ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ ২০১৬ সালে তুরস্কে অনুষ্ঠিত ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের নিজের সত্যিকারের ভাই ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান।
দুই বছর আগে ১৫ জুলাই প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগানকে উৎখাতের জন্য সেনাবাহিনীর একটি গ্রুপ অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালায়।
ওই ঘটনার দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে নিহতদের পরিবার ও আহতদের সঙ্গে রোববার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে মিলিত হন এরদোগান।
এসময় এরদোগান বলেন, সেদিনের সেই অবৈধ অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ করে দিতে যারা জীবন দিয়েছেন তারা, তাদের পরিবার এবং যারা আহত হয়েছেন তারা আমার প্রকৃত ভাই।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে উৎখাতের জন্য ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই তুরস্কে অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানরত ফেতুল্লাহ গুলেনের সংগঠন ফেতো এর সঙ্গে জড়িতরা এ অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে।
কিন্তু সাধারণ মানুষ অভ্যুত্থানচেষ্টার প্রতিবাদে রাজপথে নেমে বিদ্রোহীদের দমন করে। তখন ২৫১ জন নিহত হয় এবং ২ হাজার ২০০জন আহত হয়।
এরদোগানকে রক্ষার সুপার হিরো যারা
১৫ জুলাই ২০১৬। দিনটি ছিল অন্যান্য দিনের মতোই। সবকিছু চলছিল আগের নিয়ম মতো। ছুটির দিন হওয়ায় গোট জাতি ছিল ছুটির আমেজে।
কিন্তু এরই মধ্যে যে ভয়ঙ্কর কিছু শুরু হয়েছে তা বিশ্বাসই করতে চায়নি কেউ। প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে উৎখাতে হঠাৎ শুরু হয় সেনা অভ্যুত্থান। আর সেটি ঘটেছিল সাধারণ মানুষের সামনেই।
প্রথমে বসফরাস ব্রিজ বন্ধ করে দিয়ে সেটির নিয়ন্ত্রণ নেয় বিদ্রোহী সেনারা। এ দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। গণমাধ্যমে ব্রেকিং নিউজ প্রচারিত হতে থাকে।
এমন দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে যায় তুরস্কের সাধারণ মানুষ। তারা কী করবে কিছুই বুঝতে পারছিলেন না।কিন্তু তুরস্কের মানুষ গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধশীল।
এরই মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের আহ্বান। সাধারণ মানুষকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এ আহ্বানের অল্প সময়ের মধ্যে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে লাখ লাখ মানুষ। ট্যাংকের নিচে জীবন দিতে প্রস্তত হয় তুর্কিরা। বিদ্রোহী সেনা সদস্যরা গুলি চালায়। নিহত হয় ১৫১জন। আহত হয় ২ হাজার ২০০।
কিন্তু সাধারণ মানুষের ঢলে বিদ্রোহীদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। জীবন বাঁচাতে তারা পালাতে থাকে। এক পর্যায়ে বিদ্রোহী সেনাসদস্যরা নিজেদের পোষাক খুলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়ে জীবন বাঁচাতে চেষ্টা করে।
সেদিন তুরস্কের রাস্তায় যে দৃশ্য সৃষ্টি হয়েছিল তার ওপর সেনাবাহিনীর বিদ্রোহীরা সব রকম নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। লাখ লাখ মানুষ ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে পৌঁছে যায়। সেখানেই অপেক্ষায় ছিলেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান।
নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগানকে রক্ষায়, তুরস্কের গণতন্ত্র রক্ষায় দেশটির সাধারণ মানুষ অকাতরে জীবন দিতে শুরু করে। সেদিনের সেই ঘটনায় মৃত্যু বা বন্দি হওয়া থেকে এরদোগানকে রক্ষা করা এবং তুরস্কের গণতন্ত্র রক্ষার নিজেদের হিরোর আসনে বসিয়ে দেন সাধারণ মানুষ।
এদিকে প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে হত্যার জন্য তিনটি হেলিকপ্টার ছুটে যায়। তবে তারা এরদোগানের অবস্থান শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়।
হেলিকপ্টার তিনটি যখন অভিযানের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে তখন এরদোগান দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিম তুরস্কের মারমারায় অবকাশ যাপন করছিলেন। সেখানেই তাকে হত্যা কিংবা বন্দি করার জন্য হেলিকপ্টারগুলো পাঠানো হয়েছিল।
খবরে বলা হয়েছে, অভ্যুত্থান চেষ্টার প্রক্রিয়া শুরু হবার এক ঘন্টা আগে দেশটির ফার্স্ট আর্মির কমান্ডার উমিত দান্দার এরদোগানকে অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার বিষয়টি জানাতে পেরেছিলেন।
ওই খবর পেয়ে এরদোগান নিজের নিরাপত্তার জন্য হোটেল ত্যাগ করেছিলেন। হোটেল থেকে বেরিয়ে তিনি ইস্তাম্বুলের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছে যান ইস্তাম্বুল।
ফলে বিদ্রোহী সৈন্যরা ওই হোটেলে পৌঁছে এরদোগানকে পাননি। এরদোগান হোটেল ত্যাগ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই ৪০ জন বিদ্রোহী সৈন্য দ্রুত ওই হোটেলে প্রবেশ করে। কিন্তু এরই মধ্যে এরদোগান ইস্তাম্বুলের পথে রওয়ানা হয়ে যান। আর হোটেলেই থেকে যান প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষীরা।
অভ্যুত্থানের খবরে ওজু করে নামাজ পড়েন এরদোগা
২০১৬ সালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগানকে উৎখাত চেষ্টার দুই বছর পালিত হচ্ছে রোববার (১৫ জুলাই)। এ উপলক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তুর্কি দূতাবাসে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
ব্যর্থ অভ্যুত্থান উলক্ষ্যে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গণমাধ্যম বিশেষ বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী গণমাধ্যম আল-জাজিরাও বেশ কয়েকটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে।
এছাড়া ডেইলি সাবাহ, ইয়ানি শাফাক ও তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম আনাদলু এজেন্সি বেশ কিছু বিশেষ প্রতিদেবন প্রকাশ করেছে।
ডেইলি সাবাহার একটি খবরে বলা হয়েছে, অভ্যুত্থান শুরু আগেই খবর পান এরদোগান। কিন্তু তার মধ্যে কোনো অস্থিরতা দেখা যায়নি। অত্যন্ত শান্তভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছিলেন।
এরদোগান যখন অভ্যুত্থান শুরুর খবর পান তখন তিনি দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিম তুরস্কের মারমারায় অবকাশ যাপন করছিলেন। সেখানেই তাকে হত্যা কিংবা বন্দি করার জন্য তিনট হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছিল।
অভ্যুত্থানের খবর পেয়ে এরদোগান প্রথমেই ওজু করে নামাজ পড়ে নেন। এরপর তিনি দ্রুত ইস্তাম্বুলের পথে যাত্রা শুরু করেন। তখন এরদোগানের সঙ্গে তার স্ত্রী, মেয়ে, মেয়ের জামাই, নাতি-নাতনিরা ছিলেন।
