে দফায় দফায় তার পরিবারের সাথে কথা হয়। কিন্তু বুধবার সন্ধায় দায়ের করা একটি মামলায় তাকে আসামী করা হয় বলে জানিয়েছে নুরউদ্দীনের স্ত্রী জয়নব।
পুলিশ জানায়, নাশকতার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিনেয়ার সময় সদর উপজেলার আগরদাড়ি এলাকা থেকে ৫ব্যক্তিকে আটক হয়েছে ব। পুলিশের দাবি বুধবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে কতিপয় বিএনপি-জামাতের উচ্ছৃংখল নেতা কর্মী আগরদাড়ি মাদ্রাসার মাঠের দক্ষিণ পাশে ফাঁকা জায়গায় বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন প্রকার কমূসূচী বাস্তবায়ন করার জন্য এবং আসন্ন ২০১৯ সালের নির্বাচনকে বানচাল করার লক্ষ্যে একত্রিত হয়ে নাশকতামূলক কার্যকলাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে গোপন বৈঠক ও ষড়যন্ত্রের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ অভিযানে গেলে পুলিশকে উদ্দেশ্যে করে পরপর ৩টি ককটেল বোমার বিস্ফারণ ঘটায় বিএনপি-জামাতের উচ্ছৃংখল নেতাকর্মীরা। পুলিশ ঘটনাস্থল হতে বিস্ফোরিত বোমার আলামত ও ৪টি জিহাদী বই উদ্ধার করে। পুলিশ এসময় গদাঘাটার মহিউদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে কামরুজ্জামান (২৪), কাটিয়া গদাইবিল এলাকার জোহর আলীর ছেলে শফিকুল ইসলাম (৪৫), শিয়ালডাঙ্গার মৃত আকরাম গাইনের ছেলে আলফাজ গাইন (৪১), পুরাতন সাতক্ষীরার কুলিনপাড়ার মৃত ছমিরউদ্দিনের ছেলে নূর উদ্দিন (৫৫) ও রইচপুরের নূরুল আমিন সরদারের ছেলে আলমগীর হোসেন ওরফে আলমকে আটক করে। সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মারুফ আহ জানান, তার নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। এ ঘটনায় ১৯৭৪ সালের স্পেশাল পাওয়ার এ্যাক্ট এর ১৫(৩)/২৫-ঘ তৎসহ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক উপাদানাবলী আইনের ৩/৬ ধারা মামলা হয়েছে। যার নং- ৩১, তারিখ- ১১-০৭-২০১৮।
বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পযন্ত জেলার আটটি থানার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে জামায়াত শিবিরের ৭ জন কর্মীসহ ৬৪ জনকে আটক করা হয়েছে।
আটককৃতদের মধ্যে,সাতক্ষীরা সদর থানা থেকে ২০ জন,কলারোয়া থানা থেকে ৭ জন, তালা থানা ৩ জন,কালিগঞ্জ থানা ৮ জন, শ্যামনগর থানা ১১ জন, আশাশুনি থানা ৯ জন,দেবহাটা থানা ৩ জন ও পাটকেলঘাটা থানা থেকে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
অন্যদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত জেলার আটটি থানার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবিরের তিন কর্মীসহ ৭২ জনকে আটক করা হয়েছে।
আটককৃতদের মধ্যে,সাতক্ষীরা সদর থানা থেকে ২৯ জন, কলারোয়া থানা থেকে ৭ জন, তালা থানা ৩ জন,কালিগঞ্জ থানা ১৮ জন, শ্যামনগর থানা ৫ জন, আশাশুনি থানা ৫ জন,দেবহাটা থানা ২ জন ও পাটকেলঘাটা থানা থেকে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে ২০ মামলা দায়ের করা হয়েছে।–
০০০০০০০০০০০-০০০০০০০০০০০০
আরো পড়ুন
৩৭ মামলায় আটক জামায়াত নেতা মুহাদ্দীস আব্দুল খালেক কারাগারে অসুস্থ: দোয়া কামনা: রায় হলে যাবত জীবন কারাদন্ড হতে পারে
