সিলেট সিটি নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের ঐক্য আরও সুদৃঢ় হবে”

সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে
কিছু কী লিখব, না লিখবনা, কী লিখব? কী লিখা উচিত………!
এরকম মনোজাগতিক দ্বন্দ্বে ভুগছি বেশ কিছুদিন।
কয়েকদিন আগে বিভিন্ন মতাদর্শের সাংবাদিকদের এক জমজমাট আড্ডায় সিলেট নির্বাচন নিয়ে তুমুল তর্ক-বিতর্কের মধ্যে পড়েছিলাম।
নানা প্রেডিকশন- কে কত ভোট পাবে, কার পজিশন কী হবে, জোট ভাঙ্গবে, সম্পর্কে চিড় ধরবে, কে কাকে অবহেলা করছে, কে কার সাথে আঁতাত করছে, নিজেদের ঠেলাঠেলিতে কার জিততে সুবিধা হবে ইত্যাদি নানা প্রসঙ্গ। এ আলোচনাকে আমার খুব নিরর্থক মনেহচ্ছিল। অনেকটা নেইমার বড় না মেসি! আর্জেন্টিনা জিতবে না ব্রাজিল জিতবে-র মত…!!!আমি চুপচাপ পত্রিকা পড়ছিলাম।
হঠাৎ সবাই জোর করে ধরল সিলেট নির্বাচন সম্পর্কে আমার মতামত তুলে ধরার জন্য। অনাগ্রহ সত্বেও আমি বললাম, আমি এক বাক্যে আমার মত জানাতে পারি তবে এর কোন ব্যাখ্যা চাওয়া যাবেনা।
সবাই রাজী হল।
আমি বললাম “আমি মনেকরি সিলেট সিটি নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের ঐক্য আরও সুদৃঢ় হবে”।
এই কমেন্টে সবাই একটু অবাক হলো!
সকলের চুপ মেরে থমকে যাওয়ায় বুঝতে পারলাম এটা কারও মন:পূত হয়নি। তারা তাদের কমিটমেন্ট ভঙ্গ করে সাথে সাথে এর ব্যাখ্যা দাবী করলো এবং আমার মতের স্বপক্ষে কারণ জানবার জন্য চাপাচাপি শুরু করলো।
আমি বললাম-সিলেট নির্বাচন কী সুষ্ঠু হবে?
কিছুক্ষণ ভেবে আড্ডাবাজ-গণ না সূচক মাথা নাড়লো। অর্থাৎ তাদের অভিমত হল নির্বাচন সুষ্ঠু হবার সম্ভাবনা খুবই কম।
– নির্বাচনই যদি সুষ্ঠু না হয় তাহলে কার ভোট কত? কে কত পার্সেন্টেজ পাবে তা নিয়ে এত বিতর্ক করে লাভ কী?
কেউ একজন মত দিলেন সিলেটে রাজনৈতিক সম্প্রীতি ভাল, তাই এখানে অপেক্ষাকৃত কম কারচুপি হবার সম্ভাবনা আছে।
– যদি অপেক্ষাকৃত ভাল নির্বাচন হয় তাহলে আমার প্রেডিকশন হল ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে যেরকম পূণ:হৃদ্যতা তৈরী হয়েছিল সিলেটের নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতেও তাই হবে।
– যদি উল্টোটা হয় অর্থাৎ সম্পর্কের আরো অবনতি হয়?
– আমি মনেকরিনা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কারণে সেটা হবে। উভয় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা কখনোই সেরকম করবেন না বলে আমার বিশ্বাস। যদি করেন তাহলে সেটা তাদের উভয় দলের জন্য হবে খুবই ভয়ানক আত্মঘাতীমূলক সিদ্ধান্ত এবং অতীত ভুলের পূণরাবৃত্তি।
– কিন্তু মাঠের অবস্থা তো খুব খারাপ! উভয় দলের কাঁদা ছোড়া ছুড়ি তো ব্যক্তিগত রেষারেষি পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।
– নির্বাচনী উত্তেজনায় একটু আধটু এরকম হয়। এটা মাঠ পর্যায়ের অবুঝ, অতি উৎসাহী, আবেগ প্রবণ কর্মীরা করছে। এখন পর্যন্ত প্রার্থীরা বা নেতারা সেরকম কিছু করছেন না। যারা টুকটাক করছেন তারা পরে শরমিন্দা হবেন।