এরদোগানের মেয়ের জামাই বেরাত আলবেরাক শীর্ষস্থানীয় নিউজ নেটওয়ার্ক তুর্কোভাজ মিডিয়াকে অভ্যুত্থানচেষ্টার সময়কার অবস্থা জানান।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট এরদোগান পুরো রাত ছিলেন শান্ত ও সংযত। তিনি দ্রুত বিমানযোগে ইস্তাম্বুল ফিরতে চাইছিলেন। তিনি দৃঢ়তার সাথে নেতৃত্ব দেন।
তিনি বলেন, আমাদের ওপর দিয়ে তিনটি হেলিকপ্টার পর্যবেক্ষণমূলক টহলে ছিল। আমরা একইসঙ্গে জাতীয় মিডিয়াগুলোতে ফোন করতে থাকে, কী ঘটেছে তা জানতে। আমরা ফোনের মাধ্যমেই কেবল সরাসরি সম্প্রচার করতে সক্ষম হয়েছিলাম।
এদিকে প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে হত্যার জন্য তিনটি হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছিল। তবে তারা এরদোগানের অবস্থান শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়। খবর আল-জাজিরার।
হেলিকপ্টার তিনটি যখন অভিযানের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে তখন এরদোগান দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিম তুরস্কের মারমারায় অবকাশ যাপন করছিলেন। সেখানেই তাকে হত্যা কিংবা বন্দি করার জন্য হেলিকপ্টারগুলো পাঠানো হয়েছিল।
খবরে বলা হয়েছে, অভ্যুত্থান চেষ্টার প্রক্রিয়া শুরু হবার এক ঘন্টা আঘে দেশটির ফার্স্ট আর্মির কমান্ডার উমিত দান্দার এরদোগানকে অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার বিষয়টি জানাতে পেরেছিলেন।
ওই খবর পেয়ে এরদোগান নিজের নিরাপত্তার জন্য হোটেল ত্যাগ করেছিলেন। ফলে বিদ্রোহী সৈন্যরা ওই হোটেলে পৌঁছে এরদোগানকে পাননি।
খবরে বলা হয়েছে, এরদোগান হোটেল ত্যাগ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই ৪০ জন বিদ্রোহী সৈন্য দ্রুত ওই হোটেলে প্রবেশ করে। কিন্তু এরই মধ্যে এরদোগান ইস্তাম্বুলের পথে রওয়ানা হয়ে যান। আর হোটেলেই থেকে যান প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষীরা।
ফলে হোটেলে বিদ্রোহীদের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষীদলের সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে বিদ্রোহীরা সৈন্যরা পরাজিত হয়। দেহরক্ষীদের আক্রমনে বিদ্রোহীদের একটি হেলিকপ্টারও বিধ্বস্ত হয়। বিদ্রোহীরা পার্বত্য এলাকায় পালিয়ে জীবন বাঁচায়।
এদিকে অভ্যুত্থানচেষ্টার দুই বছর পূর্তিতে টার্কিশ জেনারেল স্টাফের প্রেস অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স ডিপার্টমেন্ট একটি বিবৃতি দিয়েছে।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে উৎখাতের ওই ব্যর্থ চেষ্টায় ৮ হাজার ৬৫১ জন সৈনিক জড়িত ছিল। এর ১ হাজার ৬৭৬ জন সৈনিক অফিসারদের আদেশে অভ্যুত্থানে জড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে ১ হাজার ২১৪ জন ক্যাডেট।
মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী ইংরেজি সংবাদ মাধ্যম ডেইলি সাবাহার খবরে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
তুরস্কের সামরিক বাহিনীর উদ্ধৃতি দিয়ে খবরে বলা হয়েছে, অভ্যুত্থানচেষ্টায় জড়িতরা ফেতুল্লাহ গুলেনের সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সদস্য।
অভ্যুত্থানচেষ্টায় ৮টি হেলিকপ্টারসহ ও ৩৭টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছিল। যা দেশটির সামরিক বাহিনীর হাতে থাকা মোট হেলিকপ্টারের মাত্র ২ দশমিক ৭ ভাগ।
এছাড়া ৭৪টি ট্যাংক ও ১৭২টি সাজোয়া যান ব্যবহৃত হয়েছিল। বিদ্রোহীরা তিনটি জাহাজও ব্যবহার করেছিল। অভ্যুত্থানে ২৪৬ বেসামরিক এবং নিরাপত্তা সদস্য নিহত হন।