ক্রাইমবার্তা রিপোট: সাতক্ষীরা: দক্ষিণবঙ্গের স্বনামধন্য আলেম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সাতক্ষীরা জেলার সাবেক আমীর , কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুহাদ্দীস আব্দুল খালেক সাতক্ষীরা কারাগারে অসুস্থ অবস্থায় রয়েছে বলে তার আইনজীবি জানান। দ্রুত সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন তিনি।
রাজনৈতিক ভাবে তাঁর দায়ের করা অর্ধশতাধীক মামলা মানতে নারাজ এলাকাবাসি। গত ২৬ জুন একটি মামলায় হাজিরা দিলে সাতক্ষীরা আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সর্বজন শ্রদ্ধীয় এমন একজন আলেমকে কারাগারে পাঠানোতে এলাকাতে ক্ষোঁভের সৃষ্টি হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধলবাড়িয়া গ্রামে পৈত্রিক ভিটাবাড়িতে বসবাস করতে তিনি।
মুহাদ্দীস আব্দুল খালেক, দক্ষিণ বঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ আগরদাড়ী আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসার হেড মুহাদ্দীস হিসেবে কর্মরত আছেন। ডায়বেটিক্স সহ নানা রোগে আক্রান্ত তিনি। এসটিসি ১৪৮/১৬ মামলায় হাজির হয়ে সাতক্ষীরা আদলতে অসুস্থতার প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র দাখিল করলে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক তাঁকে মেডিকেল সুবিধা দেয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। বর্তমানে তিনি শাররিক ভাবে দারুণ অসুস্থ। দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠার জন্য তিনি সকলের দোয়া চেয়েছেন বলে পরিবার সূত্র জানায়।
এদিকে মুহাদ্দীন হুজুরের অসুস্থতার সংবাদ শুনে অনেকে হুজুরের বাড়ি যাচ্ছেন। হুজুরের বাড়ির এলাকায় কয়েক জন হিন্দু মহিলার সাথে কথা হয়। তারা জানান,মুহাদ্দীস হুজুর খুব ভাল মানুষ। তিনি কোন সন্ত্রাসী কাজ কাম করতে পারেন না। আমরা হুজুকে ছোট কাল থেকে চিনি। তাঁর মত সৎ মানুষ আমরা আর দেখিনি।
কয়েকজন আ’লীগ নেতা কর্মীর সাথে কথা হয়,তারা জানান মুহাদ্দীস হুজুর একজন ব্যতিক্রম মানুষ। জামায়াত না করলে তার বিরুদ্ধে কোন মামলা হত না। এছাড়া জামায়াত সম্পর্কে অনেক প্রশাœ থাকলেও হুজুর সম্পর্কে আমাদের মনে একটা ভাল ধারণা রয়েছে।
মুহাদ্দীস আব্দুল খালেক এমন একজন ব্যক্তি যার সম্পর্কে সাতক্ষীরার সর্বস্তরের মানুষের রয়েছে পরম শ্রদ্ধেয়। তাকে প্রায় অধশতাধীক মামলায় আসামী করা সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করতে পারছে না। এতে স্থানীয় আ’লীগের অনেক ভোট কমতে পারে বলেও সরকার দলীয় অনেকের ধারণা।
রোববার সকালে তাকে চারটি মামলায় জেলখানা থেকে জজ আদালতে আনা হয়। নাশকতা সৃষ্টি ও নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩৭টি মামলার বিচারাধীন। ৭টি মামলায় তিনি এফআইআর ভুক্ত আসামী। ২০টি মামলায় তাকে নির্দেশ দাতা হিসেবে চার্জশিটে নাম অন্তরভৃক্ত করা হয়েছে। ৭টি মামলা ভেঙ্গে ১৪টি পার্ট করা হয়েছে। সবমিলিয়ে ৩৭টি মামলার বর্তমানে তিনি আসামী। এসব মামলায় তাঁর যাবত জীবন সাজা হতে পারে বলে আদালত সূত্র জানায়।