আমরা যদি উভয় দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাষ্য দেখি তাহলে দেখব- জামায়াত বলছে জোটের বড় দল হিসেবে বিএনপি তাদের কে ইগনোর করছে বলে তাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। তাই তারা সিলেট নির্বাচনে লড়ছে। তাদের জোট অক্ষুন্ন আছে এবং রাজশাহী ও বরিশাল সিটিতে তারা জোটগত ভাবেই নির্বাচন করবে।
বিএনপি অফিসিয়ালি বলছে তারা এখনো আশাবাদী যে জামায়াত তাদের পক্ষে তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করবে এবং সিলেটে তারা জোটবদ্ধ ভাবেই ইলেকশন করবে।
বাস্তবে সর্বশেষ যেটা দেখা যাচ্ছে সেটা হলো- বিএনপি ও জামায়াত সিলেটে আলাদা ভাবেই নির্বাচন করছে এবং করবে।
এই নির্বাচন কে আমি যেভাবে দেখি তা হলো- জাতীয় ঐক্য অক্ষুন্ন রেখে পরীক্ষামূলকভাবে স্থানীয় এই নির্বাচনের মাধ্যমে জামায়াত তার মিত্রদেরকে ক্ষাণিকটা গার্ডস শো করতে চায়। জামায়াতের নেতা-কর্মীদের কাছে দীর্ঘদিন থেকে অভিমান ঘনীভূত হয়েছে যে তারা বিএনপি’র কাছ থেকে যথার্থ মূল্যায়ন পাচ্ছেনা। আবার বিএনপি’র মনোভাব এমন যে জামায়াত তার প্রাপ্যের চাইতে বেশী দাবী করছে!
তাই সিলেটে নিজেদের আলাদা প্রার্থী দেয়া এবং শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে লড়াই করা জামায়াতের জন্য একটি ব্যতিক্রমী ও কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এই নির্বাচনের ফলাফল দিয়ে ২০ দলীয় জোটভুক্ত জনগণ বুঝতে পারবে জামায়াত সিলেটে যে ২০ দলের পক্ষ থেকে নিজেদের প্রার্থীতা চেয়েছিল তা কী যৌক্তিক ছিল না অযৌক্তিক?
একইভাবে বিএনপির বিরুদ্ধে তার শরিকদের ইগনোরেন্সের যে অভিযোগ তা কী যথার্থ না অতিরঞ্জন সেটাও বোঝা যাবে।
অর্থাৎ এই নির্বাচনের ফলাফল জোটে জামায়াতের গুরুত্ব বাড়াতেও পারে আবার কমাতেও পারে। এই ফলাফলের মাধ্যমে জামায়াতের দাবী ও গুরুত্ব যদি যথার্থ বলে প্রতীয়মাণ হয় তাহলে বিএনপি’র উচিত হবে পরবর্তীতে জামায়াত কে তার প্রাপ্য সম্মানানুযায়ী গুরুত্ব দেয়া। আর এর ফলাফলে জামায়াতের দাবীর যৌক্তিকতা যদি প্রতিষ্ঠিত না হয় তাহলে জামায়াতের উচিত হল বাস্তবতা মেনে নেয়া।
অর্থাৎ জোটের বড় এই দুই দলেরই উচিত হবে অহংকার, জেদ এগুলো পরিত্যাগ করে সামনে পথচলা।

নির্বাচন কে ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় উভয় দলের যে সকল কর্মীরা উত্তাপ ছড়াচ্ছেন এবং পরস্পর চরিত্র হনন করছেন তাদের প্রতি আমার সামান্য নসিহত আছে।
বিএনপি’র ভাই-বোনেরা যখন জামায়াত কে গালি দেন আবার জামায়াতের বোন-ভাইয়েরা যখন বিএনপি কে গালি দেন সেটা কী উপরের দিকে থু থু নিক্ষেপ করার মত নয়?
একই জোটে থেকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী মুক্তিসংগ্রামে আমরা এক কাতারে লড়াই করছি। একই কর্মসুচি পালন করছি।
এইতো সেদিন জামায়াত নেতা অধ্যাপক মজিবুর রহমান বিএনপি চেয়ারপার্সনের মুক্তির দাবীতে প্রতীকী অনশনে সংহতি প্রকাশ করে আসলেন। জামায়াত আমীরের মুক্তির জন্য বিএনপি’র সিনিয়র আইনজীবীরা আদালতে আইনী লড়াই করলেন। তাহলে কী দাঁড়ালো?
আমরা মূলত: দলের নীতির বিরুদ্ধে কাজ করছি।
আপনি যখন কাউকে বেঈমান বলে গালি দিচ্ছেন তাহলে আপনি কিন্তু বেঈমানেরই সাঁথী বা সঙ্গী হয়ে যাচ্ছেন।
আমি যখন কাউকে মোনাফেক বলছি প্রকারন্তরে আমি সেই মোনাফেকের নেতৃত্বে জোটভুক্ত কর্মী।
গালি, গালমন্দ ও কুৎসা টা নিজের গায়েই ফেরত আসছে।
তাই আমি বলি এই ভাতৃঘাতী নিকৃষ্ট বিষ্ঠা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করুন। নিজেরা নিজ নিজ প্রার্থীদের পক্ষে সর্বোচ্চ ভোট কাস্ট করার চেষ্টা করুন। তাহলে আখেরে যার যার সম্মান রক্ষা হবে। অন্যথায় মানুষ ছি ছি করবে। রাজনৈতিকভাবে আমাদের বেকুব ও দেউলিয়া ভাববে।
উভয় দলের সামনে মর্যাদার প্রিটেস্ট। এর উপরে নির্ভর করবে ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি ও তার ফলাফল।

(পূণশ্চ: সিলেট নাগরিক ফোরাম সমর্থিত প্রার্থী এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের আমার সবচাইতে প্রিয় একজন মানুষ। আমি তাঁকে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের মডেল মনেকরি। সংগ্রামী পথচলার অনেক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তাঁকে আমি ফলো করেছি। আমি চাই তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হোন। কিন্তু তাঁর পক্ষ হয়ে কেউ অন্যকে অসম্মান করুক, জোবায়ের ভাই যা বলেন না, করেন না, পছন্দ করেন না তা তাঁর সমর্থকরা করুক তা আমি চাইনা)

Check Also

সাতক্ষীরা জেলা আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

শাহ জাহান আলী মিটন, সাতক্ষীরা:সাতক্ষীরা জেলা আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (১০ নভেম্বর) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।