সাতক্ষীরা জজ কোটের অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু জানান, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী ও পরবর্তী সময়ে সাতক্ষীরাসহ দেশজুড়ে নাশকতা, বোমা বিস্ফোরণ, গাড়িতে আগুন, রাস্তার পাশে সরকারি গাছ কাটা, রাস্তা কাটা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষকে হত্যা করে জামায়াত ইসলামী ও তাদের জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা। এসব ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়ে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখেন জামাতের কেন্দ্রীয় কমিটির সুরা সদস্য সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধলবাড়িয়া গ্রামের মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক। এ সব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে কমপক্ষে তিন ডজন মামলা হয়। যা তদন্ত শেষে ভাগ হয়ে সেশন ও এসটিসি হিসেবে প্রায় ৪০টিতে দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে এসটিসি ১৯টি মামলায় পলাতক থেকে তাকে গত ২৬ জুন জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবী। বিচারিক হাকিমের আদালত থেকে বিচারের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বদলী হওয়া এসটিসি ২৩১/১৫, এসটিসি ৩০১/১৫, এসটিসি ৩৩১/১৫, এসটিসি ১৪৮/১৬, এসটিসি ১৪৯/১৬, এসটিসি ২১৬/১৬, এসটিসি ৩৩৪/১৬, এসটিসি ৩৪১/১৬, এসটিসি ৩৪২/১৬, এসটিসি ২৯/১৭, এসটিসি ১৩৩/১৭, এসটিসি ১৩৬/১৭, এসটিসি ২১২/১৭, এসটিসি ২৯৬/১৭, এসটিসি ২৯৭/১৭, এসটিসি ৪৫/১৮, এসটিসি ৪৬/১৮, এসটিসি ১৭১/১৮ ও এসটিসি ৩৩১/১৮ মামলাগুলো বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সবসব ধরণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, রোববার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এসটিসি ১৪৮/১৬ ও এসটিসি ১৪৯/১৬ মামলায় জামিন শুনানীর দিন ছিল। তার পক্ষের আইনজীবী আদালতে শুনানীর জন্য সময়ের আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন। একইভাবে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ আদালতে এসটিসি ৪৯৮/১৫ মামলার জামিন আবেদন শুনানীর জন্য ভারপ্রাপ্ত বিচারক অরুনাভ চক্রবর্তী আগামী ২৪ জুলাই দিন ধার্য করেন। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতে এসটিসি-২০৪/১৭ মামলার জামিন শুনানীর জন্য আবেদন করলে বিচারক অরুনাভ চক্রবর্তী আগামী ২৪ জুলাই দিন ধার্য করেন।
তাঁর আইনজীবি এড. হাফিজুর রহমান জানান,বর্তমানে তার বিরুদ্ধে ৭টি এসটিসি সহ ৩৭টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এদিকে আদালত চত্তরে রাখা প্রিজন ভ্যান থেকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় গারদে কর্মরত সহকারি উপ-পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম তার হাতে হাতকড়া পরাননি বলে কয়েটা গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশি হয়। একই তার বিরুদ্ধে এজলাসের মধ্যে আসামীর কাঠগড়ায় না রেখে আইনজীবীদের বসার নির্ধারিত বেঞ্চে বসিয়ে রাখার ও অভিযোগ উঠে। এঘটনায় উপ-পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম জানান,তাকে হাত কড়া সহ হাত ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অসুস্থার কারণে তাকে এজলাসে বেঞ্চে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। তিনি বলেন তার বিরুদ্ধে আর্থিক সুবিধা নেয়ার কোন প্রশ্নই উঠে না।
আগামী নির্বাচনে সাতক্ষীরা সদর আসন থেকে জামায়াত নেতা মুহাদ্দীস আব্দুল খালেক নির্বাচনে অংশ নিতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়। যে কারণে তার তাঁর বিরুদ্ধে এসব রাজনৈতিক মামলা দায়ের বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়।